এইচএসসি ডিপ্লোমা ইন কমার্স ১২শ শ্রেণি ব্যবসায় সংগঠন ৪র্থ সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট সমাধান 2021|HSC Diploma in Commerce 12th Class Business Organization 4th Week Assignment Solution 2021


অ্যাসাইনমেন্ট : ব্যবসায়ের উপর প্রভাব বিস্তারকারী বিভিন্ন পরিবেশ বিশ্লেষণ কর?
শিখনফল/বিষয়বস্তু :
ব্যবসায় পরিবেশের ধারণা ব্যাখ্যা করতে পারবে
ব্যবসায় পরিবেশের বিভিন্ন উপাদান বর্ণনা করতে
পারবে
ব্যবসায়ের উপর পরিবেশের উপাদানগুলোর প্রভাব বিশ্লেষণ করতে পারবে
বাংলাদেশে ব্যবসায়ের পরিবেশ উন্নয়নের পথে
সমস্যাগুলো শনাক্ত করতে পারবে।
নির্দেশনা (সংকেত/ ধাপ/ পরিধি):
ব্যবসায় পরিবেশের ধারণা ব্যাখ্যা করতে হবে
ব্যবসায় পরিবেশের বিভিন্ন উপাদান বর্ণনা করতে
হবে
ব্যবসায়ের উপর পরিবেশের উপাদানগুলোর প্রভাব বিশ্লেষণ করতে হবে
বাংলাদেশে ব্যবসায়ের পরিবেশ উন্নয়নের পথে
সমস্যাগুলো শনাক্ত করতে হবে।

২০২১ সালের এইচএসসি ডিপ্লোমা ইন কমার্স ১২শ শ্রেণি ব্যবসায় সংগঠন ৪র্থ সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট সমাধান 2021


ব্যবসায় পরিবেশের ধারণা ব্যাখ্যা করতে হবে

ব্যবসায়ের যেসকল উপাদান বা অবস্থা ব্যবসায়
কার্যাবলীকে প্রভাবিত করে সেসব উপাদানের সমষ্টিকে ব্যবসায় পরিবেশ বলে। ব্যবসায়ে প্রভাববিস্তারকারী প্রাকৃতিক, অ-প্রাকৃতিক উপাদানের সমন্বয়ে ব্যবসায় পরিবেশ গঠিত হয়।

যেসব পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম সম্পন্ন করে, তাকে ব্যবসায় পরিবেশ বলে। ব্যবসায় পরিবেশ হলো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান দ্বারা পরিবেষ্টিত সকল উপাদান, অবস্থা, শক্তির সমষ্টি যা উক্ত ব্যবসায় বা তার ব্যবস্থাপকের কার্যকারিতা বা সফলতাকে প্রভাবিত করে। 

সাধারণত রাজনৈতিক পট পরিবর্তন, সরকারের নতুন নতুন আইন ও নীতি, কর অবকাশ ও কাঠামো, শ্রমিক অসন্তোষ, রাজনেতিক - অর্থনৈতিক অবস্থা, শিক্ষা ও প্রযুক্তি, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ব্যবসায়কে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রভাবিত
করে। ব্যবসায় পরিবেশ প্রতিকূল ও অনুকূল দুটোই হতে পারে। কোনো ব্যবসায়ের উন্নতি নির্ভর করে ব্যবসায় পরিবেশের উপর। পরিবেশ ব্যবসায় বা শিল্প স্থাপনের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে বিবেচিত হয়।

ব্যবসায় পরিবেশের বিভিন্ন উপাদান বর্ণনা করতে হবে ব্যবসায় পরিবেশের উপাদন সমূহ:
  • প্রাকৃতিক পরিবেশ
  • অর্থনৈতিক পরিবেশ
  • সামাজিক পরিবেশ
  • রাজনৈতিক পরিবেশ
  • প্রযুক্তিগত পরিবেশ
  • আইনগত পরিবেশ
প্রাকৃতিক উপাদান : প্রাকৃতিক পরিবেশের অধিকাংশই আমাদের দেশে ব্যবসায় স্থাপনের অনুকূল। দেশের প্রায় সকল অঞ্চল নদী বিধৌত। ছোট বড় সব মিলিয়ে মোট ২৩০ নদী প্রবাহিত হয় সারা দেশ জুড়ে। তাই সহজেই এখানে কৃষিনির্ভর বিভিন্ন শিল্প ও ভোগ্য পণ্য উৎপাদন সম্ভব। তাছাড়া নদীপথে ব্যবসায়িক পণ্যের পরিবহন খরচ ও কম। তবে অনেক নদী শুকিয়ে যাচ্ছে এবং অনেক ক্ষেত্রে নদীতে চর পড়ে নদীপথ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাছাড়া শিল্প স্থাপনের প্রয়োজনীয় প্রাকৃতিক গ্যাস এখানে বিদ্যমান।বিভিন্ন খনিজ, কয়লা, কঠিন শিলা, খনিজ তৈল শিল্প বিকাশে সহায়ক। এসব প্রাকৃতিক সম্পদের সঠিক ব্যবহার করলে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের অগ্রগতি ঘটে।

রাজনৈতিক উপাদান : সুষ্টু আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, অনুকূল শিল্প-বাণিজ্য নীতি ও আইন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, প্রতিবেশী দেশের সাথে বাণিজ্যিক সুসম্পর্ক ব্যবসা বাণিজ্য প্রসারে সহায়তা করে।অন্যদিকে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, ঘন ঘন সরকার পরিবর্তন, হরতাল, ধর্মঘট, কঠোর বাণিজ্য নীতি ইত্যাদি প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিবেশের উপাদান ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসারে বাধা সৃষ্টি করে। বাংলাদেশের উক্ত রাজনৈতিক উপাদানগুলো সব কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে বিদ্যমান নেই। শ্রমিক অসন্তোষ, ধর্মঘট,
ইত্যাদি নেতিবাচক দিক পরিহার করে বাংলাদেশের ব্যবসায়ের জন্য রাজনৈতিক পরিবেশের উন্নতি করা যায়

সামাজিক উপাদান : বাংলাদেশের মানুষ জাতিগত, ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিকভাবে উদ্যমী, পরিশ্রমী এবং সৃজনশীল। অতীতে জাহাজ নির্মাণ করে, মসলিন কাপড় উৎপাদন করে এদেশের মানুষ তাদের প্রতিভা আর পরিশ্রমের স্বাক্ষর রেখেছেন। সোনারগাঁও একসময় ব্যবসায়, কৃষি,
শিক্ষা, দীক্ষা, সভ্যতা, সংস্কৃতি, সাংস্কৃতিক ও
কারুশিল্পে ছিল বিশ্বসেরা। বর্তমানেও জামদানী শাড়ি, নকশিকাঁথা, জাহাজ নির্মাণ বিশ্ববাসীর দৃষ্টিআকর্ষণে সক্ষম হয়েছে। তবে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে মুখস্থ নির্ভরতা বের করে আরো দক্ষ ও সৃজনশীল করতে পারলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শিল্প বাণিজ্য গবেষণায় আরো বেশী সৃজনশীলতা প্রকাশ করতে পারবে। সাথে সাথে ব্যবসা বাণিজ্যসহ সকল ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার আরো বৃদ্ধি করতে পারবে।

অর্থনৈতিক উপাদান : বাংলাদেশের অর্থনৈতিক
পরিবেশের উপাদানগুলোর কয়েকটির ভিত্তি বেশ মজবুত হলেও অনেকগুলোর ভিত্তি তেমন সুদৃঢ় নয়। চাহিদার তুলনায় প্রয়োজনীয় মূলধন সম্পদের অভাব, গ্রামীণ জনগণের ব্যাকিং
সেবা ও ঋণ প্রাপ্তির সুবিধা কম, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, অসৎ দালাল ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য, দ্রব্যমূল্যেড় ঊর্ধ্বগতি এসব প্রতিবন্ধকতা কাটাতে পারলে বাংলাদেশ ব্যবসায় বাণিজ্যের বিকাশের গতি আরো দ্রুততর হবে।এর জন্য প্রয়োজন গ্রামে গঞ্জে ব্যাংকিং ঋণ সুবিধা পৌঁছে দেওয়া এবং সহজ করা।

আইনগত উপাদান : এদেশে ব্যবসায় পরিবেশের আইনগত উপাদান গুলো বরাবরই অনুকূল ছিল কিন্তু বেশিরভাগ পুরোনো। পরিবেশ সংরক্ষণ ও ভোক্তা আইন, শিল্প বাণিজ্য বান্ধব আইন তৈরি, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি প্রতিরোধে আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশে ব্যবসায়ের উন্নত
পরিবেশ সৃষ্টি সম্ভব।

প্রযুক্তিগত উপাদান : শিল্প ও বাণিজ্যের উন্নতিতে
দক্ষতাসম্পন্ন কর্মী, উন্নত যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তির প্রয়োজন। প্রযুক্তিগত উন্নয়ন উৎপাদন প্রক্রিয়াকে সহজতর করে। ফলে উৎপাদিত পণ্যের গুণগত মান বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশের ব্যবসায় পরিবেশে প্রযুক্তিগত উপাদানগুলো অনেকটা অনূকূল।

ব্যবসায়ের উপর পরিবেশের উপাদানগুলোর প্রভাব বিশ্লেষণ করতে হবে

একটা ব্যবসায় সংগঠন মূলত কতগুলো উপাদান বা বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত। মানবিক উপাদানের মধ্যে মালিক, ব্যবস্থাপক, শ্রমিক, কর্মী এবং বস্তুগত উপকরনের মধ্যে পুঁজি, যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল, বাজার ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ। এ সকল
উপকরণের প্রাপ্যতা নিঃসন্দেহে পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত হয়। তাই যেকোন দেশেই ব্যবসায় এর পরিবেশের উৎপাদান সমূহের দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়ে থাকে। নিম্নে এর প্রভাব সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো:
১। উপকরন প্রাপ্তিঃ একটা দেশের ব্যবসায় উন্নয়ন এবং সংশ্লিষ্ট প্রয়োজনীয় উপকরনাদির সহজ প্রাপ্তির বিষয় পরিবেশের দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়। ব্যবসায় গঠন ও উন্নয়নের প্রয়োজনীয় উপকরণ ও তার ওপর পরিবেশের প্রভাব নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ

ক। মূলধন প্রাপ্তিঃ মূলধন বা অর্থ ব্যবসায়ের প্রাণ। ব্যবসায় গঠন ও পরিচালনার জন্য প্রত্যেক ক্ষেত্রেই পূঁজি বা মূলধনের প্রয়োজন হয়। একটা দেশে এই মূলধন জনগনের আয়, সঞ্চয়, মূলধন
বিনিয়োগ ইত্যাদির উপর নির্ভরশীল। এছাড়া দেশের ব্যাংক ব্যবস্থা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, মূদ্রা ও ঋণ সরবরাহ পরিস্থিতি সর্বোপরি দেশের অর্থনৈতিক পরিবেশের দ্বারা প্রভাবিত হয়।

খ। কাচাঁমাল প্রাপ্তিঃ কাচাঁমাল প্রাপ্তির বিষয়টি
প্রাকৃতিক পরিবেশের দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়। বাংলাদেশের পাট শিল্প গড়ে উঠার পিছনে কাচাঁমালের প্রাপ্যতা ছিল মূখ্য। সৌদি আরবে পেট্রোলিয়াম শিল্প, ভারতের লৌহ ও ইস্পাত শিল্প, নরওয়েতে মৎস্য শিল্প ইত্যাদি গড়ে উঠার পিছনে কাচাঁমালের মূখ্য ভূমিকা রয়েছে।

গ। বাজার সুবিধাঃ যেকোন ব্যবসায় সম্প্রসারনে বাজার খুবই গুরুত্ব্পূর্ণ। এই বাজার দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবেশের দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়। দেশের মানুষের আর্থিক সামর্থ্য বেশি থাকলে তাদের ভোগ প্রবণতা বাড়ে। ফলে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায় বিস্তার লাভ করে। একটা দেশের আয়, ভোগ প্রবণতা ইত্যাদিও ব্যবসায়কে প্রভাবিত করে।

ঘ। মানবসম্পদের প্রাপ্যতাঃ ব্যবসার উন্নয়নের ক্ষেত্রে মানবসম্পদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই মানবসম্পদ একদিকে উদ্যোক্তা,.ব্যবস্থাপক ও শ্রমিক কর্মী হিসাবে কাজ করে। এই দক্ষ মানবসম্পদ অর্থনৈতিক পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এই সম্পদ সামাজিক পরিবেশের অংশ। এরূপ উপাদানের উৎকর্ষতার কারনেই জাপান, চীন, ভারত আজ বাণিজ্যে উন্নত। বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পও এই পরিবেশের দ্বারা প্রভাবিত।

২। ব্যবসায় বান্ধব নীতিমালাঃ বর্তমান বিশ্বায়নের এ যুগে কোন দেশই সরকারের ব্যবসায় বান্ধব নীতিমালা যেমন শিল্প নীতি, বাণিজ্য নীতি, আমদানি নীতি, রপ্তানি নীতি ইত্যাদি ছাড়া কার্যকর উন্নয়ন লাভ করতে পারে না। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশের বিভিন্ন
উপাদান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

৩। সুষ্ঠ যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থাঃ ব্যবসায়ের উন্নয়নে সুষ্ঠ যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ। একটা দেশের এরূপ যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থাও বিভিন্ন পরিবেশের উপাদান দ্বারা প্রভাবিত হয়। একটা দেশের বন্দর ও যাতায়াত সুবিধা প্রাকৃতিক পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে।

৪। অনুকুল আইন শৃংখলা পরিস্থিতিঃ বাংলাদেশের গ্রামে- গঞ্জে, শহরে-বন্দরে সর্বত্র ব্যবসায় গড়ে উঠার ক্ষেত্র অনূকুল। আইন শৃংখলা পরিস্থিতিও গুরুত্বপূর্ণ। এরূপ পরিস্থিতি দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও আইনগত পরিবেশের
উপাদান দ্বারা প্রভাবিত হয়। একটা দেশের পর্যটন শিল্প গড়ে উঠার ক্ষেত্রে আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

৫। ব্যবসায় সহায়ক সেবাঃ ব্যবসায় উন্নয়ন ক্ষেত্রে শিল্প ও বাণিজ্য সহায়ক বিভিন্ন সেবা গুরুত্বপূর্ণ। সরকারি বিভিন্ন সংস্থা, ঋণ প্রদানকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, আইন-শৃংখলা বাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, মেরামতি প্রতিষ্ঠান, পাইকারী ও খুচরা ব্যবসায় ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে বিবেচিত হয়।

বাংলাদেশে ব্যবসায়ের পরিবেশ উন্নয়নের পথে সমস্যাগুলো শনাক্ত করতে হবে।
যেসব উপাদান প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ব্যবসার
কার্যাবলীকে প্রভাবিত করে সেগুলোর সমষ্টি ব্যবসায় পরিবেশ। বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক ও কৃষি প্রধান দেশ। এদেশের প্রধান জীবিকা কৃষি এবং অধিকাংশ ব্যবসায় ও শিল্প কৃষিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। মোগল আমলে সোনারগাঁয়ে তারাবোতে গড়ে উঠে বিশ্বের রাজা রাণীর পছন্দের মসলিন। বঙ্গোপসাগরের অদূরে চট্টগ্রামে কর্ণফুলি নদীর তীরে গড়ে উঠে বিশ্বের অন্যতম চট্টগ্রাম বন্দর। 

শীতলক্ষা নদীর তীরে নারায়নগঞ্জ বন্দর, ভৈরব নদীর তীরে ভৈরব বন্দর গড়ে উঠে ব্যবসায় বাণিজ্যের উন্নতিতে ভূমিকা রেখেছে। স্বাধীনতার পর পরই সরকার অধিকাংশ ব্যবসায় ও শিল্প প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রায়ত্ব করে সমাজতান্ত্রিক মানসিকতায়। কিন্তু অদক্ষতা, স্বজনপ্রীতি ও দূর্নীতির কারনে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান লোকসান দিতে থাকে এবং অনেকগুলো দেউলিয়া হয়ে পড়ে। প্রয়োজন পড়ে বেসরকারীকরণের। অনেক প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে বেসরকারী পর্যায়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারী মিলে সৃষ্টি হয় এক মিশ্র অর্থনীতির। সব মিলিয়ে এখন
বিরাজ করছে এক ভিন্ন ব্যবসায় পরিবেশ। নিম্নে ব্যবসায়

পরিবেশের উপাদানগুলো বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আলোচনা করা হলোঃ

ক। প্রাকৃতিক উপাদানঃ প্রাকৃতিক পরিবেশের অধিকাংশ উপাদানই বাংলাদেশে ব্যবসায় স্থাপনের জন্য অনূকুল। দেশের প্রায় সকল অংশই নদী বিধৌত। ছোট বড় মিলিয়ে এদেশে মোট ২৩০টি নদী রয়েছে। ফলে সহজেই এখানে
কৃষিজাত বিভিন্ন শিল্প ও ভোগ্য পণ্যের কাঁচামাল উৎপন্ন করা সম্ভব। অন্যদিকে নদী পথে ব্যবসায়িক পণ্য পরিবহন ও খরচ কম। তবে অনেক নদী শুকিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে অনেক
নদীতে চর পড়ে নদী পথ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। ব্যবসায় বা শিল্প স্থাপনের প্রয়োজনীয় প্রাকৃতিক গ্যাস এদেশে বিদ্যমান। দেশে বিদ্যমান খনিজ, কয়লা, চুনাপাথর, কঠিন শিলা, খনিজ তৈল শিল্প বিকাশের সহায়ক। এ সকল প্রাকৃতিক সম্পদের
যথাযথ ব্যবহার করতে পারলে দেশের ব্যবসায় বাণিজ্যসহ অর্থনৈতিক উন্নতি ত্বরান্বিত হবে। অসংখ্য নদী বিধৌত ও সমুদ্রবেস্টিত হওয়ায় মৎস্য শিল্প বিকাশের উপযুক্ত পরিবেশ এখানে বিদ্যমান।

খ। অর্থনৈতিক উপাদানঃ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উপাদানগুলোর কয়েকটির ভিত্তি বেশ মজবুত হলেও অনেক গুলোর ভিত্তি তেমন সুদৃঢ় নয়। চাহিদার তুলনায় প্রয়োজনীয় মূলধনের অভাব, গ্রামীন জনগনের ব্যাংকিং সেবা ও ঋণ
প্রাপ্তির ক্ষেত্র শহরের তুলনায় কম। প্রশাসনিক জটিলতা, দালাল শ্রেণীর লোকদের হয়রানি, দ্রব্যমূলের উর্ধ্বগতি ইত্যাদি প্রতিকূল অবস্থা কাটাতে পারলে বাংলাদেশ ব্যবসায় বিকাশের আরও দ্রুত অগ্রসর হতে পারবে। এর জন্য
প্রয়োজন গ্রামে গঞ্জে ব্যাংকিং ঋণ সুবিধা পৌঁছে
দেওয়া এবং সহজ করা।

গ। সামাজিক উপাদানঃ এদেশের মানুষ জাতিগত ও ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিকভাবে উদার, পরিশ্রমী এবং সৃজনশীল। অতীতে জাহাজ নির্মাণ করে, মসলিন কাপড় উৎপাদন করে, এদেশের মানুষ তাদের প্রতিভা ও পরিশ্রমের স্বাক্ষর রেখেছেন। সোনারগাঁয় এক সময় ব্যবসায়, শিক্ষা
দীক্ষা, কৃষি, সাহিত্য, সাংস্কৃতিক শিল্পে, কারু শিল্পে
ছিল বিশ্ব সেরা। বর্তমানেও জামদানী শাড়ী তৈরি,
জাহাজ নির্মাণ, বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আর্কষন করতে সক্ষম হয়েছে। তবে বাংলাদেশের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থাকে মুখস্থ নির্ভরতা থেকে বের করে আরও দক্ষ ও সৃজনশীল করতে পারলে ভবিষ্যৎ প্রজম্ম শিল্প বাণিজ্য গবেষণায় আরও বেশী সৃজনশীলতা প্রকাশ করতে পারবে। সাথে সাথে ব্যবসায় বাণিজ্যসহ সকল ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার আরও বৃদ্ধি করতে পারবে।

ঘ। রাজনৈতিক উপাদানঃ যে কোন দেশের উন্নতিতে সুস্থ ও সহায়ক রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত অপরিহার্য। কিন্তু স্বাধীনতার দীর্ঘ সময় পরও রাজনৈতিক নীতিমালা, দল, প্রতিষ্ঠান, সরকার তেমন স্থিতিশীল ও সহনশীল নয়। ফলে প্রায়
রাজনৈতিক দলই হরতাল, ধর্মঘট, জ্বালাও পোড়াও অবস্থায় লেগে থাকে। এ অবস্থায় বিদেশী বিনিয়োগকারীগণ তো বটেই দেশী উদোক্তাগণও ততবেশী উৎসাহ পায় না। তাছাড়া হীনরাজনৈতিক স্বার্থের কারনে স্বাধীনতার পর থেকে অদ্যাবধি আইনশৃংখলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল হয়নি। দলমত
নির্বিশেষে সকলের প্রচেষ্টায় রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা পেলে দেশে বিনিয়োগ তথা শিল্পায়ন বৃদ্ধি পেতে বাধ্য।

ঙ। আইনগত উপাদানঃ আইনগত পরিবেশের কিছু উপাদান বাংলাদেশের আধুনিক ও যুগোপযোগী হলেও অনেকগুলো বেশ পুরাতন। পরিবেশ সংরক্ষণ ও ভোক্তা আইনের কঠোর
প্রয়োগ, শিল্প ও বিনিয়োগবান্ধব আইন তৈরি, দূর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি এবং চাঁদাবাজি প্রতিরোধে আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে দেশের ব্যবসায় বাণিজ্যের উন্নতি নিশ্চিত করা যায়।

চ। প্রযুক্তির উপাদানঃ বর্তমান তীব্র প্রতিযোগীতার
বাজারে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার ভিন্ন কোন ক্ষেত্রেই এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। বাংলাদেশের ব্যবসায়িক পরিবেশে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার এখন সীমিত। অধিকাংশ শিল্প কারখানায় পুরোনো প্রযুক্তির যন্ত্রপাতির ব্যবহারের কারনে আমাদের প্রতিযোগিতার সামর্থ্য কম। বিজ্ঞান ও
কারিগরী শিক্ষার মান ততটা সমৃদ্ধ নয়। প্রযুক্তি উন্নয়নে যে ধরনের গবেষণার প্রয়োজন তাও এখানে অপর্যাপ্ত। অর্থনৈতিক দুর্বলতার কারনে উন্নত প্রযুক্তির আমদানিও কাংক্ষিত মানে হচ্ছে না। কিছু কিছু কর্পোরেট বড় প্রতিষ্ঠান উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহারে যত্নবান। বহুজাতিক কোম্পানী ও দেশী ও কিছু কর্পোরেট বড় প্রতিষ্ঠান উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার করছে।

Leave a Comment