এইচএসসি ডিপ্লোমা ইন কমার্স ১১শ শ্রেণি ব্যাংকিং ও বিমা ৪র্থ সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট সমাধান 2021|HSC Diploma in Commerce 11th Class Banking and Insurance 4th Week Assignment Solution 2021


অ্যাসাইনমেন্ট : ব্যাংক হিসাব সম্পর্কিত ধারণা এবং গ্রাহক ব্যাংকারের সাথে সম্পর্ক নির্ণয় কর।
শিখনফল/বিষয়বস্তু :
বিভিন্ন প্রকার ব্যাংক হিসাব এর ধারণা ব্যাখ্যা
করতে পারবে
ব্যাংকে টাকা জমা ও উত্তোলন পদ্ধতির ধারণা
ব্যাখ্যা করতে পারবে
কিভাবে বিভিন্ন প্রকার ব্যাংক হিসাব খােলা ও
বন্ধ করা যায় তা বর্ণনা করতে পারবে
নির্দেশনা (সংকেত/ ধাপ/ পরিধি):
ব্যাংক হিসাবের শ্রেণিবিভাগ আলােচনা বর্ণনা
করতে হবে।
ব্যাংকে টাকা জমা ও উত্তোলন পদ্ধতি বর্ণনা
করতে হবে
ব্যাংক হিসাব খােলা ও বন্ধের পদ্ধতি ব্যাখ্যা
করতে হবে
চলতি, সঞ্চয়ী ও স্থায়ী হিসাবের সুবিধা অসুবিধা
আলােচনা করতে হবে

২০২১ সালের এইচএসসি ডিপ্লোমা ইন কমার্স ১১শ শ্রেণি ব্যাংকিং ও বিমা ৪র্থ সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট সমাধান 2021

ব্যাংক হিসাবের শ্রেণিবিভাগ আলােচনা বর্ণনা করতে হবে।
প্রথমেই আমরা জেনে নেই ব্যাংক একাউন্ট কত প্রকার ও কি কি এ সম্পর্কে, ব্যাংক একাউন্ট সাধারণত চার ধরনের হয়ে থাকে। এগুলো হলো-
  • চলতি হিসাব বা কারেন্ট একাউন্ট (current account)
  • সঞ্চয়ী হিসাব বা সেভিংস একাউন্ট (savings account)
  • ডিপিএস- ডিপোজিট পেনশন স্কিম (DPS - deposit pension scheme)
  • এফডিআর - ফিক্সড ডিপোজিট রিসিট (FDR- fixed deposit receipt)
১:চলতি হিসাব বা কারেন্ট একাউন্ট (current account) - সাধারণত চলতি হিসাব বা কারেন্ট একাউন্ট খোলা হয়ে থাকে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের জন্য। যেখানে নিয়মিত লেনদেন হয়ে থাকে। আপনি চলতি হিসাব বা কারেন্ট একাউন্টে প্রতিদিন যতবার খুশি ততবার টাকা জমা এবং
উত্তোলন করতে পারবেন এক্ষেত্রে আপনার কোন বিধি- নিষেধ থাকবে না। তবে চলতি হিসাবের ক্ষেত্রে আপনার একাউন্টে যত টাকা থাকুক না কেন এর উপর আপনি কোন লভ্যাংশ পাবেন না। পক্ষান্তরে আপনাকে বছর শেষে নির্দিষ্ট পরিমাণ সার্ভিস চার্জ প্রদান করতে হবে!

২: সঞ্চয়ী হিসাব বা সেভিংস একাউন্ট (savings account)- সঞ্চয়ী হিসাব বা সেভিংস একাউন্ট মূলত ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য খোলা হয়। এখানে আপনি টাকা সঞ্চয় করতে পারবেন এবং আপনার সঞ্চিত টাকার উপর আপনি বছরে
নির্দিষ্ট পরিমাণে লভ্যাংশ পাবেন। মূলত ব্যাংক ভেদে লভ্যাংশের পরিমাণে হেরফের হতে পারে তবে সকল ব্যাংক- প্রতিষ্ঠান ৪-৬% লভ্যাংশ জমা টাকার উপরে প্রদান করে থাকে। এবং ব্যাংক ভেদে আপনি দিনে বা মাসে কতবার লেনদেন করতে পারবেন তা নির্ধারিত থাকে সেভিংস
একাউন্টে।

৩: ডিপিএস- ডিপোজিট পেনশন স্কিম (DPS - deposit pension scheme) - ডিপিএস হচ্ছে এমন একটি ব্যাংকিং সুবিধা যেখানে আপনি প্রতিমাসে বা বছরে অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময় পরপর একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা রাখলে নির্ধারিত
সময় পরে আপনি আপনার জমা টাকা এবং লভ্যাংশ সহ এক বারে ফেরত পাবেন। এবং এ ব্যাংক একাউন্টে লেনদেন এর জন্য উপযুক্ত নয় এখানে শুধুমাত্র আপনার টাকা জমা রাখতে পারবেন এবং নির্দিষ্ট সময়ে শেষেই তুলতে পারবেন।

৪: এফডিআর - ফিক্সড ডিপোজিট রিসিট (FDR- fixed deposit receipt)- এফডিআর বা ফিক্স ডিপোজিট হচ্ছে এমন একটি ব্যাংকিং সুবিধা যেখানে আপনি একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে সেখানে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ একবারে জমা রাখবেন। এবং নির্ধারিত সময়ে পরে সুদসহ আসল আপনাকে তারা ফেরত দিয়ে দেবে। ব্যাংক ভেদে পাঁচ থেকে দশ বছরে তারা দ্বিগুণ টাকা ফেরত দিয়ে থাকে। এবং এটি ও লেনদেনের জন্য ব্যবহার করতে পারবেন না।

ব্যাংকে টাকা জমা ও উত্তোলন পদ্ধতি বর্ণনা করতে হবে



ব্যাংক হতে টাকা উত্তোলন পদ্ধতি
বিভিন্ন হিসাবের টাকা উত্তোলনের বিভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়, যা নিুে আলোচনা করা হলোঃ 

ক) চলতি হিসাবঃ এই হিসাব থেকে চেকের মাধ্যমে কার্য দিবসে যতোবার খুশি টাকা উত্তোলন করা যায়। এজন্য ১০, ২৫ বা ৫০ পাতার চেকবহি সরবরাহ করা হয়।
খ) সঞ্চয়ী হিসাবঃ চেকসমেত সঞ্চয়ী হিসাব থেকে চেকের মাধ্যমে এবং চেক বিহিন সঞ্চয়ী হিসাব থেকে অর্থ উত্তোলনের নির্ধারিত রসিদের সপ্তাহে মাত্র দুই বার টাকা উত্তোলন করা যায়। চেক সমেত সঞ্চয়ী হিসাব থেকে টাকা উত্তোলনের জন্য ১০ পাতার চেক বহি সরবরাহ করা হয়। বর্তমানে চেক বিহীন সঞ্চয়ী হিসাবের অস্তিত্ব নেই।
গ) স্থায়ী হিসাবঃ স্থায়ী হিসাবে সাধারণত নির্দিষ্ট
মেয়াদের জন্য টাকা জমা রাখা হয় এবং উক্ত সময় শেষ না হলে তা থেকে অর্থ উত্তোলন করা যায় না। তবে জরুরী প্রয়োজনে মেয়াদ শেষের পূর্বেও বিশেষ ব্যবস্থায় এই হিসাব থেকে টাকা উত্তোলন করা যায়। এরূপ ক্ষেত্রে সুদ বা মুনাফা পাওয়া যায় না অথবা কম পাওয়া যায়। চলতি ও
সঞ্চয়ী হিসাব থেকে অর্থ উত্তোলনের জন্য আমানতকারীকে নির্ধারিত চেক বহিতে হিসাব নাম্বার, তারিখ, প্রাপকের নাম (নিজেই প্রাপক হলে নিজ কথাটি লিখতে হয়) ও টাকার পরিমাণ (অংকে ও কথায়) লিখে স্বাক্ষর করতে হয় এবং চেকের উল্টো পিঠেও দুটি স্বাক্ষর করতে হয়। অতঃপর চেকটি নির্ধারিত কাউন্টারে জমা দিলে
দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারী তা গ্রহণ করে একটি পিতলের ‘টোকেন' প্রদান করেন এবং চেকের পেছনে টোকেন নাম্বার লিখে চেকটি দৈনিক রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করেন। এই রেজিস্টারে তারিখ, চেক নং, টাকার পরিমাণ ইত্যাদি লিখে তিনি তা খতিয়ান শাখায় বা কম্পিউটার সিস্টেম
ব্যাংকিং হলে কম্পিউটার শাখায় প্রেরণ করেন।

এই পর্যায়ে চেকে লিখিত টাকার পরিমাণ আমানতকারীর হিসাব থেকে বিয়োগ বা ডেবিট করে যদি স্বাক্ষর ঠিক থাকে এবং স্থিতি যথেষ্ট পরিমাণ থাকে এবং একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নমুনা স্বাক্ষরের সাথে চেকের স্বাক্ষর মিলিয়ে দেখেন। দুই স্থানের দুটি স্বাক্ষরের মধ্যে কোন গরমিল না থাকলে তিনি চেকটি পাস করেন এবং চেকে উলি−খিত টাকা প্রদানের জন্য চেকটি ক্যাশ কাউন্টারে প্রেরণ করেন। এই অনুষ্ঠানিকতা শেষে আমানতকারী বা প্রাপক তার নিকট রক্ষিত টোকেনটি ক্যাশিয়ারের নিকট জমা দিলে ক্যাশিয়ার তাকে চেকে উলি−খিত টাকা পরিশোধ করেন। কখনো কখনো এই পর্যায়ে ক্যাশিয়ার চেকের পেছনে প্রাপকের আরো দুটি স্বাক্ষর গ্রহণ করেন। প্রকৃত প্রাপক সম্পর্কে সন্দেহ সৃষ্টি হলেই সাধারণ ক্যাশিয়ার এরূপ করে থাকে।

ব্যাংক হিসাব খােলা ও বন্ধের পদ্ধতি ব্যাখ্যা করতে হবে

কোথায় খুলবেন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট?
প্রথমেই আপনার ঠিক করা দরকার, কোন ব্যাংকে আপনি অ্যাকাউন্ট খুলবেন। সরকারি বা বেসরকারি যেকোনো ব্যাংকেই আপনি সহজে অ্যাকাউন্ট খুলে ফেলতে পারেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে সরকারি-বেসরকারি
মিলিয়ে ৪৭টি এরকম ব্যাংক আছে। এ ব্যাংক গুলোকে তফসিলী ব্যাংক বলা হয়। বলে রাখা ভালো, গ্রামীণ ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক, কো-অপারেটিভ ব্যাংক ইত্যাদি নামের প্রতিষ্ঠানগুলোর কিন্তু মোটেও তফসিলী ব্যাংক নয়! অর্থাৎ এসব ব্যাংকে আপনি অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন না। 

কোন ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলবেন সেটা একান্তই আপনার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের ব্যাপার। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকের শাখা থেকে আপনার বাসা কিংবা কর্মস্থলের দূরত্ব, অনলাইন সুবিধা, কার্ড সুবিধা, দেশের বিভিন্ন জায়গায় শাখার বিস্তৃতি, সাপ্তাহিক বন্ধের দিন ইত্যাদি বিবেচনায় রাখা দরকার। তাছাড়া ব্যাংক চার্জ, ইন্টারেস্ট ও সার্ভিস কোয়ালিটির দিকটাও খেয়াল রাখতে হবে। আবার আপনি যদি সুদমুক্ত ব্যাংকিং চান, সেক্ষেত্রে ইসলামি ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। এ ক্ষেত্রে তাদের নিয়মনীতি গুলো ভালো মতো পড়ে, বুঝে-শুনে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
ইসলামি ব্যাংকগুলোতেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে সুদ সংশ্লিষ্ট কারবার থাকে, এসব বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

ব্যাংক ফর্মের রকমফের

বাংলাদেশে সাধারণত দুই রকমের ব্যাংক ফর্ম পাওয়া যায়:
১। ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট ফর্ম,
২। প্রাতিষ্ঠানিক/ অব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট ফর্ম।


১। ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট ফর্ম: নাম দেখেই বোঝা যাচ্ছে, এটি মূলত ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহৃত হবে এমন অ্যাকাউন্ট। যে অ্যাকাউন্টের শিরোনাম, অর্থাৎ টাইটেল অব অ্যাকাউন্ট কোনো ব্যক্তির নামে হয়, সেগুলো ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট হিসেবে বিবেচিত। এই ধরনের ফর্মের মাধ্যমে এক বা একাধিক ব্যক্তির নামে অ্যাকাউন্ট খোলা যাবে।

২। প্রাতিষ্ঠানিক অ্যাকাউন্ট ফর্ম: এই ধরনের ফর্মে
ব্যাংক অ্যাকাউন্টের শিরোনাম বা টাইটেল অব অ্যাকাউন্ট কোনো প্রতিষ্ঠানের নামে হয়। এ অ্যাকাউন্ট গুলো অব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট হিসেবে গণ্য হবে।


ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সাতকাহন
ব্যাংকে নানা ধরনের অ্যাকাউন্ট রয়েছে। ব্যাংক ভেদে এই নিয়মের কিছুটা তারতম্য হতে পারে, তবে সাধারণ কাঠামো মোটামুটি সব ব্যাংকেই একই। ব্যাংক অ্যাকাউন্টকে মোটা দাগে কয়েকভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যেতে পারে:

১। চলতি হিসাব বা কারেন্ট অ্যাকাউন্ট: প্রধানত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য কারেন্ট অ্যাকাউন্ট সব চেয়ে বেশি উপযোগী। কারেন্ট অ্যাকাউন্ট থেকে দিনে যত বার খুশি তত বার টাকাপয়সা লেনদেন করা যায়। যেকোনো সময় টাকা তোলা যায় এবং জমা রাখা যায়। এ ক্ষেত্রে কোনো সুদ
প্রদান করা হয় না। বরং বছর শেষে কিছু পরিমাণ টাকা সার্ভিস চার্জ হিসেবে কেটে রাখা হয়।

২। সঞ্চয়ী হিসাব বা সেভিংস অ্যাকাউন্ট: যে কেউ এ ধরনের অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে। সপ্তাহে একবার বা দুইবার টাকা তোলা যায় এবং জমা রাখা যায়। জমাকৃত টাকার উপর বার্ষিক ৪% থেকে ৬% হারে সুদ প্রদান করা হয়। যাদের সব
সময় টাকা লেনদেনের প্রয়োজন হয় না, তাদের জন্য এই অ্যাকাউন্ট উপযোগী। আর নয় সময় নষ্ট করা! কারেন্ট অ্যাকাউন্ট মূলত ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে। সাধারণ চাকরিজীবী বা ছাত্রদের জন্য এটি নয়। তবে কেউ যদি সুদ মুক্ত ব্যাংকিং সুবিধা পেতে চান, সেক্ষেত্রে খানিকটা চেষ্টা তদবির করে ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টও কারেন্ট অ্যাকাউন্ট হিসেবে খোলা যেতে পারে, যদিও ব্যাংকগুলো সাধারণত এ ব্যাপারে তেমন একটা আগ্রহী থাকে না।

৩। ডিপিএস (ডিপোজিট পেনশন স্কিম) অ্যাকাউন্ট: বলা হয়ে থাকে, ভবিষ্যতের ভাবনা ভাবাই জ্ঞানীর কাজ। ভবিষ্যতের জন্য আমাদের প্রত্যেকেরই নিয়মিত সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত। এছাড়া কোনো বিশেষ পরিকল্পনা অনুযায়ী টাকা সঞ্চয় করতে হয় অনেক সময়। তাই প্রতি মাসে খরচ বাদ দিয়ে যতটুকু বাকি থাকে, তা সঞ্চয় করে রাখা দরকার। আর টাকা ঘরে রাখলে সেটার নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা তো থেকেই যায়। এজন্য ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলে টাকা সঞ্চয় করা যেতে পারে। ডিপিএস অ্যাকাউন্ট মূলত এ উদ্দেশ্যেই ব্যবহৃত হয়।

যে কোনো ব্যাংকে ডিপিএস অ্যাকাউন্ট খুলে সেখানে নিয়মিত টাকা জমা রাখা যায়। যে কোনো ব্যক্তি এমনকি প্রতিষ্ঠানও এ ধরনের অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে। এক্ষেত্রে, প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট অংকের টাকা জমা রাখতে হয়। ব্যাংক ভেদে সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ মাসিক কিস্তির পরিমাণ ভিন্ন ভিন্ন হয়। সাধারণত ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০০০ টাকা পর্যন্ত মাসিক কিস্তি দেয়া যায়। এ ধরনের অ্যাকাউন্ট ৫ বছর, ১০ বছর বা ২০ বছর
মেয়াদী হয়। সাধারণত, ৫ বছর মেয়াদী ডিপিএসের জন্য বার্ষিক ১০%, আর ১০ ও ২০ বছর মেয়াদী ডিপিএসের জন্য বার্ষিক ১৫% হারে সুদ প্রদান করা হয়। তবে ব্যাংক ভেদে এ সুদের পরিমাণ ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে।

৪। এফডিআর (ফিক্স ডিপোজিট রিসিট) অ্যাকাউন্ট: পোশাকি সংজ্ঞা দিতে গেলে, ফিক্স
ডিপোজিট রিসিট বা এফডিআর হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট অংকের টাকা কোনো নির্দিষ্ট সময়ের জন্য জমা রাখা, যার সুদ আপনি মাসিক, পাক্ষিক, অর্ধবার্ষিক কিংবা বার্ষিক হিসেবে তুলতে পারবেন। এই হিসাব খোলার জন্য বড় অংকের
টাকা জমা দিতে হয়। সাধারণত ২৫ হাজার টাকার কমে এফডিআর অ্যাকাউন্ট করা যায় না। এক্ষেত্রে সুদের পরিমাণ বার্ষিক প্রায় ৯% থেকে ১২% পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে আপনার এফডিআর প্রয়োজনের সময় চাইলে ভেঙে ফেলতে পারবেন, যদিও তাতে কিছুটা ক্ষতি হতে পারে। আবার চাইলে এই এফডিআর অ্যাকাউন্টের পরিবর্তে ঋণও নিতে পারবেন।
কাগজের কারবার
বিভিন্ন ধরনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে ভিন্ন ভিন্ন
কাগজপত্র ও তথ্যের প্রয়োজন হয়। কিন্তু সাধারণত প্রায় সব ধরনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে কিছু কাগজপত্রের অবশ্যই দরকার পড়ে। চলুন জেনে নেওয়া যাক, একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে এ রকম কী কী কাগজপত্র লাগবে।
১। পূরণকৃত ফর্ম: আপনার পছন্দের শাখা থেকে সংগ্রহ করুন। যদি একাধিক ব্যক্তির নামে (যৌথ) হিসাব হয় তবে ফর্মের ’ব্যক্তি সংক্রান্ত তথ্যাবলী’ প্রয়োজনীয় সংখ্যক ফটোকপি করে নিন।
২. স্পেসিমেন সিগনেচার কার্ড: অনেক ব্যাংক এটি অ্যাকাউন্ট খোলার ফর্মের সাথে দিয়ে দেয়। এতে ব্যাংক অফিসারের সামনে অ্যাকাউন্ট হোল্ডার স্বাক্ষর করবেন।
৩. পরিচয়দানকারী: সাধারণত ঐ ব্যাংকের কোন গ্রাহক পরিচয়দানকারী হবেন। কারেন্ট অ্যাকাউন্ট খুলতে হলে কেবল অন্য কোনো কারেন্ট অ্যাকাউন্ট হোল্ডার গ্রাহক পরিচয়দানকারী হবেন। পরিচয়দানকারী অ্যাকাউন্ট ফর্মের নির্ধরিত স্থানে নমুনা স্বাক্ষর, নাম, ঠিকানা, অ্যাকাউন্ট নম্বর ইত্যাদি লিখবেন ও অ্যাকাউন্ট পরিচালনাকারীর
ফটোগুলি সত্যায়িত করবেন। তিনি অ্যাকাউন্ট খোলার দিন উপস্থিত না হলেও চলবে।
৪. ফটো: অ্যাকাউন্ট পরিচালনাকারী প্রত্যেক ব্যক্তির ২ কপি করে পাসপোর্ট সাইজ ফটো লাগবে। ফটোগুলো পরিচয়দানকারী কর্তৃক সত্যায়িত হতে হবে। নমিনীর ১ কপি ছবি লাগবে যা হিসাব পরিচালনাকারী কর্তৃক সত্যায়িত হবে।
৫. নমিনী: কেবলমাত্র ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে একজন নমিনী প্রদান করা যাবে এবং করতেই হবে। প্রাতিষ্ঠানিক অ্যাকাউন্টে নমিনী দেয়া যায় না। নমিনীর স্বাক্ষর প্রয়োজন নেই। তবে নাম-ঠিকানা দিতে হবে। নমিনীর যেকোন একটি পরিচয়পত্র দিলে ভালো হয়।

৬. টাকা: নির্ধরিত জমা স্লিপ পূরণ করে টাকা জমা দিতে হবে। সঞ্চয়ী ও চলতি হিসাবের জন্য ব্যাংক ভেদে ১০০০ থেকে ২০০০ টাকা লাগবে। ডিপিএস এর জন্য কিস্তি সমপরিমাণ ও এফডিআর এর জন্য এফডিআর সমপরিমাণ টাকা লাগবে।
৭. অন্যান্য কাগজপত্র: অ্যাকাউন্ট পরিচালনাকারী প্রত্যেক ব্যক্তির পরিচয়পত্রের ফটোকপি লাগবে। এক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র ও কমিশনার/ মেয়র/ চেয়ারম্যান কর্তৃক প্রদত্ত নাগরিক সনদ সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য। উক্ত পরিচয়পত্রের অনুপস্থিতিতে পাসপোর্ট, ড্রাইভিং
লাইসেন্স, জন্ম সনদ, চাকরি পরিচয়পত্র, স্টুডেন্ট আইডি কার্ড ইত্যাদি থেকে যেকোনো দুইটি উপস্থাপন করতে হবে।

বিবিধ
সকল প্রকার প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রে যা যা অতিরিক্ত লাগবে:
১। প্রত্যেক অ্যাকাউন্ট পরিচালনাকারীর নাম-পদবীসহ সিল।
২। ট্রেড লাইসেন্স।
৩। প্রতিষ্ঠানটি একক মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান না হলে রেজ্যুলেশন লাগবে যাতে থাকে নির্দিষ্ট ব্যাংকের নির্ধারিত শাখায় অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত ও অ্যাকাউন্টটি কে পরিচালনা করবে তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত। রেজ্যুলেশনে পর্ষদ/ বোর্ড/ গভর্নিং বডির সদস্যরা স্বাক্ষর করবেন।

উপরোক্ত কাগজপত্র ছাড়াও মাঝে মাঝে বিভিন্ন
প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন কাগজপত্র ও তথ্যাবলির প্রয়োজন পড়ে। যেমন, পার্টনারশিপ ফর্ম, সমিতির গঠনতন্ত্র ও রেজিস্ট্রেশন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনুমোদনপত্র, এনজিও ব্যুরো হতে লাইসেন্স, প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির জন্য সার্টিফিকেট অব ইনকর্পোরেশন, মেমোরেন্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশন, আর্টিকেল অব অ্যাসোসিয়েশন, পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির জন্য সার্টিফিকেট অব ইনকর্পোরেশন, মেমোরেন্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশন, আর্টিকেল অব অ্যাসোসিয়েশন, সার্টিফিকেট অব কমেন্সমেন্ট অব বিজনেস ইত্যাদি।

ভুলে গেলে চলবে না
১. সংযুক্ত সকল কাগজের মূল কপি সাথে রাখবেন।
২. অ্যাকাউন্ট খোলার দিন ও প্রথম বার চেক বই উঠানোর দিন আপনাকে অবশ্যই নিজে যেতে হবে।
৩. আপনার বর্তমান ঠিকানায় ব্যাংক থেকে চিঠি আসতে পারে। বিষয়টি খেয়াল রাখবেন।
৪. চেক বই তোলার জন্য ওই দিনই নিধারিত ফর্মে আবেদন করবেন।
৫. জমা স্লিপ ও হিসাব নাম্বার সংরক্ষণ করুন।
৬. ব্যাংকের ডাটাবেজে আপনার নামের বানান সঠিকভাবে তোলা হল কিনা চেক করে নিন।
৭. ডেবিট কার্ড নেয়ার জন্য আলাদাভাবে আবেদনের প্রয়োজন থাকলে করে নিন।

বর্তমান সময়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না থাকলে অর্থনৈতিক ব্যাপার-স্যাপারে পরমুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হয় প্রায়ই। কী দরকার এত ঝক্কি পোহানোর? তার চেয়ে নিজেই খুলে ফেলুন
না একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট! একটু-আধটু ঝামেলা আর অল্প একটু সময় হয়তো লাগবে, তবে যে সুবিধা পাবেন সেটা কিন্তু মোটেও অল্প একটু নয়!

হিসাব বন্ধ করার পদ্ধতি : কোন মক্কেল তার ব্যাংক হিসাব (চলতি বা স্থায়ী) বন্ধ করতে আগ্রহী হলে ব্যাংকের ম্যানেজার বরাবর সাদা কাগজে আবেদন করতেহয় এবং সাথে পাস বুক ও অব্যবহৃত চেকবইটি ফেরৎ দিতে হয়। একই
সাথে আমানতকারীর হিসাবও খতিয়ান পৃষ্ঠায় ‘হিসাব বন্ধ' লিখে রাখে। অবশ্য বিভিন্ন কারণে এমনিতেই হিসাব বন্ধ হয়ে যায়: যেমন, মক্কেলের মৃত্যু হলে, সে পাগল বা দেউলিয়া হলে, হিসাব বন্ধ করার নোটিশ দিলে, ৩য় ব্যক্তির নিকট হিসাবের অর্থ হস্তান্তর করলে, আদালতের নিষেধাজ্ঞা জারি হলে ইত্যাদি।

চলতি, সঞ্চয়ী ও স্থায়ী হিসাবের সুবিধা অসুবিধা আলােচনা করতে হবে

স্থায়ী হিসাব কাকে বলে?
যে হিসাবে একটা নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য অর্থ জমা রাখা হয় এবং এর মধ্যে নিমানুযায়ী অর্থ উত্তোলন করা যায় না তাকে স্থায়ী হিসাব বলে। স্থায়ী হিসাবকে মেয়াদি আমানত হিসাবও বলা হয়ে থাকে। শেখর ও শেখর এর মতে, “Deposit accounts undertaking to repay the amounts on the expiry of a specified period, or subject to a notice.”
“অর্থাৎ আমানত হিসাব হলাে এমন হিসাব যেখানে নির্দিষ্ট সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর বা যথাযথ নােটিশ প্রদানের পর জমাকৃত অর্থ ফেরৎ দেয়া হয়।

স্থায়ী হিসাবের সুবিধা ও অসুবিধাসমূহ
স্থায়ী হিসাব খোলায় বেশ কিছু সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে। নিম্নে স্থায়ী হিসাব খোলার সুবিধা ও অসুবিধাসমূহ তুলে ধরা হলো-

স্থায়ী হিসাবের সুবিধাসমূহ
স্থায়ী হিসাব খোলায় বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। নিম্নে স্থায়ী হিসাব খোলার সুবিধাসমূহ তুলে ধরা হলো-
✓ একটি নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য অর্থ জমা রেখে এই হিসাব খুলতে হয়। ফলে বাধ্যতামূলকভাবে আমানতকারীর সঞ্চয় সৃষ্টি হয়।
✓ মেয়াদের পরিমাণ যত বেশি হয় সুদের হারও তত বেশি হয়।
✓ সর্বোচ্চ মেয়াদ পার হওয়ার পরও আমানত জমা রাখলে জমাকৃত অর্থের উপরে সর্বোচ্চ সুদের হারের চেয়েও বেশি হারে সুদ দেওয়া হয়।
✓ মেয়াদ শেষে সুদসহ আমানতের মােট অর্থ পুনঃরায় নির্দিষ্ট মেয়াদে আমানত রাখা যায়।


স্থায়ী হিসাবের অসুবিধাসমূহ স্থায়ী হিসাব খোলায় বেশ কিছু সুবিধার পাশাপাশি অসুবিধাও রয়েছে। নিম্নে স্থায়ী হিসাব খোলার
অসুবিধাসমূহ তুলে ধরা হলো-
✓ সব ধরনের লােকের পক্ষে এই হিসাব খােলা সম্ভব হয় না।
✓ এই হিসাব খুলতে কমপক্ষে ১০০০ টাকা জমা দিতে হয়।
✓ হিসাব খােলার সময় একবারেই সম্পূর্ণ টাকা জমা দিতে হয়।
✓ মেয়াদ শেষে চুক্তি নবায়ন না করলে কোন সুদ পাওয়া যায় না।
✓ স্থায়ী হিসাবের মােট মুনাফা থেকে একটি নির্দিষ্ট হারে সরকারী লেভী (levy) হিসাবে কেটে রাখা হয়।
✓ মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে টাকা উত্তোলন করা যায় না

চলতি আমানত হিসাবের সুবিধা ও অসুবিধাসমূহ

সুবিধাসমূহ

১. ব্যাংক চলাকালীন সময়ে এই হিসাব হতে যতবার খুশি টাকা তোলা যায়।
২. অনেক সময় এই হিসাবের কিছু মুনাফাও দেওয়া হয়।
৩. এই হিসাবের মাধ্যমে নগদ টাকা লেনদেনের ঝুঁকি কমানো যায়। কারণ, আমানতকারী চেকের মাধ্যমে দেনা পরিশোধ করতে পারে।
৪. এই হিসাব মক্কেলদের বিনা খরচে খুলতে দেওয়া হয়।
৫. এই হিসাব থেকে জমাতিরিক্ত ঋণ নেওয়া যায়।
৬. এই হিসাবে অন্য কোন ব্যাংকের চেক, বিল ইত্যাদি জমা দিয়ে আমানতকারী অর্থ সংগ্রহ করতে পারে।
৭. এই হিসাবের মাধ্যমে বৈদেশিক বাণিজ্যের লেনদেনও করা যায়।

অসুবিধাসমূহ
১. একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা দিয়ে এই হিসাব খুলতে হয়।
২. একটা নির্দিষ্ট ন্যূনতম পরিমাণ টাকা সবসময়ই হিসাবে রাখতে হয়।
৩. এই হিসাব বিশেষ কিছু ক্ষেত্র ছাড়া কোন প্রকার সুদ দেয় না।
৪. সমাজের সকল মানুষের জন্য এই হিসাব সুবিধাজনক নয়।


সঞ্চয়ী হিসাবের সুবিধা ও অসুবিধাসমূহ

সুবিধাসমূহ
১. অল্প টাকা জমা দিয়ে সঞ্চয়ী হিসাব খোলা যায়।
২. এই হিসাবে সর্বাধিক ১০ লক্ষ্য টাকা পর্যন্ত জমা উপরে সুদ দেওয়া হয়। এর বেশি জমা করলে তার উপরে কোন সুদ দেওয়া হয় না।
৩. ব্যাংক খোলা থাকা অবস্থায় যতবার খুশি টাকা জমা দেওয়া যায়।
৪. চেক কেটে টাকা উত্তোলন করা যায়।
৫. উদ্বৃত্ত টাকার উপরে সুদ দেওয়া হয়। উল্লেখ্য সর্বোচ্চ জমার অতিরিক্ত টাকার উপরে সুদ দেওয়া হয় না।


অসুবিধাসমূহ
১. একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা না দিয়ে হিসাব খোলা যায় না।
২. এই হিসাবে সবসময় একটি নির্দিষ্ট ন্যুনতম পরিমাণ অর্থ জমা রাখতে হয়।
৩. হিসাব খুলতে বিভিন্ন ধরনের জটিলতার সম্মুখীন হতে হয়। যেমন - ব্যাংকের অতীত কোন হিসাবধারী সনাক্তকরণ সংগ্রহ করতে হয়, বিভিন্ন ধরনের দলিলপত্র জমা দিতে হয় ইত্যাদি।
৪. সপ্তাহে দুই বারের বেশি টাকা তোলা যায় না।
৫. এই হিসাবের মাধ্যমে কোন প্রকার ঋণের সুবিধা দেওয়া হয় না।
৬. একবারে বেশি পরিমাণে টাকা তুলতে গেলে ব্যাংককে ৭ দিন আগে নোটিশ দিতে হয়।
৭. একজন ব্যক্তি কোন একটি শাখায় কেবলমাত্র একটাই সঞ্চয়ী হিসাব খুলতে পারে।
৮. এই হিসাবে প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট হারে আবগারী শুল্ক (বীপরংব ফঁঃু) কেটে রাখা হয়।
৯. এই হিসাবে প্রাপ্ত মুনাফা থেকে বাংলাদেশে ১০% হারে উৎসে কর কর্তন করা হয়।

Leave a Comment