অ্যাসাইনমেন্ট : খাদ্য চাহিদা পূরণে এবং শিল্পের বিকাশে মৎস্য শিল্পের গুরুত্ব বিশ্লেষণ।
শিখনফল/বিষয়বস্তু : পৃথিবীর বাণ্যিজ্যিক ভূগোল (মৎস্য সম্পদ)
নির্দেশনা (সংকেত/ ধাপ/ পরিধি):
- খাদ্য হিসাবে মৎস্যের ধারণা ব্যাখ্যা করতে হবে
- মৎস্য ক্ষেত্রসমূহ কত প্রকার ও কী কী বর্ণনা করতে হবে
- মৎস্য শিল্পের ধারণা ব্যাখ্যা করতে হবে
- ব্যবসা বাণিজ্যে মৎস্য শিল্পের গুরুত্ব বর্ণনা করতে হবে।
- খাদ্য হিসাবে মৎস্যের ধারণা
বাঙালির মাছ ছাড়া যেন পেটই ভরে না। মাছে রয়েছে নানা পুষ্টিগুণ। যা শরীর সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।
স্মৃতিশক্তি ও মস্তিষ্কের পুষ্টি বৃদ্ধিতে মাছের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে, বলছে একাধিক গবেষণা। বিশেষ করে, তৈলাক্ত মাছে থাকা ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।
প্রোটিন বা আমিষ জাতীয় খাদ্য আমাদের জন্য অপরিহার্য পুষ্টি উপাদান। একজন মানুষের সারাদিনের ক্যালরি চাহিদার ২০-৩০% প্রোটিন জাতীয় খাদ্য থেকে আসা উচিত। অনেকেই ভাবেন, প্রোটিন বা আমিষ জাতীয় খাদ্যের ভাল উৎস মানেই কেবল মাংস। অথচ মাছ থেকে যে মাংসের সমান পুষ্টি পাওয়া যেতে পারে,অনেকে হয়ত এই ধারনাটি মানতে চান না।মাংস এবং মাছ দুটোই হল প্রথম শ্রেণীর আমিষ জাতীয় খাদ্যের উৎস। বরং মাংস খাওয়ার চেয়ে মাছ খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভাল।
বাংলাদেশ নদী মাতৃক দেশ। তাই,আমাদের দেশে নানারকম মাছ পাওয়া যায়। পুঁটি, ট্যাংরা, শোল, টাকি, রুই, কাতলা, কই, ইলিশ, বাইন প্রভৃতি মাছ পাওয়া যায়।পাশাপাশি,সামুদ্রিক মাছ এবং চাষের মাছও আছে। আমদের দেশে প্রোটিনের চাহিদা পূরনে মাছের অবদান অনেক খানি।তবে,অনেকেই কাটার ভঁয়ে মাছ খেতে চান না।অথবা মাছের গন্ধে মাছ খেতে চান না।কিন্তু স্বাস্থ্য এবং পুষ্টির কথা চিন্তা করলে মাছ বাদ দেয়ার কোন সুযোগ নেই।শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার জন্য মাছ সমান পুষ্টিকর। মাছে রয়েছে উচ্চ পরিমাণে ভিটামিন-ডি,ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড,ভিটামিন-এ,সেলেনিয়াম,অপরিহার্য অ্যামাইনো এসিড সহ অন্যান্য পুষ্টি উপাদান।
আমেরিকান হার্ট এ্যাসোসিয়েশনের মতে সপ্তাহে অন্তত ২ সারভিং মাছ খাওয়া উচিত। আর,এর মধ্যে অন্তত ১ সারভিং ফ্যাটি ফিস রাখতে হবে।
- মৎস্য ক্ষেত্রসমূহ কত প্রকার ও কী কী
১। এশিয়ার পূর্ব উপকূলীয় অঞ্চল এটি পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা বৃহৎ মৎস্য ক্ষেত্র। এ মৎস্য ক্ষেত্রটি প্রশান্ত মহাসাগরের উত্তর-পশ্চিম প্রান্ত এবং জাপানের চারিপাশে অবস্থিত বলে একে উত্তর-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় বা জাপান উপকূলীয় অঞ্চল বলা হয়। ১৯৯৯ সালের এক হিসাব মতে এ মৎস্য ক্ষেত্র থেকে ২৪৮,৮৩ লক্ষ মেঃ টন মৎস্য আহরন করা হয়। আয়তন ও অবস্থান ঃ অগভীর ও গভীর সমুদ্র মিলিয়ে এ মৎস্য ক্ষেত্রটির আয়তন ৪৮৮ লক্ষ বর্গ কি:মি:। উত্তরে বেইজিং সাগর থেকে দক্ষিনে চীন সাগর পর্যন্ত বিস্তৃত এ মৎস্য ক্ষেত্রটি জাপান দ্বীপপুঞ্জকে বেষ্টন করে রয়েছে। এশিয়ার পূর্ব উপকূল বরাবর বিস্তৃত এ মৎস্য ক্ষেত্রটির প্রান্তভাগে রাশিয়া, উত্তর ও দক্ষিন কোরিয়া, চীন, তাইওয়ান ও ভিয়েতনাম অবস্থিত। এ মৎস্য ক্ষেত্রটি ২০০ উত্তর থেকে ৭০০ উত্তর অক্ষাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত। মৎস্য ক্ষেত্র গড়ে উঠার কারণসমূহ ঃ নিুে এ প্রসিদ্ধ মৎস্য ক্ষেত্রটি গড়ে উঠার প্রাকৃতিক ও অর্থনৈতিক কারণগুলো বিবৃত করা হলোঃ
ক) নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু।
খ) অগভীর সমুদ্র ও ক্রমশ ঢালু মহিসোপান।
গ) বিস্তৃত ভগ্নতট রেখা ও বিশাল মগ্নচড়া।
ঘ) অসংখ্যা বন্দর ও পোতাশ্রয়ের অবস্থান।
ঙ) দক্ষিন হতে আগত উষ্ণ কুরোসিও স্রোত এবং উত্তর দিক হতে আগত শীতল কমচাকটা স্রোতের মিলন হবার ফলে অসংখ্য মৎস্যের সমাগম হয়।
চ) কৃষি ও চাষাবাদের অভাবে এ অঞ্চলের বহু মানুষ মৎস্য শিকার করে জীবিকা অর্জনে বাধ্য হয়।
ছ) অধিবাসীগন সাহসী, পরিশ্রমী ও কষ্ট সহিষ্ণু বলে সুদক্ষ নাবিক ও ধিবরণ হয়।
জ) উন্নত যাতায়াত ও পরিবহন ব্যবস্থা।
ঝ) মৎস্য ধরার আধুনিক যন্ত্রপাতি ও সাজসরঞ্জামের সহজলভ্যতা।
ঞ) অভ্যন্তরিন মৎস্যের ব্যাপক চাহিদা।
ট) মূলধনের প্রাচুর্য ইত্যাদি।
ধৃত মৎস্যসমূহ ঃ পৃথিবীর মোট সামুদ্রিক মাছের প্রায় ২৯.৪১% এ মৎস্য ক্ষেত্র থেকে আহরন করা হয়। এর মধ্যে চীন একাই এ মৎস্য ক্ষেত্রের প্রায় ৬০.১০% মৎস্য ধরে থাকে। এ মৎস্য ক্ষেত্রের উত্তর দিকের মৎস্যগুলো হলো কড, হেরিং, স্যামন, ট্রাউড, হ্যালিবার্ট, ম্যাকারেল প্রভৃতি। দক্ষিন দিকে সার্ভিন, টুনা, বনিটো, পিলচার্ড, পোলক, জেলি, রেডফিস, বেলফিস প্রভৃতি উলে−খযোগ্য মৎস্য পরিলক্ষিত হয়। এ ছাড়াও এ মৎস্য ক্ষেত্রে হাঙ্গার, অক্টোপাস, ঝিনুক, কাকড়া ও চিংড়ি প্রচুর পরিমানে পাওয়া যায়। তবে ঝিনুক থেকে মুক্তা সংগ্রহে জাপান প্রসিদ্ধ।
প্রধান প্রধান মৎস্য আহরণকারী দেশ সমূহ ঃ এ অঞ্চলে প্রসিদ্ধ মৎস্য আহরনকারী দেশগুলোর মধ্যে চীন, জাপান, রাশিয়া, দক্ষিন করিয়া, ফিলিপাইন, উত্তর কোরিয়া, তাইওয়ান প্রভৃতি উলে−যোগ্য। তবে এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে চীনের আবস্থান শীর্ষে। ১৯৯৯ সালে চীন প্রায় ১ কোটি ৪৯ লক্ষ মেঃটন সামুদ্রিক মৎস্য শিকার করে। এটা মোট ধৃত সামুদ্রিক মাছের ১৭.৬৭%। এরপর জাপানের স্থান জাপানের প্রায় ২৫ লক্ষ দক্ষ জনশক্তি মৎস্য শিকারে নিয়োজিত। জাপানের ধৃত মৎস্যের ৮০% মৎস্য হলো হোক্কাইডো, কিউরাইড, শাখালিন দ্বীপপুঞ্জের নিকট থেকে ধরা হয়। এ অঞ্চলের মৎস্য আহরনকারী দেশ হলো চীন প্রথম, জাপান ২য়, রাশিয়া ৩য় এবং দক্ষিন কোরিয়া চতুর্থ।
- মৎস্য শিল্পের ধারণা ব্যাখ্যা
মানুষের প্রধান খাদ্য উপাদানের মধ্যে মৎস্য অন্যতম। মানুষের প্রাণীজ আমিষের সিংহভাগ মৎস্য হতে আসে। মৎসের প্রধান প্রধান উৎসগুলো হলো নদী, পুকুর, জলাশয় এবং সমুদ্র। মৎস্যের উৎস অনুসারে মৎস্যকে দু’টি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়ে থাকে। যথা: (১) মিঠা পানির মৎস্য ও (২) সামুদ্রিক মৎস্য।


Leave a Comment