আবারও মহাজাগতিক ঘটনার স্বাক্ষী হলো পৃথিবীর মানুষ|Once again the people of the world witnessed cosmic events


মহাজাগতিক ঘটনা পূর্ণিমা বা Full moon বা Blue moon

আজ ২২ শে আগস্ট,  ২০২১ রবিবার, শরৎকাল ৭ই ভাদ্র,  ১৪২৮ বঙ্গাব্দ m১২ ই মুহররম,  ১৪৪৩ হিজরি।

আজ ২২ শে আগস্ট Full moon  বা পূর্ণিমার রাত।এ সময় চাঁদ পৃথিবীর সবচাইতে কাছে অবস্থান করবে, চাঁদের মূল দূরত্ব সাধারণত হয়ে থাকে ৩ লক্ষ ৮৪ হাজার কিলোমিটার প্রায়। 
কিন্তু পূর্ণিমার রাত হওয়ায়, আজ এই দূরত্ব কমে দাঁড়াবে  ৩ লক্ষ ৮১  হাজার ৭৮৫ কিলোমিটার প্রায়। ফলে স্বাভাবিক এর তুলনায় চাঁদ কে  আজ অনেক বড় দেখাবে।  এ সময় চাঁদের বয়স হবে ১৫ দিন। চাদের উজ্জ্বলতা বা Illumination থাকবে ১০০% অর্থাৎ অতি উজ্জ্বল। Illumination দ্বারা মূলত চাঁদের উজ্জ্বলতা বোঝায়।  এ চাঁদ কে Blue Moon ও বলা হয়ে থাকে।

এখন আসি Full Moon বা পূর্ণিমার চাঁদ বা Super moon  বলতে কি বোঝায়ঃ

পূর্ণিমার সময় চাঁদ যখন তার কক্ষপথে পৃথিবীর সবচেয়ে কাছাকাছি অবস্থান করে, জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা একে আখ্যায়িত করেছেন সুপারমুন হিসেবে। সেখান থেকে জনপ্রিয়তা পেয়েছে শব্দটি। তখন চাঁদ পৃথিবীকে উপবৃত্তাকার কক্ষপথে অতিক্রম করে। সেই সময়টিতে চাঁদ আকারে অনেক বড় দেখায়। সুপারমুনের সময় চাঁদকে স্বাভাবিকের তুলনায় প্রায় ১৪ শতাংশ বড় এবং ৩০ শতাংশ দ্যুতিময় মনে হয়।
পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব প্রায় ৩ লাখ ৮৪ হাজার কিলোমিটার। কিন্তু সুপারমুনের ক্ষেত্রে এই দূরত্ব কমে ৩ লাখ ৫৯ হাজার কিলোমিটারে নেমে আসে। চাঁদ পৃথিবীর চারদিকে প্রদক্ষিণ করে। কক্ষের মাঝামাঝি চলে এলে চাঁদের দূরত্ব কমে যায়। তখন চাঁদ বড় দেখায়। 

একে কেনো Blue Moon ও বলা হয়ে থাকে?

ব্লু মুন সাধারণত একটি সাধারণ ঘটনা নয়। অর্থাৎ, এটি প্রতিমাসে বা প্রতি বছরে দেখা যায় না। মূলত দুই-তিন বছর পরপর ব্লু মুন দেখা সম্ভব হয়। তারপরও সম্ভাবনা সামান্য।

মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে ব্লু মুন আসলে কী এবং কেন?
লুনার ক্যালেন্ডার অনুযায়ী প্রতি ২৯.৫ দিনে এক চান্দ্র মাস হয় এবং সে হিসেবে আমাদের সাধারণ ক্যালেন্ডারের সাথে এর এক-দুই দিনের পার্থক্য থাকে। তো এই পার্থক্য একসময় এমন একটা অবস্থানে আসে যখন একই মাসে দুটি পূর্ণিমা হয়ে থাকে। মাসের এই দ্বিতীয় পূর্ণিমার চাঁদকেই বলা হয় ব্লু মুন। কথা এখানেই শেষ নয়। কারণ এই হিসাব নিয়েও মতান্তর আছে। প্রাচীন মত অনুযায়ী, সাধারণত একটি ঋতুতে তিনটি পূর্ণিমা চাঁদ থাকে। কিন্তু লুনার ক্যালেন্ডারের এই অতিরিক্ত পূর্ণিমার সম্ভাব্যতার কারণে কোনো কোনো ঋতুতে চারটি পূর্ণিমা দেখা যায়। এখন চারটি পূর্ণিমা বিশিষ্ট এই ঋতুর তৃতীয় পূর্ণিমার চাঁদটিকে বলা হয় ব্লু মুন।

এখন কোন হিসাবটি সঠিক এই নিয়ে দ্বন্দ্ব আছে। তবে বেশিরভাগ গবেষকের মতে প্রাচীন মতবাদটিই সঠিক এবং পরবর্তী মতবাদকে প্রাচীন মতবাদের ভুল রুপান্তর হিসেবে মনে করা হয়। যদিও দুই মতবাদই এখন চলছে।

ব্লু মুন নামকরণের দিকে যদি যাওয়া হয় তাহলে দেখা যাবে ‘Once in a blue moon’ শব্দগুচ্ছের সন্ধান পাওয়া যায় প্রায় ৪০০ বছর আগে। আসলে এমন নামকরণের অর্থ ছিলো ‘ঋণাত্মক’ বা না-বোধক। প্রাচীন জনগোষ্ঠীর ধারণা ছিলো যে, চাঁদ তৈরী হয়েছে সবুজ রঙের পনির দিয়ে। এখন চাঁদকে নীল বলার অর্থ হচ্ছে না-বোধক। একে যদি আমরা বাক্যে প্রকাশ করতে চাই তো এমন বলতে হবে যে, “আমি তোমাকে বিয়ে করবো যেদিন আকাশে নীল চাঁদ উঠবে”। এখন তাদের ধারণা মতে সবুজ চাঁদতো আর নীল হবে না। তার অর্থ ‘তোমাকে’ আমার বিয়ে করাও হবে না।

কাজেই ব্লু মুন যে আসলে নীল না সে ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত হতে পারি এবং খুব সূক্ষ্মভাবে বলতে গেলে যে চাঁদকে ব্লু মুন বলা হচ্ছে সেটির বর্ণ মূলত হালকা ধূসর থেকে সাদা বর্ণের হয়ে থাকে। একই মাসে যদি আরেকটি চাঁদ উঠেও থাকে তাতে চাঁদের নিজের বর্ণের পরিবর্তনের সাথে কোনো যোগসূত্র থাকার কথা নেই। কিন্তু এখানেই কথা শেষ নয়। চাঁদকে নীল দেখা গিয়েছিলো ১৮৮৩ সালের দিকে। যদিও সেটা দেখা সম্ভব হয়েছিলো এক পার্থিব ঘটনার কারণে। ক্র্যাকাটোয়া নামক আগ্নেয়গিরি যখন বিস্ফোরিত হলো তখন র‍্যালে স্ক্যাটারিং তত্ত্ব অনুযায়ী বায়ুমণ্ডলের ধূলিকণা ফিল্টারের মতো কাজ করতে শুরু করলো। এর ফলে অস্তায়মান সূর্য এবং চাঁদকে দেখা যেতে লাগলো সবুজ ও নীল বর্ণের। একইভাবে অন্যান্য প্রাকৃতিক ঘটনা, যেমন দাবানল কিংবা ধূলিঝড়ের কারণেও চাঁদকে নীল দেখা যেতে পারে।

Leave a Comment