বর্ষায় নতুন প্রাণ পায় প্রকৃতি। ফুলে ফুলে ভরে ওঠে চারপাশ। কবিগুরুর ভাষায়- তোমার মন্ত্রবলে পাষাণ গলে, ফসল ফলে-/মরু বহে আনে তোমার পায়ে ফুলের ডালা...। এখন সেই ফুলের ডালা সাজানো। নানা রকম ফুল ফুটে আছে। তবে একটিমাত্র ফুলের বৃষ্টির নামে নাম! সেটি রেইন লিলি। অন্য সময় দেখা মেলে না। এখন ভরাবর্ষায় দারুণ মিষ্টি রং আর রূপ নিয়ে প্রকাশিত।
লিলির কথা আগে বলে নেয়া ভাল। এর আছে ১১০ প্রজাতি। একটির নাম রেইন লিলি। এটি আমারিলিডাসি পরিবারের সদস্য। আদিনিবাস দক্ষিণ আমেরিকা। বাংলাদেশেও আছে বহু বছর। অবশ্য এখানে ঘাসফুল নামে বেশি পরিচিত। ঘ্রাণ নেই কোন। ছোট্ট সুন্দর ফুল এর সৌন্দর্যের কারণে আলাদাভাবে চোখে পরে। রেইন লিলির পাপড়িগুলো এমনভাবে মেলে ধরা যে, মনে হয় আকাশের পানে তাকিয়ে আছে। না, আকাশ চাই না তার। যেন বৃষ্টির জলে ধুয়ে আরও সতেজ আরও সুন্দর হওয়ার স্বপ্ন।
রেইন লিলি গাছ ভূমি সংলগ্ন। উচ্চতা মাত্র ১৫ থেকে ২০ সেমি। অন্য অনেক সবুজের সঙ্গে মিলে মিশে থাকে। পথিক ভুল করে কখনও সখনও পায়ে মাড়িয়ে চলে যান। কিন্তু এখন বর্ষার কাল। নবধারা জল পেয়ে ফুটেছে অজস্র ফুল। এই ফুলের সৌন্দর্য অস্বীকার করবে সাধ্য কার? রেইন লিলি রেইন ফ্লাওয়ার, ফেয়ারি লিলি, জেফির লিলি, ম্যাজিক লিলি, আটামাসকো লিলি নামেও পরিচিত। ফুল হয় তিন রঙের। সাদা হলুদ ও গোলাপী। সাদা ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম জেফাইরান্থেসিস জেফির্যানথিস ক্যানাডিডা। হলুদ ফুলটি জেফাইরান্থেসিস সিট্রিনা। আমাদের দেশে বেশি দেখা যায় গোলাপী রঙের ফুলটি। ঢাকার বিভিন্ন বাসার ছাদে, বারান্দায় রাখা টবের কোন না কোনটিতে পিঙ্ক রেইন লিলি উঁকি দিয়ে আছে। গোলাপী দেখতে হওয়ায় একই ফুলের নাম রোজি রেইন লিলি, রোজ ফেয়ারি লিলি ও রোজ জেফির লিলি। আর বোটানিক্যাল নাম জেফাইরান্থেসিস রোজ।
উদ্ভিদবিদ দ্বিজেন শর্মা জানান, বর্ষার ফুল হলেও এই ফুল গ্রীষ্ম থেকে ফোটা শুরু হয়। শরৎ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। মজার তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, ফুলটি সন্ধ্যায় বুজে যায়। দিনের আলোয় পূর্বের অবস্থায় ফেরে। আকর্ষণীয় হলেও, ঘাসফুলের জন্য তেমন যত্নের প্রয়োজন হয় না। অবহেলায় বেঁচে থাকে। এর পরও রেইন লিলি বহুবর্ষজীবী!
Leave a Comment