এসএসসি ২০২১ ব্যবসায় উদ্যোগ ৮ম সপ্তাহের এসাইনমেন্ট উত্তর | SSC 2021 Business Initiative 8th Week Assignment Answer


এসএসসি ২০২১ ব্যবসায় উদ্যোগ ৮ম সপ্তাহের এসাইনমেন্ট উত্তর | SSC 2021 Business Initiative 8th Week Assignment Answer


এসএসসি ২০২১ ব্যবসায় উদ্যোগ ৮ম সপ্তাহের এসাইনমেন্ট উত্তর | SSC 2021 Business Initiative 8th Week Assignment Answer


ক) নং প্রশ্নের উত্তরঃ
একমালিকানা ব্যবসায়ের ধারণা ( Concept of Sole Proprietorship Business ) সাধারণভাবে একজন ব্যক্তির মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত , পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত ব্যবসায়কে একমালিকানা ব্যবসায় বলে । একক মালিকানায় পৃথিবীতে সর্বপ্রথম ব্যবসায় কার্যক্রম শুরু হয়েছিল । এ জন্য এটিকে সবচেয়ে প্রাচীনতম ব্যবসায় সংগঠন বলা হয় । বর্তমান প্রেক্ষাপটে বলা যায় , মুনাফা অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে যখন কোনাে ব্যক্তি নিজ
দায়িত্বে মূলধন যােগাড় করে কোন ব্যবসা গঠন ও পরিচালনা করে এবং উক্ত ব্যবসায়ে অর্জিত সকল লাভ নিজে ভােগ করে বা ক্ষতি হলে নিজেই তা বহন করে , তখন তাকে একমালিকানা ব্যবসায় বলে ।

একমালিকানা ব্যবসায় গঠন অত্যন্ত সহজ । যে কোনাে ব্যক্তি নিজের উদ্যোগে সল্প অর্থ নিয়ে এ জাতীয় কারবার শুরু করতে পারেন । সাধারণত এ জাতীয় ব্যবসায়ের আয়তন ছােট হয় । তবে প্রয়ােজনে মালিক একাধিক কর্মচারী নিয়ােগ করতে পারেন এবং অধিক অর্থও বিনিয়ােগ করতে পারেন । আইনের চোখে একমালিকানা ব্যবসায়ের তেমন কোনাে বাধ্যবাধকতা নেই
। গ্রামে - গঞ্জে , হাট - বাজার বা রাস্তার পাশে কিংবা নিজ বাড়িতে যে কেউ ছােট - খাটো ব্যবসা শুরু করতে পারে । তবে শহরে বা পৌরসভা এলাকায় উদ্যোক্তাকে ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করে ব্যবসা আরম্ভ করতে হয় । আমাদের দেশের অধিকাংশ ব্যবসায় সংগঠন একমালিকানার ভিত্তিতে গঠিত । শুধু তাই নয় ইউরােপ ও আমেরিকার প্রায় ৮০ % ব্যবসায় এক মালিকানা ভিত্তিক ।

আমাদের দেশের সাধারণ মুদি দোকান , চায়ের দোকান , সবজি দোকান , অধিকাংশ খুচরা দোকান একক মালিকানার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত ।


খ ) নং প্রশ্নের উত্তরঃ

একমালিকানা ব্যবসায়ের বৈশিষ্ট্য ( Characteristics of Sole Proprietorship Business ) একমালিকানা ব্যবসায় হলাে এমন এক ধরনের ব্যবসায় যার উদ্যোক্তা , মালিক , পরিচালক ও অর্থের যােগানদাতা একই ব্যক্তি এবং তিনি নিজেই এককভাবে ব্যবসায়ের সকল ঝুঁকি , দায় , লাভ ও লােকসান বহন করেন । নিম্নে একমালিকানা ব্যবসায়ের বৈশিষ্ট্যগুলাে চিহ্নিত করা হলাে
• একমালিকানা ব্যবসায়ের মালিক সব সময় একজন ব্যক্তি যিন নিজ উদ্যোগে পুঁজির সংথান করেন , ব্যবসায় পরিচালনা করেন ও ঝুঁকি বহন করেন ।
★এ জাতীয় ব্যবসায়ের গঠন বেশ সহজ । আইনগত ঝামেলা না থাকায় যে কেউ ইচ্ছা করলে ও উদ্যোগ নিলে এ ব্যবসায় শুরু করতে পারেন ।
★ স্বল্প মূলধন নিয়ে এ জাতীয় ব্যবসায় গঠন করা যায় । মালিক নিজেই এ মূলধন যােগান দেন । সাধারণত নিজস্ব সঞ্চয় ও প্রয়ােজনে কধু - বান্ধব , আত্মীয় - স্বজন এবং ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসায় পরিচালনা করেন ।
• অধিকাংশ ক্ষেত্রেই একমালিকানা ব্যবসায় ক্ষুদ্র
আকারের হয়ে থাকে । মূলধনের স্বল্পতা ও একজন ব্যক্তির মালিকানার জন্য এর আয়তন সাধারণত ছােট হয়ে থাকে ।
• একমালিকানা ব্যবসায়ের সকল ঝুঁকি মালিককে এককভাবে বহন করতে হয় ।
• আইনের চোখে একমালিকানা ব্যবসায়ের পৃথক কোনাে সত্তা নেই । মালিক ও ব্যবসায় অভিন্ন । এ জাতীয় ব্যবসায়ের সম্পূর্ণ দায় - দায়িত্ব মালিকের । ফলে তার দায় অসীম । প্রয়ােজনে ব্যক্তিগত সম্পত্তি বিক্রয় করে ব্যবসায়ের দায় পরিশােধ করতে হয় ।
• পুরাে ব্যবসায়ের একক মালিকানার জন্য লাভের সবটা মালিক একা ভােগ করেন । আবার লােকসানের সম্মুখীন হলে মালিককেই এককভাগে তা বহন করতে হয় ।
• একমালিকানা ব্যবসায়ের স্থায়িত্ব মালিকের ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল । কারণ ব্যবসায় চালু রাখা বা বন্ধ করা মালিকের আগ্রহের উপর নির্ভর করে ।


( গ ) নং প্রশ্নের উত্তরঃ
একমালিকানা ব্যবসায়ের উপযুক্ত ক্ষেত্রসমূহ ( Suitable Areas for Sole - proprietorship Business ) একমালিকানা ব্যবসায় প্রাচীনতম ব্যবসায় হিসেবে বিশ্বের অনুন্নত , উন্নয়নশীল ও উন্নত সকল দেশেই স্বীকৃত । প্রাচীনতম ব্যবসায় হলেও বর্তমান বৃহদায়তন ব্যবসায়ের সাথে প্রতিযােগিতা করে এখনও সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যবসায় হিসেবে টিকে আছে । একমালিকানা ব্যবসায়ে এমন কিছু বৈশিষ্ট্য ও সুবিধা আছে যে কারণে এ জাতীয় ব্যবসায় সকলের নিকট জনপ্রিয় । একমালিকানা ব্যবসায়ের উপযুক্ত
ক্ষেত্রসমূহ বর্ণনা করা


১. অনেকে আছেন যাদের হাতে পর্যাপ্ত অর্থ নেই অথচ ব্যবসায় শ শুরু করতে আগ্রহী । আত্মকর্মসংস্থানে উদ্যোগী এমন হাজার হাজার লােকের জন্য একমালিকানা ব্যবসায়
সবচেয়ে উপযুক্ত । যেমন- চায়ের দোকান , ছােট খাবারের দোকান , কুটির শিল্পের দোকান , মৃৎ শিল্পের দোকান ।
২.এমন কিছু ব্যবসায় আছে যেগুলাের জন্য বেশি অর্থের প্রয়ােজন পড়ে না । সে জাতীয় ব্যবসায়ের জন্য একমালিকানা ব্যবসায়ই সবচেয়ে বেশি উপযােগী বিবেচিত হয় । যেমন- পানের দোকান , সবজির দোকান ।
৩.যে সকল ব্যবসায়ে ঝুঁকি একেবারেই কম সেগুলাের জন্য একমালিকানা ব্যবসায় বেশি উপযুক্ত । কেননা কম আয়ের ব্যক্তিরা সাধারণত ঝুঁকি এড়িয়ে চলতে চান , ফলে তারা এমন ব্যবসায়ই বেশি পছন্দ করেন । যেমন- চালের দোকান , ঔষধের দোকান ।
৪. কিছু কিছু ব্যবসায় আছে যেগুলাের প্রদত্ত পণ্য বা সেবার চাহিদা বিশেষ বিশেষ এলাকা বা নির্দিষ্ট শ্রেণির গ্রাহকদের নিকট সীমাবদ্ধ । সে সব পণ্য বা সেবার ক্ষেত্রে একমালিকানা ব্যবসায় বেশি উপযুক্ত । যেমন স্কুলের সামনে বই - খাতার দোকান , কোনাে শিল্প কারখানার সামনে
রেস্টুরেন্ট ।
৫. পচনশীল জাতীয় পণ্য যেমন ফল - মূল , শাক - সবজি , মাছ - মাংস ইত্যাদির ব্যবসায় সাধারণত একমালিকানা মানুষসহ ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে ।
৬. ডাক্তারি , প্রকৌশল ও আইন ব্যবসায়ের মতাে ক্ষুদ্র আকারের পেশাভিত্তিক ব্যবসায় এবং প্রত্যক্ষ সেবাধর্মী ব্যবসায় যেমন লন্ড্রি , সেলুন , বিউটি পার্লার ইত্যাদি সাধারণত একমালিকানার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে ।
৭ . অনেক পণ্য আছে যেগুলাের চাহিদা ক্রেতাদের পরিবর্তনশীল রুচি , আগ্রহ ও ফ্যাশনের উপর নির্ভরশীল । সে সকল পণ্যের ব্যবসায়ের ক্ষেত্রেও একমালিকানা ব্যবসায় বেশি উপযুক্ত । যেমন - দরজির দোকান ।
৮.যে সব ব্যবসায় প্রদত্ত পণ্য - দ্রব্য ও সেবার সাথে ব্যক্তির বা মালিকের নৈপুণ্য , শিল্পকর্ম ও সুনাম জড়িত থাকে সেগুলাের জন্য একমালিকানা ব্যবসায় বেশি উপযুক্ত । যেমন - চিত্রকর্মের দোকান , ছবি তােলার দোকান , স্বর্ণকারের দোকান , ফার্নিচারের দোকান , মিষ্টির দোকান ।
৯. কৃষিজাত পণ্য ও সহায়ক পণ্যের ব্যবসার জন্যও একমালিকানা ব্যবসায় বেশি উপযুক্ত । যেমন- ধান ব্যবসায় , আলু ব্যবসায় ও কাঁচামালের ব্যবসায় ।
১০. স্থানীয় বা জাতীয় পর্যায়ের বই , খাতা - পত্ৰ , পত্রিকা ইত্যাদি প্রকাশনা ব্যবসায়ের জন্য একক
মালিকানাভিত্তিক ব্যবসায় বেশি উপযুক্ত ।


ঘ ) নং প্রশ্নের উত্তরঃ

সাধারণভাবে একজন ব্যক্তির মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত , পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত ব্যবসায়কে একমালিকানা ব্যবসায় বলে । একক মালিকানায় পৃথিবীতে সর্বপ্রথম ব্যবসায় কার্যক্রম শুরু হয়েছিল । এ জন্য এটিকে সবচেয়ে প্রাচীনতম
ব্যবসায় সংগঠন বলা হয় । বর্তমান প্রেক্ষাপটে বলা যায় , মুনাফা অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে যখন কোনাে ব্যক্তি নিজ দায়িত্বে মূলধন যােগাড় করে কোনাে ব্যবসা গঠন ও পরিচালনা করে এবং উক্ত ব্যবসায়ে অর্জিত সকল লাভ নিজে ভােগ করে বা ক্ষতি হলে নিজেই তা বহন করে , তখন তাকে একমালিকানা ব্যবসায় বলে । উপরােক্ত বিশ্লেষণ থেকে বােঝা যাচ্ছে যে , ব্যক্তিগত উদ্যোগ , স্বাধীনচেতা মনােভাব , স্বল্প পুঁজি ও স্বল্প শ্রম বিনিয়ােগ করে একমালিকানা ব্যবসায় যে কোনাে সময় যে কোনাে স্থানে শুরু করা যায় । এ ব্যবসায় আইনি জটিলতামুক্ত এবং এতে ঝুঁকিও কম । অন্যদিকে একমালিকানা ব্যবসায় ভােক্তাদের অত্যন্ত নিকটে থেকে তাদের পছন্দ ও রুচি অনুযায়ী পণ্য বা সেবা প্রদান করতে পারে । ফলে প্রাচীন ব্যবসায় সংগঠন হওয়া সত্ত্বেও একমালিকানা ব্যবসায়ের উপযুক্ত ক্ষেত্র যেমন ব্যাপক , তেমনি সকলের নিকট এ ব্যবসায়ের জনপ্রিয়তাও বেশি ।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক , সামাজিক , রাজনৈতিক , সাংস্কৃতিক অবস্থা বিবেচনায় একমালিকানা ব্যবসায় সবচেয়ে বেশি উপযােগী । যার কারণে বাংলাদেশের বর্তমান মােট ব্যবসায় সংগঠনের শতকরা আশি ভাগেরও বেশি একমালিকানার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত । তবে দেশে
বিরাজমান বেকারত্ব দূরীকরণে কর্মসংস্থানের নতুন ক্ষেত্র তৈরির লক্ষ্যে যুবসমাজকে একমালিকানা ব্যবসায়ে উদ্বুদ্ধ করতে ঋণ পাওয়া সহজ করাসহ আরাে সরকারি সহযােগিতা প্রয়ােজন।

Leave a Comment