HSC Diploma in Commerce Commercial Geography 11th Class 3rd Week Assignment Answer 2021 | এইচএসসি ডিপ্লোমা ইন কমার্স বাণিজ্যিক ভূগোল ১১শ শ্রেণী ৩য় সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট উত্তর ২০২১


অ্যাসাইনমেন্ট : পরিবেশ দূষণের বিরূপ প্রভাব
থেকে রক্ষা পেতে বনভূমির ভূমিকা বিশ্লেষণ।
শিখনফল/বিষয়বস্তু :
পৃথিবীর বাণ্যিজ্যিক ভূগোল (বনজ সম্পদ)
নির্দেশনা (সংকেত/ ধাপ/ পরিধি):
পরিবেশের ধারণা ও প্রকারভেদ লিখতে হবে
পরিবেশ দূষণ ব্যাখ্যা করতে হবে
বনভূমির ধারণা ও প্রকারভেদ বর্ণ না করতে হবে
বনভূমির সাথে পরিবেশ দূষণের সম্পর্ক ব্যাখ্যা করতে হবে।
উত্তর সমূহ
  • পরিবেশের ধারণা ও প্রকারভেদ লিখতে হবে
পরিবেশ হলো এমন একটি জিনিস যা আমাদের পারিপাশ্বিকত তৈরি করে এবং পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য আমাদেরকে ক্ষমতা প্রদান করে। যদি এক কথায় বলি তাহলে, আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে তা সব মিলিয়েই তৈরি হয়ে আমাদের পরিবেশ।
অর্থাৎ আমাদের চারপাশের গাছপালা, পশুপাখি, জীবজন্তু, মাটি, পানি, বায়ু, সূর্যের আলো, বন্ধুবান্ধব এসব কিছু মিলিয়েই তৈরি হয় পরিবেশ। আমাদের পরিবেশের প্রধান তিনটি উপাদন হচ্ছে —মাটি, পানি ও বায়ু। আমাদের সুস্থভাবে বেঁচে
থাকার জন্য পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখতে হবে।

উপাদান অনুযায়ী পরিবেশকে ২ ভাগে ভাগ করা হয়েছে, যথাঃ
1. প্রাকৃতিক পরিবেশ
2. মানুষের তৈরি পরিবেশ
  • ১. প্রাকৃতিক পরিবেশঃ
আমাদের চারপাশে প্রকৃতির সব উপাদান নিয়েই প্রাকৃতিক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। যেমন: গাছপালা, পশুপাখি, সূর্যের আলো, মাটি, পানি, বায়ু ইত্যাদি। প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদান ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারবে না, মানুষ বাঁচার জন্য প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর নির্ভরশীল।
প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদান হলো: গাছপালা, সূর্যের আলো, মাটি, পানি, বায়ু, সমুদ্র, পাহাড়, নদী, ফুল ইত্যাদি।
  • ২. মানুষের তৈরি পরিবেশঃ
মানুষের তৈরি সকল উপাদান নিয়ে মানুষের তৈরি পরিবেশ সৃষ্টি হয়। যেমন: ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র, কাপড়-চোপড়, রাস্তা- ঘাট, বাস, ট্রেন, নৌকা ইত্যাদি, এসকল উপাদান নিয়েই গড়ে উঠেছে মানুষের তৈরি পরিবেশ। মানুষের তৈরি উপাদান হলো: ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, চেয়ার, টেবিল, আসবাবপত্র, কাপড়-চোপড়, বিদ্যালয়, যানবাহন ইত্যাদি।


  • পরিবেশ দূষণ ব্যাখ্যা করতে হবে
পরিবেশ দূষণ এটি প্রাকৃতিক পরিবেশে ক্ষতিকারক পদার্থ এবং উপাদানগুলি প্রবর্তনের ফলস্বরূপ বা এর জন্য সংবেদনশীল একটি জীব, তাদের সুস্থতাকে প্রভাবিত করে এবং জীবনের
প্রাকৃতিক ভারসাম্যের উপর দুর্দান্ত নেতিবাচক প্রভাব সহ ক্ষতি তৈরি করে।
মানব ক্রিয়াকলাপ:
মানব কার্যকলাপ দূষণের অন্যতম প্রধান কারণ।প্রযুক্তিগত বিকাশ জীবনের মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে, তবে এটি পরিবেশের উপরও উল্লেখযোগ্য নেতিবাচক প্রভাব
ফেলেছে। উদাহরণ স্বরূপ: 
শিল্প উন্নয়ন. 
  • পেট্রল বা ডিজেল গাড়ির অতিরিক্ত ব্যবহার  গ্যাস নিঃসরণ।
  • প্লাস্টিকের উৎপাদন ও নির্বিচার ব্যবহার।
  • অ-বায়োডেগ্রেডেবল বর্জ্যের বড় উৎপাদন।জনসংখ্যা বৃদ্ধি আরও প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণের প্রয়োজন।
  • গবাদি পশুর উত্থান।

বনভূমি: বন উজাড় করা বা গাছ নির্বিচারে কাটানো পৃথিবীর বন এবং জঙ্গলে এই জাতীয় বেশ কয়েকটি প্রাকৃতিক স্থান বিলুপ্তকরণ সহ উল্লেখযোগ্য শতাংশ দ্বারা হ্রাস পেয়েছে। গাছ এবং অন্যান্য গাছপালা বায়ু বিশুদ্ধ করার কাজ করে, তাই তাদের অভাব বায়ু দূষণ এবং বিভিন্ন শ্বাসযন্ত্রের রোগের জন্য দেখা দেয় যা মারাত্মক হতে পারে। কাঠের ব্যবহার, পশুপালনের ক্রিয়াকলাপের জন্য স্থান বাড়াতে বা শহুরে স্থান, শিল্পাঞ্চল, পর্যটন এবং অন্যদের মধ্যে সম্প্রসারণের প্রয়োজনীয়তার কারণে বন উজাড় হচ্ছে।

রাসায়নিক ও কীটনাশক: কৃষিক্ষেত্র হ’ল এমন একটি যা রাসায়নিক এবং কীটনাশকগুলির বৃহত্তম ব্যবহার করে এবং এই ক্ষেত্রের ক্রিয়াকলাপের সাথে জড়িত চাষ এবং যত্নের
পদ্ধতিগুলির সাথে এটির সম্পর্ক রয়েছে। এটি সত্য যে ফল ও শাকসব্জী ফসল রক্ষার জন্য কৃষকদের অবশ্যই এই জাতীয় পণ্যগুলি ব্যবহার করতে হবে, তবে তারা অত্যন্ত দূষণকারী এবং মাটি এবং জলে প্রভাবিত করে। তেমনি প্রাণিসম্পদ একটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে গ্যাস তৈরি করে যা গ্রিনহাউস প্রভাব বাড়ায় এবং ওজোন স্তরকে ক্ষতিগ্রস্থ করে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং আরও বেশি খাদ্য উৎপাদন করার প্রয়োজনে এই পরিস্থিতি আরও বেড়েছে।

শিল্প ও গার্হস্থ্য বর্জ্য : শিল্পকর্মগুলি পরিবেশের জন্য গ্যাস, রাসায়নিক, দ্রাবক ইত্যাদির মতো প্রচুর পরিমাণে বিষাক্ত বর্জ্য উত্পাদন করে। এর মধ্যে অনেকগুলি বর্জ্য প্রত্যক্ষ এবং অবৈধভাবে জলে বা বাতাসে বহিষ্কার করা হয়, এগুলি দূষিত করে এবং পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি করে। ডিটারজেন্টস, দ্রাবক বা তেল, অত্যন্ত দূষণকারী পণ্যগুলির মতো উল্লেখযোগ্য পরিমাণে পরিবারের পণ্যগুলির সাথে একই ঘটে। অতএব, বায়োডেজেডযোগ্য এবং কম দূষণকারী বৈশিষ্ট্যগুলির সাথে অন্যদের সাথে তাদের প্রতিস্থাপন করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
জীবাশ্ম জ্বালানী: জীবাশ্ম জ্বালানী একটি প্রধান দূষণের কারণ। নিষ্কাশন পদ্ধতি থেকে পরিশোধন ও ব্যবহার পর্যন্ত তারা পরিবেশকে নেতিবাচক ভাবে প্রভাবিত করে। জ্বালানী উৎপন্ন করতে প্রকৃতির সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত সম্পদের মধ্যে
রয়েছে তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস এবং কয়লা, যা অত্যন্ত দূষণকারী। বর্তমানে এই জ্বালানীর ব্যবহার হ্রাস করার জন্য বিভিন্ন প্রযুক্তি তৈরি করা হয়েছে, বিশেষত স্বয়ংচালিত অঞ্চলে, যেখানে এটি ইতিমধ্যে বাজারে বৈদ্যুতিক এবং সংকর
যানবাহন চালু করেছে।  
আবর্জনা উৎপাদন ও জমা করা : বর্তমানে আবর্জনা উৎপাদনের হার খুব বেশি এবং বেশিরভাগ প্লাস্টিকের নির্বিচার ব্যবহারের পাশাপাশি অন্য পণ্যগুলি যা বায়োডেগ্রেডেবল নয়  এর প্রভাব হ্রাস করার জন্য, পুনর্ব্যবহারের প্রক্রিয়াগুলির মাধ্যমে এটির চিকিত্সা বা পুনরায় ব্যবহার করতে সক্ষম হওয়ার জন্য, উপাদান (কাঁচ, প্লাস্টিক, অ্যালুমিনিয়াম, পিচবোর্ড বা কাগজ) ধরণের দ্বারা আবর্জনা নির্বাচন করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

পরিবেশ দূষণের ফলাফল
পরিবেশ দূষণের পরিবেশ এবং সাধারণ জীবের উপর মারাত্মক পরিণতি হয়েছে। মূল পরিণতি এবং তার প্রভাবগুলি নীচে উপস্থাপন করা হয়েছে।
বিভিন্ন ধরণের দূষণ : বিভিন্ন ধরণের দূষণ রয়েছে, যার মধ্যে বায়ু, জল এবং মাটি, যা জীবনের জন্য প্রয়োজনীয়, বাইরে দাঁড়িয়ে আছে:
বায়ু দূষণ: গ্যাসের নির্গমন এবং জ্বালানি জ্বালানো এই ধরণের দূষণের প্রধান জেনারেটর যা জীবন্ত প্রাণীদের শ্বাস নেয় বাতাসকে প্রভাবিত করে।
জলের কলুষিতকরণ: সমুদ্র, নদী এবং হ্রদগুলিকে প্রভাবিত করে যেহেতু পানিতে উচ্চ পরিমাণে উপাদান বা বিষাক্ত পদার্থ রয়েছে যা এটি অস্বাস্থ্যকর করে তোলে এবং এর ব্যবহার বা
ব্যবহারের অনুমতি দেয় না।
মাটি দূষণ: এটি শিল্প বর্জ্য, নগর আবর্জনা, কীটনাশক ব্যবহার, খনির ক্রিয়াকলাপ ইত্যাদির দ্বারা উৎপাদিত হয়।

  • বনভূমির ধারণা ও প্রকারভেদ বর্ণনা করতে
  • হবে
বৃক্ষরাজি যে ভূমিতে সমারেহ ঘটায় তাকে বনভূমি বলে।
বনভূমির প্রকারভেদ
বাংলাদেশের বন এলাকাকে মোটামুটি চার ভাগে ভাগ করা যায়। যথা :
১. চট্টগ্রামের বনাঞ্চল,
২. সিলেটের বন,
৩. সুন্দরবন ও
৪. ঢাকা-টাঙ্গাইল ময়মনসিংহ অঞ্চলের বনভূমি।

এছাড়াও উদ্ভিদের বিভিন্নতা অনুসারে বনভূমিকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা :
১. ক্রান্তীয় চির হরিৎ বনভূমি এবং পত্র-পতনশীল বনভূমি।
২. ক্রান্তীয় পাতামরা বা পত্র-পতনশীল বনভূমি এবং
৩. স্রোতজ বা গরান বনভূমি।
বনভূমির প্রকারভেদ’ (Forest type) বাস্ত্তসংস্থানিক বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশের বনভূমি নিম্নোক্ত শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে: ক্রান্তীয় আর্দ্র চিরসবুজ,
ক্রান্তীয় আধা-চিরসবুজ, ক্রান্তীয় আর্দ্র পত্রমোচী,
জোয়ারধৌত বন ও কৃত্রিম বন। ক্রান্তীয় আর্দ্র চিরসবুজ বন (Troppical wet evergreen forest) সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্যসহ এখানে চিরসবুজ গাছগাছালির প্রাধান্য। এই বনে কিছুটা আধাচিরসবুজ ও পত্রমোচী বৃক্ষও থাকে, কিন্তু তাতে বনের চিরসবুজ প্রকৃতি বদলায় না। চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চল, পার্বত্য চট্টগ্রাম, দক্ষিণ-
পূর্বাঞ্চলের কক্সবাজার ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে মৌলভীবাজার জেলায় এ ধরনের বনভূমি রয়েছে। 

ক্রান্তীয় আধা-চিরসবুজ বন (Tropical Semi-evergreen forest)

বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে এ বন সাধারণত চিরহরিৎ, কিন্তু পত্রমোচী (deciduous) বৃক্ষেরও প্রাধান্য রয়েছে। এ বনভূমি সিলেট, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও উত্তর- পশ্চিমাঞ্চলের দিনাজপুরের পাহাড়ি এলাকা নিয়ে গঠিত। প্রধানত জুমচাষ করা হয়। এখানে আট শতাধিক প্রজাতির সপুষ্পক উদ্ভিদ রয়েছে। চিরসবুজ বন অপেক্ষা এ জাতীয় বনে গাছতলায় (undergrowth) উদ্ভিদ অধিক জন্মে।

ক্রান্তীয় আর্দ্র-পত্রমোচী বন (Tropical moist deciduous forest)
শাল (Shorea robusta) গাছের প্রাধান্য বিধায় সাধারণত শালবন নামে পরিচিত। বর্তমানে ঢাকা, ময়মনসিংহ, দিনাজপুর ও কুমিল্লা অঞ্চলে বিস্তৃত এ বনভূমির দুটি সুস্পষ্ট বলয় রয়েছে (প্রায় ১০৭,০০০ হেক্টর)। বৃহৎ অংশটি ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার মধ্যবর্তী অঞ্চলে প্রায় ৮০ কিমি দীর্ঘ ও ৭-২০ কিমি চওড়া যা মধুপুরগড় নামে পরিচিত। ক্ষুদ্রতর অংশটি শেরপুর জেলায় ভারতের গারো
পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত, ৬০ কিমি লম্বা ও ১.৫-১০ কিমি চওড়া। তাছাড়া রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁ ও নওগাঁ জেলায় শালবনের কিছু বিচ্ছিন্ন অঞ্চল (প্রায় ১৪,০০০ হেক্টর এলাকা জুড়ে) এবং কুমিল্লা জেলার শালবন বিহার, ময়নামতি ও
রাজেশপুরে কিছু অবশেষ (২০০ হেক্টর) ছড়িয়ে রয়েছে।

জোয়ারধৌত বন (Tidal forest) খুলনা, পটুয়াখালী, নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের এই উপকূলীয় বনগুলি (একত্রে প্রায় ৫২০,০০০
হেক্টর) বাংলাদেশের সর্বাধিক উৎপাদনশীল বনভূমি। প্রতিবার জোয়ারের সময় এ বনভূমি সমুদ্রের পানিতে প্লাবিত হয়।
এখানকার চিরসবুজ গাছগুলির আছে বায়ুমূল এবং বংশবিস্তার জরায়ুজ ধরনের। সুন্দরি ছাড়াও পশুর, গেওয়া, কেওড়া, কাঁকড়া, বাইন, ধুন্দুল, আমুর ও ডাকুর দলবদ্ধভাবে জন্মে। উপকূলীয় পানির ঘোলাটে ভাব ও লবণাক্ততা সেখানকার প্রজাতিগুলির বিন্যাস ও বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণ করে। সুন্দরবন ছাড়াও গাঙ্গেয় বদ্বীপের অনেকগুলি চরই ম্যানগ্রোভের গভীর বনে ঢাকা, নেই শুধু সুন্দরি। নদীর পলি জমে ওঠা তীর ও ফাটলেই এসব প্রজাতি দ্রুত বেড়ে ওঠে। নদী ও খালের পাড়ে ঠেসমূলীয় (rhizophoreceous) প্রজাতির প্রাধান্য দেখা যায়।
জোয়ারধৌত বন :
কিছু বন কিছু নির্দিষ্ট বাস্ত্তসংস্থানে সীমিত থাকে। এসব বনের মধ্যে রয়েছে ১. বেলাভূমি বা তটীয় বন- চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বরিশাল ও পটুয়াখালী অঞ্চলের সমুদ্র উপকূল বরাবর বিস্তৃত। এখানে নানা ধরনের ও ঘনত্বের ঝোপঝাড়ের সঙ্গে জন্মে ঝাউ, কেরুং, পনিয়াল, কাঠবাদাম, মাদার, পিপুল ও নিশিন্দা; ২. স্বাদুপানির নিম্নভূমির বন- সিলেট, সুনামগঞ্জের হাওর ও পার্বত্য বনাঞ্চলের নিচু এলাকায় অবস্থিত। এসব এলাকা বর্ষায় প্লাবিত হয় ও মাটি অত্যন্ত পানিসিক্ত থাকে। সিলেট অঞ্চলে নিম্নভূমির বনে প্রচুর তৃণজাতীয় উদ্ভিদ- ইকড়, খাগড়া ও নল জন্মে। হাওরগুলির পাড়ে প্রায়শই শুধু হিজল বন দেখা যায়। এখানকার গাছতলার গাছগাছড়া হলো প্রধানত বেত,
গুঁয়েবাবলা (Lantana species) এবং বড় জাতের ঘাস ও বেনা।

আবাদি বন (Plantation forest) প্রতিবছর রোপিত এই বন দুভাগে বিভাজ্য: 
১. রোপিত রাষ্ট্রীয় বন- ১৮৭১ সালে বর্তমান
মায়ানমার থেকে বীজ এনে পার্বত্য চট্টগ্রামের কাপ্তাইয়ে সেগুন চাষের প্রাথমিক উদ্যোগ নেওয়া হয়। তখন থেকেই আবাদি বন গাছ কেটে নতুন করে বনায়নের অংশ হয়ে উঠে। ১৯২০ সাল
পর্যন্ত এটি শুধু পার্বত্য চট্টগ্রামেই সীমাবদ্ধ ছিল। তারপর চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগেও সম্প্রসারিত হয়। বছরে বনায়নের হার ছিল ৪০০ হেক্টর। সেগুনের পর লাগানো অন্যান্য প্রজাতি হলো গামারি, চাপালিশ, গর্জন, মেহগনি, জারুল, তুন, পাইন ও জাম। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে ব্যাপক বনায়ন কর্মসূচি গৃহীত হয়। ১৯৭৪ সালে বন বিভাগ জ্বালানি কাঠ উৎপাদনের জন্য গামারি,
Albizia falcata; কদম, Acacia species; Eucalyptus species ও পাইনের মতো দ্রুতবর্ধনশীল বৃক্ষ ব্যাপকভাবে রোপণ শুরু করে; 

২. ব্যক্তিমালিকানাধীন আবাদি বন- চিরাচরিত প্রথা হিসেবেই বসতবাড়িতে সাফল্যের সঙ্গে বিভিন্ন বৃক্ষ ও ফসল জন্মানো হয়। এ জাতীয় বন রাষ্ট্রীয় বনভূমি ধ্বংসের বিপরীতে দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বসতবাড়ির বনভূমিতে প্রায় ১৬০ প্রজাতির বৃক্ষ পাওয়া যায়। এই ধরনের বন সরকারি বনের তুলনায় ১৫-২৫ গুণ বেশি উৎপাদনশীল। [মোস্তফা কামাল পাশা]

বনভূমির বিস্তৃতি (Forest distribution) বাংলাদেশে অশ্রেণীবদ্ধ বনাঞ্চলসহ সর্বমোট রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত বনাঞ্চলের পরিমাণ প্রায় ২২ লক্ষ ৪২ হাজার হেক্টর। এই সম্পূর্ণ এলাকার একটি বিরাট অংশ বৃক্ষহীন। বিগত তিন দশক ধরে প্রতি বছর গড়ে ২.১% বনাঞ্চল বিলুপ্ত হয়েছে। বাংলাদেশের গ্রামীণ বনভূমিসমূহ দেশের অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। দেশের প্রয়োজনীয় কাঠ ও জ্বালানি কাঠের চাহিদার উল্লেখযোগ্য অংশ পল্লি অঞ্চলের বনসমূহ থেকে পূরণ হয়। কাঠ উৎপাদন ছাড়াও পল্লি বনসমূহের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য গুরুত্ব রয়েছে।


এ সকল বন থেকে আহরিত হয় ফলমূল, পশুখাদ্য, জ্বালানি, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের কাঁচামাল, কৃষি সরঞ্জাম, গৃহনির্মাণের উপকরণসমূহ। এক হিসাবে দেখা গেছে যে, গ্রামীণ বন জঙ্গলের পরিমাণ প্রায় ২,০৭,০০০ হেক্টর। প্রকৃতপক্ষে গ্রামীণ বনকে বন বলা চলে না। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে গ্রামীণ বনকুঞ্জসমূহ
বহুমুখী তাৎপর্য বহন করে। 

চা বাগান এক ধরনের বন যা উল্লেখ করা প্রয়োজন। গুণগতমান বিচারে উৎকৃষ্ট বৃক্ষ সম্পদ পাওয়া যায় চা বাগান এলাকা থেকে। চা বাগানে উৎপন্ন বৃক্ষাদির পরিমাণও দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। চা বাগানের বৃক্ষাদি বলতে চা বাগানের ছায়া প্রদানকারী বৃক্ষ ছাড়াও চা বাগান সংলগ্ন এলাকার অন্যান্য বৃক্ষকে বুঝানো হয়। এই ধরনের প্রায় ২,৮০০ হেক্টর আচ্ছাদিত ভূমি চট্টগ্রাম, সিলেট ও রাঙ্গামাটিতে বিস্তৃত। অতীতে এরূপ
আরও অধিক পরিমাণ ভূমিতে ঘন বৃক্ষরাজি শোভা পেত।

তৃতীয় ধরনের বন দ্রুত প্রসার লাভ করছে। বন বহির্ভূত সরকারি খাস জমি যেমন রাস্তাঘাটের কিনার, রেল পথের বেড়ী, খাল বিলের পাড়ে বৃক্ষরোপণ। এই ধরনের প্রান্তিক ভূমিতে বনায়ন
একদিকে ক্ষয়িষ্ণু গ্রামীণ বনের ঘাটতিপূরণ করছে, একই সঙ্গে পতিত জমির ব্যবহারে যোগ করছে এক নতুন মাত্রা।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত বনসমূহ তিনটি অঞ্চলে বিস্তৃত: ১.
বৃহত্তর চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং সিলেটের পাহাড়ি
বনাঞ্চল; ২. কেন্দ্রীয় ও উত্তরাঞ্চলীয় অভ্যন্তরীণ বনাঞ্চল; ৩.
দ্বীপ ও চরাঞ্চলীয় এবং উপকূলবর্তী বনাঞ্চল।

  • বনভূমির সাথে পরিবেশ দূষণের সম্পর্ক ব্যাখ্যা করতে হবে।
পরিবেশ দূষণ : প্রাকৃতিক কারণে অথবা মানুষের কার্যকলাপে সৃষ্ট উদ্ভুত দূষিত পদার্থ যখন পরিবেশকে বিষময় করে তোলে তখনই আমরা দূষণ শব্দটা ব্যবহার করি। পরিবেশের প্রাকৃতিক
বিভিন্ন উপাদান, যেমন-মাটি, পানি, বায়ু ইত্যাদির ভৌত, রাসায়নিক ও জৈব পরিবর্তন ঘটলে তা জীবজগতের উপর ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি করে। এটিকে পরিবেশ দূষণ বলে। ক্ষতিকর পদার্থের বৃদ্ধির ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং
স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যহত হয়, তখনই পরিবেশ দূষিত হয়। প্রতি বছরই পরিবেশ সংক্রান্ত বিশ্ব সম্মেলন হচ্ছে। এই সম্মেলনের একটি অন্যতম উদ্দেশ্য মানুষকে পরিবেশ সম্পর্কে আরও বেশি
করে সচেতন করা। মানুষের মধ্যে এই বোধ সৃষ্টি করা যে, আমাদের বেঁচে থাকার পৃথিবী একটাই। কাজেই পরিবেশ রক্ষায় সবাইকে এ উদ্যোগে শরিক হতে হবে। ধরিত্রী তার মানুষ দিয়েই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। যেমনঅসংগতিপূর্ণ নগরায়ন, জমির অতিকর্ষণ, অপরিকল্পিত উন্নয়ন, জমিতে অতি মাত্রায় কীটনাশক ব্যবহার, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, যানবাহনের কালো ধোঁয়া ইত্যাদি সবকিছু মিলে পরিবেশকে দূষিত করছে এবং সামগ্রিক পরিবেশগত ভারসাম্য ব্যহত হচ্ছে। যেসব কারণে পরিবেশ দূষণ ঘটে তা বিষদভাবে বর্ণনা করা হলো। পরিবেশ দূষণের কারণ
১ । জনসংখ্যা বৃদ্ধি : ক্রমাগত জনসংখ্যা বৃদ্ধি, প্রাকৃতিক ভারসাম্যহীনতা ও পরিবেশ দূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করছে। বর্ধিত জনসংখ্যার প্রয়োজনে বনজঙ্গল, গাছপালা কেটে
চাষের জমি তৈরি করা হয় বা বসতবাড়ি নির্মাণ করা হয়। গাছপালা কাটার ফলে বৃষ্টিপাত কমে যায়, খরার প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। অধিক জনসংখ্যা পরিবেশের ওপর অধিক চাপ সৃষ্টি করে, স্যানিটেশন ব্যবস্থাকে কলুষিত করে এবং পরিবেশের বিপর্যয় ঘটায়। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে খাদ্য, বাসস্থান, যানবাহন, শিল্পকারখানা সবকিছুর চাহিদাই বৃদ্ধি পায়। অধিক খাদ্য উৎপাদন করতে অধিক কীটনাশক ও সার ব্যবহার, ভূগর্ভের পানি
উত্তোলনের ফলে মৃত্তিকা দূষণ হচ্ছে। অধিক শিল্পকারখানা, যানবাহন, পানি ও বায়ুদূষণ ঘটাচ্ছে।

২ । নগরায়ন : নগরায়নের ফলে পরিবেশ দূষণ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। কলকারখানা ও গাড়ি থেকে কালো ধোঁয়া বায়ু দূষণের সৃষ্টি করছে। বাস, ট্রাক ও অন্যান্য গাড়ির হর্ণ থেকে শব্দ দূষণ হচ্ছে। আবার নদীর পানিতে কলকারখানার আবর্জনা মিশে নদীর পানি দূষিত হচ্ছে। এছাড়া নিম্ন অঞ্চলে জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে মশার বংশ বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হৃমকিস্বরূপ। নগরায়ণের ফলে মানুষ কাজের আশায় গ্রাম ছেড়ে শহরে এসে বসবাস করছে। শহরে অধিক জনসংখ্যার ফলে আবাসন সমস্যা দেখা দিচ্ছে, বস্তি গড়ে উঠছে। বস্তিতে বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন সমস্যা ও ময়লা-আবর্জনা ফেলার অব্যবস্থা ও সচেতনতার অভাব পরিবেশ দূষণ ঘটাচ্ছে।
৩। জলবায়ু পরিবর্তনে সৃষ্ট সমস্যা : সমগ্র বিশ্বে আজ জলবায়ুর পরিবর্তনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হচ্ছে। এই জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম কারণ অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও শিল্পায়ন। ভবিষ্যতে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশ, ভারত, মালদ্বীপ, শ্রীলংকা প্রভৃতি দেশ অধিক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়ার ফলে বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাই- অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে হিমালয়ের বরফ গলে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এভাবে যদি চলতে থাকে তবে আগামী ৩০ বছরে সমুদ্রের উপকূলবর্তী অনেক দেশ সমুদ্রের
তলে বিলীন হয়ে যাবে। আমাদের দেশেরও অধিকাংশ ভূমি সমুদ্রতলে হারিয়ে যাবে। বিপন্ন হবে জীবন ও সম্পদ। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে খরা, নদীর প্রবাহ হ্রাস, ঘূর্ণিঝড়,
বন্যা, জলোচ্ছ্বাস পানযোগ্য পানির অভাব, মৎস্যসম্পদ ধ্বংস, ফসল উৎপাদন হ্রাস, ভূমিকম্প ইত্যাদি ভয়াবহ দুর্যোগে মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
৪। বনজ সম্পদ ধ্বংস : পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় একটি দেশের ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা প্রয়োজন। বাংলাদেশের বনভূমির পরিমাণ ৮%। বন সম্পদ ধ্বংসের অন্যতম কারণ, নগরায়ণ, শিল্পায়ন, জ্বালানি সংগ্রহ ও কৃষিজমি সম্প্রসারণ। এছাড়া জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে জ্বালানি, বাড়িঘর, আসবাবপত্র নির্মাণ ইত্যাদি প্রয়োজনে ব্যাপকহারে বনজ সম্পদ উজাড় হচ্ছে। ফলে ভূমিক্ষয় হয়ে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।

৫। অপরিকল্পিত শিল্পায়ন : বাংলাদেশের পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ অপরিকল্পিত শিল্পায়ন। খাদ্যসামগ্রী তৈরির কারখানার পাশে সার ও কীটনাশক তৈরি কারখানা, বর্জ্য নিষ্কাশনে অব্যবস্থাপনা এবং পরিশোধনের ব্যবস্থা না থাকায় জলাশয়ে গিয়ে বর্জ্য পতিত হচ্ছে। ফলে পানি ও বায়ু দূষণ ঘটছে। ওজোন স্তর হ্রাস পাচ্ছে, গ্রিনহাউজ প্রতিক্রিয়া ও উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
৬। অপরিকল্পিত বর্জ্য ও পয়ঃনিষ্কাশন ঃ শিল্পকারখানা, আবাসিক এলাকা, হাসপাতাল বর্জ্য ও পয়ঃনিষ্কাশনের ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সেগুলো মাটিতে শোষিত হচ্ছে বা পার্শ্ববর্তী জলাধারে গিয়ে পড়ছে, ফলে মাটি ও পানি দূষিত হচ্ছে।
৭। নদী-নালা, খাল-বিল ভরাট : নদী-নালা, খাল-বিল ভরাট হওয়ার ফলে বৃষ্টির পানি সরে যেতে পারে না, জলাবন্ধতার সৃষ্টি হয়, ফলে পরিবেশ দূষিত হয়।
৮। ইটভাটা : কোনো নিয়মনীতি ছাড়া এদেশে অসংখ্য ইটভাটা গড়ে উঠেছে, যা পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। ইটভাটায় কাঠ ব্যবহারের ফলে বনভূমি ধ্বংস হচ্ছে এবং ইট পোড়ানোর ফলে
বায়ুতে নির্গত বিষাক্ত গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
৯। অচল ও অধিক যানবাহন ব্যবহার : অচল ও অধিক যানবাহন ব্যবহারের ফলে অধিক জ্বালানি ব্যবহৃত হচ্ছে, ফলে বায়ুদূষণ ও শব্দদূষণ সৃষ্টি হচ্ছে।
১০। অপরিকল্পিতভাবে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারঃ
ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা মেটাতে গিয়ে কৃষি কাজে অপরিকল্পিতভাবে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার হচ্ছে, ফলে মাটি ও বায়ুদূষণ ঘটছে।
১১। ভূমি ক্ষয় : নগরায়ন, পাহাড় কাটা, জলাশয় থেকে নুড়ি-বালু, পাথর উত্তোলন, বনজ সম্পদ ধ্বংস ইত্যাদি কারণে ভূমিক্ষয় হচ্ছে। পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে পরিবেশ দূষণের সৃষ্টি হচ্ছে।

Leave a Comment