দুরন্ত শৈশব ও প্রকৃতির আলিঙ্গনে ফেলে আসা শৈশব স্মৃতি


আমার স্কুল জীবনের যে স্মৃতি কিছু সুখকর ছিল, আবার কিছু মনে হলে নিজেকে অপরাধী মনে হয়; নায়কও ভাবতে পারি মাঝে মাঝে। আমার প্রথম প্রাইমারি স্কুল ছিল রহমতপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়। এর অবস্থান আমাদের বাড়ী হতে এক ১০০ মিটার এর মতো হবে। প্রত্যেকদিন স্কুলে যাইতাম আর আসার পথে চলত নানান রকমের দুষ্টমী; কারো আমগাছে মাটির চাকার ডিল; কারো বড়ই গাছে মাটির ডিল, কাউকে পায়ে ল্যাংটি মেরে ফেলে দেয়া অথবা দৌড়ে কে আগে আসতে পারে ইত্যাদি ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। বর্ষাকালে মাঝে মধ্যে নৌকা খেলানো বা নৌকাবাইচ তো ছিলই।

প্রথম যেদিন প্রাইমারী স্কুলে যাই সেদিনের কথা আজো আমার স্পষ্ট মনে আছে। একটা পলিথিনের ব্যাগের ভিতর বই ঢুকিয়ে বড় ভাইয়ার পিছে পিছে স্কুলে গিয়েছিলাম সেদিন। প্রথম দিনের ক্লাস কেমন ছিল তা আজ আর মনে নাই।

ক্লাস ওয়ান


তখন স্কুলে ছোট ওয়ান এবং বড় ওয়ান বলে দুইটা শ্রেনী ছিল। যারা বাংলা এবং ইংরেজী বর্ণমালা পারতো তথা লিখতে এবং পড়তে পারতো তাদের দেওয়া হত বড় ওয়ানে। আমাকে বাড়ি থেকে এইগুলির শিক্ষা দেওয়া হয়েছিল বিধায় আমি ছিলাম সরাসরী বড় ওয়ানের বড় ছাত্র।

ক্লাস টু


আজকালকার ছেলেমেয়েদের মতো তখন আমরা এতোটা চালাক ছিলামনা। শুধু স্কুলে যাওয়া আসা এটাই ছিল আমাদের রোজকার কর্ম। অনেক ছোট এবং বোকা ছিলাম বিধায় ক্লাস ওয়ান এবং টু এর কোন স্মৃতি আর মনে পড়েনা।

ক্লাস থ্রি


ক্লাস ওয়ান এবং টু তে সম্ভবত ১০ টা থেকে ১২ টা পযর্ন্ত ক্লাস ছিল। ক্লাস থ্রিতে উঠার পর সেই রুটিন বদলে গেল। নিজেকে একটু বড় মনে হতে লাগলো। তখন আমাদের ক্লাস শুরু হত দুপুর ১২টা থেকে এবং শেষ হত বিকাল ৪ টায়। দুপুর ঠিক ১টার সময় আমরা কিছুক্ষনের বিরতী পেতাম।বিরতীর সময় সে কি আনন্দ! বেল বাজার আগেই মিলন যাকে আমরা লিলিপুট বলে ডাকতাম সে চলে যেত মাঠে। প্রচন্ড রোদ্রে চলতো আমাদের গোল্লাছুট খেলা।মাঝেমাঝে আবার বাড়িতে চলে আসতাম খাওয়ার জন্য।

ক্লাস ফোর



ক্লাস ফোরে উঠার পর শুরু হল সমস্যা। ফাইভে যারা ছিল তারা বৃত্তির জন্য আনিস স্যারের কাছে পড়তো। সবাই একসাথে বসার জন্য তারা আমাদের বড় বড় ডেস্কগুলো নিয়ে যেত। এর প্রতিবাদে অনেকদিন অনেক ঝগড়ঝাটিও হয়েছিল। তাছাড়া আমার সহপাঠি বন্ধু তখন ছিল অতান্ত্য বড় মাপের একজন ইভটিজার। সে আমাদের সহপাঠিনীকে খুব জ্বালাতন করতো। একবার এই নিয়ে তাকে হেড স্যারের মুখামুখি পযর্ন্ত হতে হয়েছিল।


ক্লাস ফাইভ(২০০৯)


ভেবেছিলাম ফাইভে উঠে কিছুটা শান্তিতে থাকবো। না, তা আর হয়ে উঠেনি। নতুন আরেক আপদ এসে জুটলো কপালে সেটা হল বৃত্তি নামক পরিক্ষা। আমাকে বৃত্তি পেতেই হবে সেই সংগ্রামে বাড়ীতে এবং স্কুলে স্যারদের প্রচন্ড চাপে মাঝে মাঝে হাপিয়ে উঠতাম। যদিও পরে আমি বৃত্তি পাইনি। আমার এই বৃত্তি না পাওয়া নিয়ে স্যাররা খুব হতাশ হয়েছিলেন। আমার ভুল ছিল আমি বৃত্তি পাওয়ার জন্য গনিত এবং ইংরেজিতে খুব জোর দিয়েছিলাম কিন্তু অন্য সাবজেক্টগুলো তেমন পড়া হয়ে উঠেনি।বলে রাখা তখন কিন্তু বৃত্তি পাওয়াটা আজকালকার এ প্লাসের চাইতেও মযার্দাবান ছিল। এবং বৃত্তি পরিক্ষা হতো ২ দিনে ৫ টি বিষয়ে।  মানে সকাল বিকাল পরিক্ষা।  প্রথম দিনে সকালে বাংলা এবং বিকেলে ইংরেজি,  পরের দিন সাকলে গণিত বিকেলে সমাজ এবং বিজ্ঞান।

 

যাদের হাতে প্রাথমকিকে হাতেখড়ি



যাহোক, এবার আসি স্যারদের কথায়। সব স্যারকে মনে না থাকলেও কয়েকজন গেথেঁ আছেন অন্তরে। হেড ফনিভূষন মিত্র, নূরুল স্যার, মুনসুর স্যার এবং বশার স্যার ছিলেন আমাদের সকলের প্রিয় । হেড স্যারকে দেখতাম সব সময় হাতে বাশের বড় কঞ্চি নিয়ে ঘুরতেন। মারার চাইতে স্যার ভয়ভীতিই বেশি দেখাতেন। বশার স্যার আমাদের বাংলা পড়াতেন। স্যার ছিলেন অত্যান্ত ভালোমানুষ । তিনি কখনো আমাদের বেত্রাঘাত বা ধমক দেননি। মুনসুর স্যার আমাদের ম্যাথ পড়াতেন। স্যারের হাতে তেমন একটা মার খেয়েছি বলে মনে হয়না।


বন্ধুবান্ধব সমগ্র


বন্ধুবান্ধবীদের মধ্যে রানা, জসিম, রুবেল, হাবিবুর, রুহল, সেতু, মোস্তাইন, মুক্তা , খাদিজা, মমতাজ, হাসান, মিলন, রিপোন, আব্বাস, টুটুল,  তানিয়া, আল্পনা, শাহিনুর এই নামগুলো ছিল উল্লেখযোগ্য। তাদের প্রত্যেকেরই আলাদা আলাদা চরিত্র ছিল।


সময়ের সাথে সাথে সব কিছু দ্রুত ভুলে যাচ্ছিলাম। আর তাই সময় ক্ষেপন না করে লিখতে বসে গেলাম। প্রাইমারি স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে হাই স্কুল জীবনে পদার্পন করতেই মনের মধ্যে বেশ ভয় কাজ করতে লাগলো। পরিচিত গন্ডির বাহিরে অনেক বড় স্কুল অনেক টিচার কেমনে সবকিছু ম্যানেজ করবো চিন্তায় পড়ে গেলাম। প্রথমদিন মেজো ভাইয়ার সাথে গাংনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যাই। বলে রাখা ভাল ভাইয়াও এই স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। প্রথমদিন যখন ভর্তী হই তখন আমাকে একটি বেতন কার্ড দেওয়া হয়েছিল। আমার রোল দেওয়া হয়েছিল ৮০। মনে আছে আব্বু আমার বেতন কার্ডের সব কিছু ফিলআপ করেছিলেন। আমার ভর্তির পরপরই প্রাইমারি স্কুলের বন্ধু জসিম কে ভর্তি হতে দেখে মনের থেকে একটু ভয় কেটে গেছিলো। প্রথমদিন আর ক্লাস হয়নি। ভাইয়ার সাথে বাড়ি ফিরি অনেক আনন্দে। বড় হবার আনন্দে।

ক্লাস সিক্স

কবে ক্লাস শুরু হয়েছিল আমার মনে নাই। প্রথমদিনের প্রথম ক্লাসে সম্বভত আমরা মারুফ আলম (এরশাদ)  স্যারকে পাই। স্যার অমায়িক মানুষ। একদম শিশুদের মতো মত মন। আমার বা আমাদের কারোরই মনে হয়নি আমরা ছিলাম তার অপরিচিজন। তিনি বুঝালেন এটা হাই স্কুল। আমরা বড় হয়েছি। সুতরাং আচরনেও আমাদের বড় হতে হবে। তারপর রমলা ম্যাডাম আর সুকুমার  স্যারকে পেয়েছিলাম। উভয়ই আমাদের নানা গাইড লাইন দিয়েছিলেন। যাহোক হাই স্কুলের ভয়টা আস্তে আস্তে কেটে যেতে লাগলো। একটা বড় সুবিধা  পেয়েছিলাম আমরা। আমরা যারা কাছের রহমতপাড়া এবং পূর্বপাড়া প্রাইমারি স্কুলের ছাত্র ছিলাম যেহেতু সংখ্যায় বেশি ছিলাম আর তাই গাংনী  হাই স্কুলে উঠে আমাদের বেশ দাপট ছিল। অন্য গ্রামের ছেলে-মেয়েরা বেশ সমীহ করতো আমাদের। বড় হবার সাথে সাতে দাপট কি জিনিস আস্তে আস্তে বুঝতে শিখলাম। সেই সাথে নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হতে লাগলাম।

ক্লাস সেভেন

সপ্তম শ্রেণীতে আমার রোল হয় ৪০ এবং ১ সাবজেক্ট এ ফেল করে B গ্রেডে পাশ। তারপরও আমার মনে খুশির জোয়ার বয়ে যায়। অনেকে পাশ করতে পারেননি ভেবে।
ক্লাস সিক্সের পর যখন সেভেনে উঠলাম তখন বন্ধুর লিষ্টটা বেশ লম্বা হয়ে গেল। প্রাইমারি স্কুলের দীর্ঘ ৫ বছরের বন্ধুদের সাথে লিষ্টে ক্লাস সিক্সের অন্য স্কুল থেকে আসা ছেলেদের নামও যুক্ত হল। মেয়েরা অবশ্য কখনো আমার বন্ধু ছিলনা। মেয়েদের থেকে বেশ খানিকটা দূরে রাখতাম আমি নিজেকে। স্কুলে তখন চোখ টিপা ব্যাধি মহামারি আকার ধারণ করেছিল। প্রায়ই শুনা যেত অমুক তমুককে চোখ টিপা মেরেছে। আর এই চোখ টিপা নিয়ে স্কুল থেকে গ্রাম সবত্র চায়ের কাপে আলোচনার ঝড় উঠতো।  ক্লাস সেভেনে আমি গনিতের জন্য আলাদা একটা খাতা করেছিলাম। সেই খাতায় শুধু অংক করতাম। মনে আছে প্রথম সাময়িক পরীক্ষায় আমি পেয়েছিলাম। বিষয়টা আমার জন্য বেশ রোমাঞ্চকর ছিল। কেননা গনিতে আমার ডাবল জিরো পাবার বেশ ভাল রেকর্ড ছিল। তাছাড়া ক্লাস সেভেনে প্রথম আমি স্কুল থেকে পালাই। সেদিন সারাটা দিন আমার জন্য ছিল চরম বিরক্তিকর। কিছুটা সময় সন্দীপের সাথে কলাগাছের ভেলা নিয়ে পানিতে খেলা করি তারপর তো আর সময় যেন কাটতে চায়না।

ক্লাস সেভেনের আরেকটি ঘটনা মনে পড়লে এখনো কান্না পায়। স্কুলে তখন আমাদের সৃজনশীল প্রশ্ন যুক্ত হয়। স্যার গন নিজেরাই হিমসিম খেতো গণিত সৃজনশীল করতে গিয়ে। সুতরাং আমাদের অতিরিক্ত পাঠদানের সহায়তার জন্য আমরা অনেক বন্ধু শ্রদ্ধেয় সোহরাব (হিরান) স্যার এর নিকট প্রাইভেট পড়তাম। আমাদের স্কুল ছুটির পরপরই শুরু হতো প্রাইভেট ক্লাস পাশের প্রাইমারি স্কুলে। স্যার আসার ফাকে আমি, মোহাজির, আশরাফুল,  হেলাল, হাসান, বুলবুল, নিরব, আসলাম, হামিম, রাজিব, রাসেল, নাজমিন,রুপা, শিমলিন, আরিফা, রেক্সনা,  আরিনা,   রুপা মনি, বাইজিদ অনেক খেলাধুলা করতাম, ফুটবল, ক্রিকেট শিলগুটি আবার কখনো কখনো বসে পড়তাম গল্পের বই পড়তে। এরকম ভাবেই আনন্দের সাথে অর্ধবছর শেষ হলো। সরকারি নির্দেশনার জন্য আমাদের প্রাইভেট কোচিং    সরিয়ে নেওয়া হলো স্যার এর নিজ বাড়িতে। বাড়িতে কোচিং এর সামনে ফুলের গাছ লাগানো এবং ছাগলের হাত থেকে রক্ষার জন্য বেড়া তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয় আমার,মোহাজির, নিরব, আশরাফুল এবং বুলবুল উপর, কাজের এক পর্যায় আমি আশরাফুলের হাতের অনেক খানি কেটে ফেলি। তখন আনন্দের সাথে করা কাজে দুঃখ নেমে আসে।

এরপর আমাদের কোচিং এর নাম দেওয়া হয় এস কোচিং সেন্টার,  আমরা সকলে আনন্দের সাথেই প্রতিদিন সেখানে পড়তে পেতাম।  সকলের গাইড বা সহায়ক বই ছিলো না স্যার সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর লিখে দিতেন। মুখে বলতেন আর আমরা লিখতাম।  কঠিন কঠিন শব্দ গুলো লিখতে হিমশিম খেতাম।

ইংরেজি গ্রামারের ভীতি দূর করতে স্যার নতুন একজন শিক্ষাকে নিয়োগ করেন। শ্রদ্ধেয় গুরা বড়াল স্যার।  আড়ালে যদিও আমরা বিড়াল বলতাম। তবে স্যার খুব সুন্দর গ্রামার শিখতেন আমাদেরকে। দেখতে দেখতে আমাদের বার্ষিক পরিক্ষা চলে আসে এবং পরিক্ষা শেষ ও হয়ে যায়। পরিক্ষা শেষের ছুটির দিনগুলো আমরা অনেক আনন্দ এবং খেলাধুলা করে কাটিয়েছি। এর ভিতর কোন এক নাজনা রোগে আশরাফুল চলে যায় তারাদের দেশে।

ক্লাস এইট

অষ্টম শ্রেণিতে আমার শ্রেনীর রোল যৌথ ভাবে হয়, রাজীব, ইমরান, এবং আমার ফলাফল এক, সুতরাং লটারি করে আমাদের রোল নির্ধারন করা হয়েছিল এবং আমার রোল হয় ১৮।
যখন ক্লাস এইটে উঠলাম তখন আমাদের মধ্যে বেশ একটা সিনিয়র সিনিয়র ভাব কাজ করলো। আমাদের তখন ইংরেজির ক্লাস নিতেন সোহেল স্যার। হেড স্যার অসুস্থ থাকায় উনি তখন ছিলেন স্কুলের ভারপ্রাপ্ত হেড । সবাই উনাকে এতটাই ভয় পেত যে আড়ালে টাইগার নামে ডাকতো। আমার মুখস্ত বিদ্যা শক্তি মাশাআল্লাহ বেশ ভাল ছিল। বড় বড় অংক যেখানে মুখস্ত করে ফেতলাম সেখানে ইংরেজি ছিল ডাল ভাত। আর তাই স্যারের কাছে তেমন ধরা খেতে হতনা। অবশ্য তখন আমি একটু সাহিত্যমনা ছিলাম। নিজে নিজে ছড়া লিখে ফেলতাম। একবার বাংলা পরীক্ষায় বৃষ্টির রচনায় আমার নিজের একটি ছড়াকে তাইতো কবি বলে বলেছেন বলে লিখে দিয়ে আসছিলাম। সেবার পরীক্ষায়  বাংলায় ৮১ নাম্বার পেয়েছিলাম। ক্লাস এইটে আবার জিএসসি নামক প্যারা শুরু হল। খেলাধুলার নেশা আমাকে এতটাই আসক্ত করেছিল যে বার্ষিক পরীক্ষায় ইতিহাসের সেরা খারাপ রেজাল্ট করেছিলাম সেবার আমি। জিএসসি তে জিপিএ ৩.৮৪ পেয়ে ক্লাস নাইনে পদার্পন করি।

ক্লাস এইটে থাকাকালিন সময়ে আমার বন্ধু রাসেল আবার নতুন করে প্রেমে পড়েছিল। মেয়েটির আমাদের সহপাঠী ছিল।স্কুলের পাশেই ছিল ওদের বাড়ি। বাংলার ঢালিউডের আকাশে তখন নায়িকা পূর্ণিমার আবির্ভাব। রাসেল ওকে নায়িকা পূর্ণিমার ফটোকপি বলতো। বেশ কয়েকদিন সে পূর্ণিমার ফটোকপির পিছনে ঘুরাঘুরি করে। সম্বভত পূর্ণিমার মনের গ্রিন সিগনাল না পেয়ে বেচারা ইমনের প্রেমে লাল সিগনাল জ্বলে উঠে। এরপর অবশ্য সে পুনরায় আরেকটি প্রেমে পড়েছিল। সেই মেয়েটিও জুনিয়র ছিল। আফসোস সেটিও ব্যার্থ হয়েছিল।

ক্লাস নাইন

ক্লাস এইটে ইতিহাসের সেরা রেজাল্ট করে কোনক্রমে ক্লাস নাইটে উঠি।নিজের মধ্যে ভাবনা জাগে এই রকম রেজাল্ট আর করলে তো পরিবারে ইজ্জত ধূলায় লুটাবে। মনে ঝড় উঠে।ট্রাকের পেছনে থাকা ১০০ হাত দূরে থাকুন বানীটাকে খেলাধুলার পিছনে লাগিয়ে নেই। নিজেকে একজন অবসরপ্রাপ্ত খেলোয়াড়দের  তালিকায় ঘোষনা করি।এবার পড়াশুনায় মন দেই। যেহেতু্ আমি বাউন্ডুলে ছিলাম আর তাই আমাকে সায়েন্সে দেওয়ার রিস্ক নেওয়া হলনা স্কুল থেকে । বিজ্ঞানের স্বাদ থেকে বঞ্চিত করা হলে আমি পড়াশোনাই করব না এইরকম একটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর অবশেষে আমাকে স্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগের বই দেওয়া হয় । সম্ভবত  আমরা সেবছর ১৪ জন শিক্ষার্থী বিজ্ঞান বিভাগের বই পেয়েছিলাম । বিজ্ঞান নিয়ে অবশ্য আমার আরেক ইতিহাস আছে। আমাদের পদার্থ বিজ্ঞান পড়াতেন মিহির স্যার। মিহির স্যার একটু সহজ সরল ছিলেন। তিনি আমাদের পদার্থের পাশাপাশি রসায়ন এবং উচ্চতর গনিত পড়াতেন। সে সময়ে আমাদের স্কুলে বি,এস,সি শিক্ষক ঐ একজনই ছিলেন৷ সোহেল স্যার আমাদের সামাজিক বিজ্ঞান ক্লাস নিতেন। এবং পারভেজ স্যার নিতেন জীব বিজ্ঞন। যেহেতু আমরা স্কুল থেকে বিদায় নিচ্ছি সেহেতু আস্তে আস্তে সবার সাথে সম্পর্ক বাড়তে লাগলো। বান্ধবী দের মধ্যে কয়েকজন তখন চুটিয়ে প্রেম করছিল সিনিয়র ভাই দের সাথে । এমনকি সহপাঠী দের মধ্যেও অনেকে প্রেম করত। তাদের মধ্যে বেশিরভাগ কথা হত মুঠোফোনে। আমাদের বিজ্ঞান বিভাগের মধ্যে ও এমনই দুইজন ছিল। আমি তাদের অনেক কিছুই জানতাম। অবশ্য পরবর্তীতে অজ্ঞাত কারণে তাদের প্রেম আর আলোর মুখ দেখেনি। সবার দেখা দেখি আমিও একজন কে পছন্দ করে ফেলি। কিন্ত বন্ধুত্ব নষ্ট হবার ভয়ে কখনো বলতে পারিনি। তার বিয়ের পরে জানতে পারি সে নিজেও জানত যে আমি তাকে পছন্দ করি। "মেয়েদের বুক ফাটে তবু মুখ ফাটেনা" কথাটির চুল ছেঁড়া প্রমান পেয়ে হৃদয়ে বাংলা সিনেমার বজ্রপাত এবং জানালার পতপত করে বাড়ি খাওয়ার অনুভূতি সৃষ্টি হলো যা লিখে বোঝানো সম্ভব নয়।

ক্লাস টেন

হাই স্কুলের শুরুটা ছিল দাপটের ভাবনা নিয়ে কিন্তু শেষে এসে দেখি সব ভুয়া। ভালবেসে ফেলি স্যার আর বন্ধুদের। শেষে এসে তাই এই বন্ধনে টান পড়ে। দ্রুত সময় চলে যায়। প্রথম সাময়িক এর পর দ্রুত প্রিটেষ্ট তারপর টেষ্ট পরীক্ষা হয়। চিন্তা ছিল তখন কেবল মার্ক বাড়ানোর। শেষের দিকে এসে আমরা নাইট কোচিং এ ভর্তি হই । আগে যে পড়াতাম না তা নয়। সমস্যা ছিল আমি অংক পারতামনা আর আমি বাড়িতে একা এবং ছোট্ট ঘরে পারিবারিক কথপোকথন শুনতে শুনতে পড়ায় মন দিতে পারতাম না । কোচিং এ আমাদের সবার আকর্ষন ছিলো শ্রদ্ধেয় বুলবুল স্যার এবং সেলিম রেজা স্যার এর উপর।  সাধরনত বুলবুল সন্ধার পর আমাকে নিয়ে বসতেন। বুলবুল স্যার বন্ধুসুলভ এবং আমাদের ব্যাচের জন্য সবচেয়ে সেরা শিক্ষক ছিলেন। সেলিম স্যার ও কম ছিলেন না। সেলিম স্যারের জন্য কখনো আমরা মন খারাপ কাকে বলে বুঝতে পারতাম না। স্যার এর একটি স্থানীয় খবর পাঠের অডিও রেকর্ড এখনো শুনি মন খারাপ থাকলে। সে সময় ভুত FM শোনা আমাদের নিয়মিত রুটিনে পরিনত হয়। হয়তবা আগামী প্রজন্ম "বিশ্বাস করেন রাসেল ভাই এইটার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না" কথাটির যে কি মর্ম তা কখনোই বুঝতে পারবে না কিন্ত ঐ কথাটি শোনার জন্য আমারা পড়ার শেষে রাত ২/৩ টা পর্যন্ত বাটন মোবাইলে হেডফোন লাগিয়ে জেগে থাকতাম। মনে আছে বুলবুল স্যার শেষের দিকে আমাকে ত্রিকোণমিতি আর পরিমিতির এবং আরোহ বিধি করাতেন। এই ৩ চাপ্টারে আমি এত এক্সপার্ট হয়েছিলাম যে আমি উভয় গণিতে জিপিএ ৫ পেতে সক্ষম হয়েছি। এরই মাঝে অনেক বন্ধু বায়োজিদ টেষ্টে অসাধু কাজে ধরা খেয়ে যায়। তাকে বাচানোই ছিলো আমার মূল লক্ষ। এবং আমি তাকে বাচিয়ে নিতে ও সক্ষম হয়েছি। কিন্ত মিহির স্যার সিউর ছিলেন বন্ধুর বিষয়ে তাই বন্ধুর নিকট কিছু না পেয়ে আমাকে চিরুনি তল্লাশী করেন এবং হতাশ হন৷ আমি ততক্ষণে অসাধু বিষয়ে ডকুমেন্টস বন্ধুদের মাধ্যমে হল রুম থেকেই গায়েব করে দিয়েছি তল্লাশি করে কি হবে৷ জীবনে প্রথম ঐদিন মিহির স্যার আমাকে পরিক্ষার হল রুমেই প্রচুর মারেন তারপর ও আমি খুশি ছিলাম যে বন্ধুকে বাচিয়ে নিতে পারছি।

টেস্ট পরিক্ষার পরে সময় যেন লাগামছাড়া গতিতে কমতে শুরু করে। কোনটা রেখে কোনটা পড়ি এই অবস্থা সৃষ্টি হয়। এর ভিতর আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু রুপা খানম টুকটুকির এপেন্ডিসাইটিস দেখা দেয় এবং তাকে অপারেশন করানো হয় কিছুদিন পর তার নানিও মারা যায়।  রুপা মামাবাড়ি থেকেই লেখা পড়া করতো।  দুইটা বিষয়ের জন্য ও ভেঙে পড়ে পরিক্ষার চিন্তায়। কারন টেস্ট পরিক্ষার পর সে ১ মাসের বেশি বই ধরতে পারেনি।  রুপাকে আস্বস্ত করি পরিক্ষার হলে যতটুকু সম্ভব আমি তাকে সাহায্য করব। এবং আমি তাকে হলে যথেষ্ট সাহায্য ও করছি। পরিক্ষার হলে একটি বিষ্ময়কর ঘটনা ঘটে যা হয়ত কেউ জানেনা। শুধু মাত্র আমাদের ব্যাচে এবং আমাদের কেন্দ্রে যেসকল পরিক্ষার্থী ঐ সময় পরিক্ষা দিয়েছিলো তারাই শুধু জানে কিন্ত বাহিরের কোনো মিডিয়া বা অন্য কেউ জানেনা।  হয়ত ইতিহাসে আমাদের ব্যাচই কোনো বোর্ড পরিক্ষা   একটানা ৬ ঘন্টা দেওয়ার সুযোগ পায়।

বিষয়টি একটু পরিষ্কার করে বলি, আমাদের সেইদিন জীববিজ্ঞান পরিক্ষা ছিলো, প্রশ্ন মোটেও কমান আসেনি।  একটি উদ্ভিদের টিস্যু ও ব্যাঙ এর চিত্র অঙ্কন করতে এসেছিলো। এই জিনিস আমি সবচেয়ে ভালো পারতাম।  আমার লেখা প্রায় শেষের পথে হঠাৎ যে বিষ্ময়কর ঘটনা ঘটে তার জন্য আমি বা আমরা কেউই প্রশ্তুত ছিলাম না। 

ঘটনাটি হলো মানবিক বিভাগের প্রশ্ন ভূল হয়েছে।  তাদের ঐ দিন যে পরিক্ষা হওয়ার কথা শিক্ষকরা ভুল করে অন্য প্রশ্ন দিয়ে ফেলছে। তাই তাদের পুনরায় নতুন খাতা এবং প্রশ্ন দিয়ে পরিক্ষা নেওয়া হবে আর আমরা যাতে বাহিরে না বের হই এজন্য আমাদের দরজা আটকিয়ে দেওয়া হয়। ভিতরে ঘোষনা করেন যে যা পারি লিখতে কোনো শিক্ষাক আমাদের কিছুই বলবে না এবং আমাদের অতিরিক্ত ৩ ঘন্টা সময় বরাদ্দ করা হলো।

মজার ব্যপার হলো আমি প্রায় ৪/৫ জনের খাতায় লিখছি সেদিন। অনেকে চিত্র গুলো অঙ্কন করে দিয়েছি। পরিক্ষার হলে সবচেয়ে ছাত্র-ছাত্রী রা যে মানুষটিকে ভয় করে সে হলো উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা। সে সময় খুব ছোট একজন মহিলা এ দায়িত্বে ছিলেন। জানালার পাশে দাড়িয়ে থাকলে তাকে দেখাই যেতনা এবং সে সুযোগে তিনি অনেক ছাত্র-ছাত্রীকে পরিক্ষা থেকে বঞ্চিত করেন। কিন্ত ঐদিনের দৃশ্য ছিলো সম্পর্কিত ভিন্ন।  সেই উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা আমাদের হলরুমে একটি চেয়ারে অসহায়ের মতন বসে ছিলেন এবং আমরা যে যেমন করে খুশি নিজের সিট থেকে উঠে উঠে লিখতে ছিলাম৷ এবং গল্প করতেছিলাম অনেকে হালকা সুরে গান ও গেয়েছি৷ উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা শুধু কিছুক্ষন পর পর বলে আমাদের শব্দ না করার জন্য। বাহিরের মিডিয়া বা লোকজন যাতে এই ঘটনা জানতে না পারে। সম্ভবত ঐ জীববিজ্ঞান পরিক্ষায় আমরা ঐ কেন্দ্রের সকলে জিপিএ ৫ পেয়েছিলাম।

ডায়েরির পাতা থেকে

ডিসেম্বর মাসের ২৭/২৮ তারিখ সম্ভবত খুবই মজার একটি দিন ছিল।সারাটা দিন কেটেছে খুব আনন্দে।প্রথমে কিছুটা ভয় ছিল বিপদের জন্য। শেষে যখন বিপদ কেটে গেল ঠিক তখনেই মেঘের আড়ালে সূর্য হাসার মত শুরু হল আনন্দ। যতটা সময় স্কুলে ছিলাম তার অর্ধেকটা সময় কাটিয়েছি মোহাজির, বায়োজিদ , শামিম, নাজিম ও রাজিবের সঙ্গে । ক্লাস শুরু হবার পর সুকুমার স্যার বেশ কয়েকটি উপদেশ দিলেন। অনেক হাসিখুশির পর শেষ হয়ে এল সময়। স্কুলের রুটি সাদৃশ্য বুড়ো বিলায়েত দাদার ঘন্টায় বাজলো বিদায়ের সুর। সবার কাছ থেকে দোয়া চেয়ে আমি চলে এলাম আমারা বেরিয়ে পড়লাম বুকে পাহাড় সমান ব্যথা নিয়ে জীবনের দ্বিতীয় সেরা বিদ্যাপিঠ থেকে।

যদিও স্কুল  থেকে পুরোপুরি বিদায় না হলেও দশম শ্রেনী  থেকে বিদায়ের দিন।বারটি ছিল বৃহস্পতিবার। তাই স্কুল ১ঘটিকার সময় ছুটি।নিদির্ষ্ট সময়ের পূর্বে তাই নবম শ্রেনীর সব ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে তিন চারজনের কাছ থেকে বিদায় নিলাম।বুঝিয়ে দিলাম তাদের কাছে এই স্কুলের দায়িত্ব। নবম শ্রেনীর ছেলে মেয়েরা আমাদেরকে বিদায়ের মানপত্র দিল। আমরা সবাই খুবই আনন্দ করলাম।দু’তিনজন মাঠে ক্রিকেট খেললো শেষবারের মতো।শেষবারের মতো ৬ষ্ঠ শ্রেণী  থেকে ১০ম শ্রেনী পযর্ন্ত ঘুরলাম আমি, নাজিম আর রাজিব । এইভাবে শেষ হয়ে গেল স্কুলের শেষ এই দিনটি।বিদায়ের যন্ত্রনা করুন কিন্তু তবুও বিদায় নিতে হয়।

যাদের হাতে হাড়েখড়ি

আব্দুর রহমান স্যার: উনি ছিলেন আমদের হেড। তিনি আমাদের স্কুলে নতুন যোগদান করেছিলেন।  মাঝে মাঝে কোন স্যার না আসলে স্যার সেই ক্লাস প্রক্সি দিতেন।

সোহল স্যার : উনি ছিলেন স্কুলের সহকারী হেড স্যার। হেড স্যারের চেয়ে সবাই বেশি উনাকে ভয় পেত।এতটাই ভয় পেত যে আড়ালে উনাকে টাইগার বলে ডাকতো। স্যারের সেই কঠোর শাসন আমাদের মানুষ হবার মুলমন্ত্র ছিল। ব্যাক্তিগতভাবে স্যারের সাথে আমাদের বিজ্ঞান বিভাগের বেশ ভাল সম্পর্ক ছিল।

পারভেজ স্যার : পারভেজ স্যারকে প্রথম ক্লাস সিক্সে পাই। স্যার সিক্সের বিজ্ঞান পড়াতেন। স্যারের কাছে কখনো কোন ধমক খাইনি। কিন্ত আমরা সকলেই স্যারকে অনেক ভয় পেতাম। তিনি পড়া ধরলে বুকের মধ্যে বুলডোজারের আওয়াজ পাওয়া যেতো। কিন্তু আমরা সব সময় স্যারের হাসিমাখা মুখ দেখেছি। তেলাপোকা যে মাথা ছাড়াও ১০ দিন বেচে থাকতে পারে এবং পরবর্তীতে সুধু পেটে খাবার এবং ক্যালোরির অভাবের জন্য মৃত্যুবরন করে এটা আমাদের স্যারই শিখিয়েছেন। এছাড়াও আমাদের কম্পিউটারের হাতেখরি ও তিনি।

মিহির স্যার : মিহির সাধারনত কখনো কাউকে মারতেন না। আমারা স্যারকে ৯ম শ্রেনী থেকে পাই। আমাদের স্কুলের একমাত্র বি,এস,সি শিক্ষাক এবং গণিত শিক্ষক হওয়ায় স্যার বিজ্ঞান বিভাগের সকল ছাত্র-ছাত্রীর সবচেয়ে বেশি প্রিয় ছিলো। অন্য বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীদের ও প্রিয় ছিলো স্যার।

বাশার স্যার: স্যার বাংলা পড়াতেন। সাহিত্যকে তিনি বুঝিয়ে বুঝিয়ে পড়াতেন। সাধারণত স্যার কে তেমন রাগান্বিত হতে দেখিনি। কিন্তু তিনি হুট হাট করে রাগান্বিত হয়ে পড়তেন এবং বাঁহাতি জোড়া বেতে বাড়ি এসে পড়ত আমাদের হাতে। তিব্র ব্যাথার যন্ত্রণা এবং ব্যথার স্বাদ লিখে বোঝানো সম্ভব নয়।

মারুফ স্যার:  এই মারুফ স্যার আমাদের ক্লাস ৬এ গণিত পড়াতেন। স্যার খুব বেশি ধমক দিতেন কিন্তু তার ধমকে কেউ ভয় পেতনা। উনি সাধারনত কাউকে মারতেন না।

রমলা ম্যাডাম : রমলা ম্যাডাম আমাদের কৃষিশিক্ষা  পড়াতেন । উনি কাউকে মারার চেয়ে ধমক খুব বেশী দিতেন। ওনার মুখের ধমকানোর সুর এতটাই বিকট ছিলো যে বাশার স্যারের বেতের আঘাত সেখানে কিছুই না। ম্যাডাম কাউকে মারলে সাধারণত হাতে থাকা বই দিয়েই বাড়ি মারতেন এতে আমাদের কিছুই হতনা।  কৃষি শিক্ষাতে ব্যবহারিকের নামে গোটা একটা হাসের ডিম দেওয়া ছিলো আমার জন্য একটি বিরক্তিকর কাজ। আমি কখনো ডিম দিয়েছি বলে মনে হয়না।

সুকুমার স্যার: বাংলা ব্যাকারনের এই স্যারকে সবাই খুব ভয় পেত। কানে কম শুনলেও স্যারের রাগ একটু বেশি ছিল। স্যার এখনো একজনকে মারতে পারতেন না। কেউ দুষ্টামি করলে সে সহ তার আশপাশের ৪/৫ জনে সমান হারে বেত্রাঘাত গ্রহন করত। এজন্য আমারা সকলে স্যার কে অনেক বেশি ভয় পেতাম এবং আতঙ্কে আতঙ্কে থাকতাম। আমার মনে আছে ক্লাস এইটে থাকতে তিনি একদিন আমাদের উদ্দেশ্য বলেছিলেন “তোমাদের বয়স এখন কাদাঁ মাঠির বয়স। কুমার যেমন কাদাঁ মাঠি নিয়ে যেভাবে ইচ্ছে বাসন বানায় তোমরাও ঠিক তেমনি তোমাদের মনকে কাদাঁ মাঠির মতো নিয়ন্ত্রন করতে পার। চাইলে ভাল পথে মনকে পরিচালিত করতে পার। আর যদি ইচ্ছে হয় খারাপ পথেও নিয়ে যেতে পার। এই বয়সটা নষ্ট হবার বয়স।” স্যারের কথাগুলো সত্য ছিল তা পরে বুঝেছিলাম। বাংলা ব্যাকারনে বেশ ভাল ছিলাম বলে সব সময় স্যারের ভালোবাসা পেয়েছিলাম।

সুরেশ স্যার: এই সুরেশ স্যার ইংরেজি প্রথম এবং গ্রামার করাতেন। তিনি আবার অনেক ভিতু এবং বেশি রাগী ছিলেন। রেগে গেলে দরজা আটকে উত্তম-মধ্যমও দিতেন যাতে কেউ পালাতে না পারে। আবার কি কারনে যেন স্যার ভয় পেতেন যদি কেউ বলত যে স্যার বিজ্রের কাছে আমার বাড়ি। সিনিয়র ভাইদের থেকে এই ঔষুধের নাম জেনে প্রয়োগ করলেও আমরা কখনো জানতে পারিনি স্যারের রোগের নাম কি। কেনো তার তিব্র রাগ তরলে পরিনত হতো তা আমরা কখনো অনুসন্ধান ও করিনি, স্যারও অসম্বভ ভাল ছিলেন।

জাকারিয়া স্যার: ইসলাম শিক্ষা বিষয়ের স্যার ছিলেন জাকারিয়া স্যার। স্যার সবসময় বড় বড় পড়া দিতেন মুখস্থ,  এক একটা চ্যাপটার মুখস্থ দিতেন। পরিক্ষার খাতায় কত সুন্দর করে লিখতাম কিন্তু স্যার আশানুরূপ কখনো মার্ক দেয়নি। মার্ক দিতে কিপ্টামির পরিচয় পাওয়া গেছে বহুবার। এছাড়াও স্যার চুল এবং নখ পরিক্ষা করতেন। এবং এগুলোর প্রতি স্যারের খুঁতখুঁত করা বেশিই ছিলো। নখ বা চুল বড় থাকলে যে মাইর দিতেন তারজন্য স্যারকে দেখলে অনেকটা পালিয়ে বাচঁতাম।

বাবু সুম্ভুনাথ ঢালিঃ স্যার আমাদের ক্লাস ৮ম এবং
৯ম শ্রেণীতে গণিত করাতেন।  তার মাইর এর স্মৃতি ভোলার মতন নয়। তিব্র মেজাজের অধিকারি ছিলেন। যেন জাদুতেও স্যার কে ভয় পায়। ব্যবসায় বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীরা স্যারের আরও বিস্তার বর্ণনা দিতে পারবে।

আসাদ স্যার: আসাদ স্যারও কি পড়াতেন জানিনা। স্যার আমদের তেমন ক্লাস নেননি। স্যারের সাথে তাই কারো তেমন সম্পর্ক গড়ে উঠেনি। তবে ৮ম শ্রেনীতে তিনি আমাদের ইংরেজি ক্লাস নিতেন।

নতুন বিউটি ম্যাডাম: বিউটি ম্যাডাম আমাদের বিদায়ের বছর যোগদান করেন। অল্প সময়ে তিনিও আমাদের প্রিয় একজন ম্যাডাম হয়ে উঠেন।

অমৃত স্যারঃ অমৃত স্যার আমাদের বিদায়ের বছরে নতুন বিএসসি হিসাবে যোগদান করলেও আমাদের কোনো ক্লাস নিতেন না। তাছাড়া আমরা বিজ্ঞান বিভাগের কেউ স্যার কে সেভাবে মেনে নিতে পারিনি,  না পারার কিছু কারনও ছিলো। অমৃত স্যারের সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক গড়ে উঠেনি। বিদায় লগ্নে আমরা যেদিন নবীন দের মিস্টি মুখ করিয়ে বিদায় নেওয়ার উদ্দেশ্যে স্কুল প্রাঙ্গনে বসেই মিস্টি তৈরির কাজ করছিলাম, সোহেল স্যার, পারভেজ স্যার, এরশাদ স্যার আমাদের সাথে অনেক গল্প করছিলেন কিন্ত অমৃত স্যার কে ডাকলেও আসেননি।

কোচিং এ যাদের হাতে হাতে খড়ি

সোহরাব স্যারঃ আমাদের ক্লাস ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেনী পর্যন্ত তিনিই আমাদের প্রাইভেট শিক্ষাক ছিলেন। সবসময় সবটুকু দিয়েই পড়ানোর চেষ্টা করতেন।

আমার মেজো ভাইয়াঃ নবম শ্রেণির বই পাওয়ার পরপরই সোহরাব স্যার বনবিভাগের একজন অফিসার হিসেবে যোগদান করেন এবং কোচিং এর দায়িত্ব দিয়ে যান আমার ভাইয়ার উপর। একে-তো ব্যাক বেঞ্চের ছাত্র আমি এবং বিজ্ঞান বিভাগের বই ,  তালগোল পাকিয়ে পারতাম না কিছুই একদিন ডাস্টারের ঢিলা খেয়েছি ভাইয়ার থেকে এরপর রাগের ঠেলায় জীববিজ্ঞান এবং পদার্থ বিজ্ঞান এর কয়েক পাতা টানা মুখস্থ করে ফেলি। আমার ব্যাচের বিজ্ঞান বিভাগের সকল ছাত্র ছাত্রীর পাদার্থ এবং জীববিজ্ঞানের ঐ নিদৃষ্ট পৃষ্ঠা গুলো এখনো মুখস্ত আছে বলেই মনে করি।

বুলবুল স্যারঃ মেজো ভাইয়ার পড়ালেখার জন্য শহরে পাড়ি দেওয়ার পর  ১০ম শ্রেনীতে উঠে এই স্যারের ক্লাস করার সুযোগ হয়,  আমাদের ২ ব্যাচ সিনিয়র হলেও একজন আদর্শ প্রাইভেট শিক্ষাক ছিলেন তিনি। আমাদের বিজ্ঞানের সকল বিষয়ের একমাত্র প্রাইভেট শিক্ষক।

সেলিম রেজা স্যার: প্রেজেন্ট ইন্ডিফিনিট টেন্সের রিয়েল লাইফ এক্সামপলটা সেলিম স্যারের কাছ  থেকে শিখেছিলাম। মনে আছে একবার তিনি ক্লাসে কলম দিয়ে সাদা বোর্ডে কিছু লিখলেন তারপর সেটা মুছে বললেন এটাই হল প্রেজেন্ট ইন্ডিফিনিট। স্যারের কাছ থেকে সব সময় বন্ধুর আচরন পেয়েছি। স্যারকে কখনো স্যার বলে মনে হয়নি।

মোহাম্মদ আলি স্যারঃ নাম মোহাম্মদ আলি হলেও আমরা স্যারকে MD স্যার বলেই চিনতাম। স্যার আমাদের গণিত করাতেন প্রাইভেটে।

তাছাড়াও আমাদের আরো স্কুল এবং প্রাইভেট শিক্ষক ছিল - গুরা বড়াল স্যার , লোকমান স্যার, ইনসান স্যার, জমির স্যার  যাদের চরিত্র হারিয়ে গেছে মস্তিষ্ক নামক মানব হার্ডডিস্ক থেকে।

  

লেখাটি ক্রমবর্ধমান। অনেক বন্ধুর নাম ভুলে গেছি সাথে অনেকের চরিত্রও।ছোট বেলার ছোট ছোট স্মৃতিগুলো সহজে মনে করা সহজ নয়। কেউ ভুল ধরিয়ে দিলে খুশি হই।

Leave a Comment