অ্যাসাইনমেন্টঃ গ্রিক সভ্যতা ও রােমান সভ্যতার তুলনামূলক চিত্র উপস্থাপনপূর্বক বিশ্বসভ্যতারঅ গ্রগতিতে উভয় সভ্যতার অবদান মূল্যায়ন।
শিখনফল/বিষয়বস্তুঃ
ভৌগােলিক অবস্থান ও সময়কালের বর্ণনাপূর্বক গ্রিক সভ্যতার উভবের পটভূমি বর্ণনা করতে পারবে;
বিশ্বসভ্যতার অগ্রগতিতে গ্রিকসভ্যতার শিক্ষা, সংস্কৃতি, ধর্ম, দর্শন ও বিজ্ঞানের অবদান বর্ণনা করতে পারবে;
ভােগােলিক অবস্থান ও সময়কাল উল্লেখপূর্বক প্রাচীন রােমান সভ্যতা বর্ণনা করতে পারবে;
শিক্ষা, সাহিত্য ও লিখন পদ্ধতির বিকাশে প্রাচীন রােমান সভ্যতার অবদান বিশ্লেষণ করতে পারবে;
সভ্যতার বিকাশে প্রাচীন রােমান সভ্যতার স্থাপত্য, ভাস্কর্য ও বিজ্ঞানের অবদান বর্ণনা করতে পারবে।
নির্দেশনাঃ
গ্রিকসভ্যতা ও রােমান সভ্যতার পটভূমির ব্যাখ্যা;
ভৌগােলিক অবস্থান ও সময়কালের সাদৃশ্য বৈসাদৃশ্য ছকে উপস্থাপন;
শিক্ষা, সাহিত্য ও দর্শনে গ্রিক ও রােমান সভ্যতার তুলনামূলক বৈশিষ্ট্য উপস্থাপন;
স্থাপত্য, ভাস্কর্য ও বিজ্ঞানে সভ্যতা দু’টোর অগ্রগতির চিত্র উপস্থাপন।
এসাইনমেন্ট এর নমুনা উত্তর
ক) গ্রিকসভ্যতা ও রোমান সভ্যতার পটভূমিঃ
গ্রিকসভ্যতাঃ ইউরোপ মহাদেশের গ্রিক রাষ্ট্রের অন্তর্গতপ্রা চীন কয়েকটি শহরকে কেন্দ্র করে গ্রিক সভ্যতার ঘটে উদ্ভব।ভূ -প্রকৃতিই দেশটিকে তিন ভাগে বিভক্ত করে দিয়েছে। দক্ষিণ গ্রিস, মধ্য গ্রিস ও উত্তর গ্রিস। মেসিডােনিয়ান অধিপতি আলেকজাণ্ডারের শাসনামলে এ সভ্যতার সীমা ছাড়িয়ে আধুনিক মিসর, ইসরাইল, প্যালেষ্টাইন, লেবানন, সিরিয়া, ইরাক ও ইরান হয়ে ভারতবর্ষ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছিল আড্রিয়াটিক সাগর, ভূমধ্যসাগর, ইজিয়ান সাগর দ্বারা বেষ্টিত থাকার কারণে গ্রিক সভ্যতাকে ‘ওসেনিয়ান’ (সাগরীয়) সভ্যতা বলা হয়।অপরদিকে মিসর, ব্যাবিলন সভ্যতা ছিল নদীকেন্দ্রিক সভ্যতা।
প্রাচীন গ্রিক সমাজের বিশেষত্ব দাসপ্রথা, গ্রিকদের আগে আর কোন সমাজই দাসত্বের বুনিয়াদের উপর গড়ে ওঠে নাই। গ্রিকদের আদি বাসস্থান গ্রিসে নয়। গ্রিসে আসার পূর্বে তারা থিসালি ও এপিরাসে বাস করত। গ্রিক সভ্যতার সূচনাকাল থেকে পতন পর্যন্ত এর রাজনৈতিক অবস্থা পর্যালােচনা করে, এ সভ্যতাকে ২টি ভাগে ভাগ করে আলােচনা করা যায়। যথা: ১.হেলেনিক যুগ। ২. হেলেনিস্টিক যুগ।
গ্রিক সভ্যতার ক্রমবিকাশে আদিকালকে ‘হােমারিক যুগ’ বলা হয়। গ্রিক কবি হােমারের নাম থেকে এ যুগের নামকরণ করা হয়।খ্রিস্টপূর্ব ১২০০ থেকে ৮০০ অব্দ পর্যন্ত এই যুগের বিস্তৃতি।বিখ্যাত কবি হােমার ‘ইলিয়ড’ এবং ‘ওডিসি’ নামে দুটি মহাকাব্য রচনা করেন। তার রচনাবলী থেকে গ্রিক ইতিহাস,ভূগােল, সাহিত্য, লােক ঐতিহ্যের সন্ধান পাওয়া যায়। হােমারিক যুগে সমগ্র গ্রিস ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গ্রামীণ সংস্থায় (Village/Rural Community) বিভক্ত ছিল এবং স্বাধীন ভাবে পরিচালিত হতাে।
রোমান সভ্যতাঃ কালের পরিক্রমায় বিভিন্ন দ্বন্দ্ব-সংঘাত, ঘাত-প্রতিঘাত উত্থান-পতন, উদ্ভাবন-ধ্বংসের পথ পাড়ি দিয়ে গড়ে উঠেছিল রোমান সভ্যতা। গ্রিক সভ্যতার সমসাময়িক রােমান সভ্যতা হেলেনিক ও হেলেনিস্টিক সভ্যতার অনেক সংস্কৃতি গ্রহণ করেছে। ঐতিহাসিকদের ধারণা, ৭৫৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রােম নগরী প্রতিষ্ঠিত হয়। রাজা রােমুলাস এর নামানুসারে রােম নগরীর নামকরণ করা হয়। টাইবার নদীর তীরে অবস্থিত প্রাচীন রােমানগরীকে ‘বিশ্বের রাজধানী বলা হয়’। কারণ রোম নগরীর সঙ্গে ইউরোপ আফ্রিকা এশিয়া মহাদেশে বিস্তৃত যোগাযোগ ছিল। রোমান সভ্যতা প্রায় ছয়শ বছর স্থায়ী ছিল।
খ)ভৌগলিক অবস্থান ও সময়কালের সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্যঃ
নিচে গ্রিকসভ্যতা ও রোমান সভ্যতার ভৌগলিক অবস্থান ও সময়কালের সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্য ছকে উপস্থাপন করা হলঃ
- শিক্ষা: শিক্ষা সম্পর্কে গ্রিক জ্ঞানী-গুণীরা বিভিন্ন ধারণা পোষণ করে। বিশেষ করে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা প্রতি তারা গুরুত্ব দিয়েছিল। তারা মনে করতো শিক্ষিত নাগরিক সুষ্ঠুভাবে শাসনকার্য পরিচালনা করতে পারবে। তাই তারা তাদের সন্তানকে সাত বছর বয়স থেকে পাঠশালায় পাঠাতো। দাসের সন্তান ছাড়া সকল শ্রেণীর সন্তানেরা শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পেত।
- সাহিত্য: প্রাচীন গ্রিস সাহিত্য চর্চায় বিশেষ গুরুত্ব দিতেছিল। তবে নাটক রচনায় তারা বেশি পারদর্শী ছিল। হোমরিক যুগে গ্রিক সাহিত্যের চূড়ান্ত বিকাশ ঘটে। হোমারের মহাকাব্য ইলিয়াড ও ওডিসি’ তে গ্রীকদের বীরত্বের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। হোমারিক যুগের পরে গ্রীক সমাজে গীতিকাব্য ও শোক গাথা আবির্ভাব ঘটে। সেই সময় সোলেন ছিলেন একজন বিখ্যাত গীতিকাব্য রচিয়তা। এছাড়া বিখ্যাত নাট্যকার ছিলেন এসকাইলাস, ইউরিপিডিস, প্রমুখ।
- দর্শন: পৃথিবী ব্যাপী সভ্যতার ইতিহাসে গ্রীক দর্শন গােটা বিশ্বের দর্শন ও সভ্যতাকে প্রভাবিত করেছে। অদ্যাবধি জ্ঞানের জগতে যে সকল গ্রিক কবি দার্শনিক জ্ঞানের আলােকবর্তিকা বিতরণ করেছেন তাদের মধ্যে বিশ্ব বিখ্যাত শিক্ষাগুরু সক্রেটিস। সক্রেটিস এর ছাত্র প্লেটো ও প্লেটো এর ছাত্র এ্যারিস্টটল বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য। সে সময়ে থালেস ছিলেন জনপ্রিয় দার্শনিক যিনি সর্বপ্রথম সূর্যগ্রহণের প্রাকৃতিক কারণটি ব্যাখ্যা করেন। পরবর্তীতে গ্রিসে যুক্তিবাদী দার্শনিকের আবির্ভাব ঘটে।
- শিক্ষা: রোমানদের শিক্ষার মূল কার্যক্রমে ছিল খেলাধুলা ও বীরদের স্মৃতিকথা বর্ণনা করা। কারণ রোমের যাত্রা শুরু হয়েছিল যুদ্ধবিগ্রহের মাধ্যমে। তাদের সবকিছুই ছিল যুদ্ধকে কেন্দ্র করে। সে সময়ে যারা উচ্চ শ্রেণীভূক্ত ছিলেন তাদের জন্য গ্রিক ভাষা ছিল একটি ফ্যাশন। যুবকরা শিক্ষা গ্রহণের জন্য বিভিন্ন বিখ্যাত পাঠশালাতে যেত।
- সাহিত্য: রোমান সভ্যতায় সাহিত্য চর্চা বেশ জনপ্রিয় ছিল তার মূল কারণ হল সে যুগে সাহিত্য চর্চায় স্বাধীনতা ছিল ব্যাপক। রোমান সাহিত্যে নাটকের ভূমিকা ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। মলিয়ে প্লুটাস এবং টেরেন্স ছিলেন বিখ্যাত সাহিত্যিক ও নাট্যকার।
- দর্শন: রােমানরা দর্শনের ক্ষেত্রেও গ্রিক প্রভাব মুক্ত হতে পারেনি। গ্রিক দর্শনের ওপর ভিত্তি করেই রােমান দর্শনের সূত্রপাত। রােমীয় দার্শনিকদের মধ্যে বিখ্যাত ছিলেন সিসিরাে (Cicero), লুক্রেটিয়াস (Lucretius)। লুক্রেটিয়াস ছিলেন গ্রিক এপিকিউরিয়ান মতবাদের প্রবক্তা। তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘On the Nature of Things’ অপর দিকে সিসিরাে ছিলেন গ্রিক স্টয়িক মতবাদের অনুসারী। তাঁর বিখ্যাত রচনা ‘On Duty’ তে স্টয়িক মতবাদের প্রতিফলন দেখা যায়।
Leave a Comment