এইচএসসি বিএম দ্বাদশ শ্রেণীর ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা ২ ১০ম সপ্তাহের এসাইনমেন্ট উত্তর ২০২১ | HSC BM 12th class Business Organization and Management 10th Week Assignment Answer 2021

এসাইনমেন্ট শিরোনামঃ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে নিয়ন্ত্রনের ধারণা বিশ্লেষণ।

শিখনফল/বিষয়বস্তু :

প্রতিষ্ঠানের পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচী যথাযথভাবে পালন হচ্ছে কিনা? তা আমরা বুঝতে পারবাে।

নির্দেশনা (সংকেত/ ধাপ/ পরিধি): 

নিয়ন্ত্রনের ধারণা ব্যাখ্যা করতে হবে।

নিয়ন্ত্রনের আর্দশ বা নীতিমালা বর্ণনা করতে হবে। 

নিয়ন্ত্রনের কৌশল বা উপায় আলােচনা করতে হবে।

প্রতিষ্ঠানের শৃংখলা বজায় রাখতে নিয়ন্ত্রন কিভাবে ভুমিকা রাখবে? ব্যাখ্যা করতে হবে।

এইচএসসি বিএম দ্বাদশ শ্রেণীর ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা ১০ম সপ্তাহের এসাইনমেন্ট উত্তর ২০২১ | HSC BM 12th class Business Organization and Management 10th Week Assignment Answer 2021

নিয়ন্ত্রনের ধারণা ব্যাখ্যা

ব্যবস্থাপনার সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক কাজ হলো নিয়ন্ত্রণ। প্রাতিষ্ঠানিক জগতে নিয়ন্ত্রণ বলতে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ও পরিকল্পনা অনুযায়ী কার্যাবলি সম্পাদিত হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য কার্যফল পরিমাপ করা এবং কোন বিচ্যুতি হলে তা সংশোধনের ব্যবস্থা গ্রহণ করাকে বুঝানো হয়।

পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ হচ্ছে কিনা কিংবা নির্ধারিত মান অনুসারে কাজকর্ম চলছে কিনা তা দেখাই নিয়ন্ত্রণের কাজ। কার্যক্ষেত্রে কোন রকম ত্রুটি-বিচ্যুতি ধরা পড়লে তার কারণ চিহ্নিত করার পর যথাযথ সংশোধনী এনে নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ায় তা দূর করা হয়। সে কারণে নিয়ন্ত্রণকে নিয়াময়মূলক ব্যবস্থাও বলা হয়। পরিকল্পনা ও নিয়ন্ত্রণ ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। পরিকল্পনা না থাকলে নিয়ন্ত্রণ মূল্যহীন। কেননা পূর্ব-পরিকল্পনা বা নির্ধারিত মান অনুযায়ী নিয়ন্ত্রণ কার্য পরিচালিত হয়ে থাকে।

নিয়ন্ত্রনের আর্দশ বা নীতিমালা বর্ণনা

ইতোমধ্যে আমরা জেনেছি, পরিকল্পনা অনুযায়ী কার্য সম্পাদিত হচ্ছে কিনা বা নির্বাচিত মানের সাথে বিচ্যুতি হচ্ছে কিনা তা নিরূপণ করে নিরাময়মূলক ব্যবস্থাগ্রহণ করাই নিয়ন্ত্রণ। সুতরাং নিয়ন্ত্রণ একটি প্রক্রিয়া। কোন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার সময় কতিপয় নীতিমালা অনুসরণ করতে হয়। আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, কতিপয় নীতিমালা আবার কী? আসুন, প্রতিষ্ঠানে নিয়ন্ত্রণের নীতিমালা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করি।

১. উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন : একটি প্রতিষ্ঠান বিশেষ লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে পরিকল্পনা প্রণয়ন করে। পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার জন্য যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে কার্যকর করা না হলে মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হবে না।

২. দক্ষতার নীতি : নির্ধারিত মানের সাথে বিচ্যুতি নিরূপণের বিষয়টি অবশ্যই ব্যয় সাশ্রয়ী হতে হবে। পরে তা সংশোধনের ব্যবস্থা নিতে হয়। নিয়ন্ত্রণ খরচ অবশ্যই স্বল্প হওয়া প্রয়োজন। বিষয়টিতে অবশ্যই সুনিয়ন্ত্রণের পরিচয় থাকতে হবে।

৩. সরলতার নীতি : নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি জটিল ও দুর্বোধ্য হলে তা বাস্তবায়ন করা কঠিন হয়ে পড়ে। সে জন্য সহজ ও নির্ধারিত নিয়ামক ব্যবহার করে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। মূলতঃ এটিই সরলতার নীতি।

৪. দায়িত্ব অর্পন: যখন একটি পরিকল্পনা করা হয় তখনই নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বভার সংশ্লিষ্ট নির্বাহীকে অর্পণ করা হয়। নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব অর্পণের কারণে নির্বাহীর দায়িত্ব পালনে তৎপরতা বৃদ্ধি পায়। এতে নিয়ন্ত্রণের ফলাফল ভাল হয়। এটাই মূলতঃ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব অর্পণ নীতি।

৫. পরিকল্পনার সাথে সম্পৃক্ততা : পরিকল্পনার সাথে উদ্দেশ্য কীভাবে অর্জিত হবে তার রূপরেখা লিখিত থাকে। সে কারণে নিয়ন্ত্রণকে অবশ্যই পরিকল্পনা অনুসরণ করতে হবে। আর এটাই মূলত: পরিকল্পনার সাথে সম্পৃক্ততার নীতি।

৬. নির্ধারিত মান : নিয়ন্ত্রণকালে পরিকল্পনার সময় নির্ধারিত মানের সাথে প্রকৃত অবস্থার তুলনা করে বিচ্যুতি শনাক্ত করা হয়। সে কারণে নানা বিষয় বিচার-বিবেচনা করে নির্ধারিত মান প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। এটাই মূলত: নির্ধারিত মান নীতি।

৭. যথোপযুক্ততা নীতি : এ নীতি অনুযায়ী নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব ও কর্তৃত্বের সাথে সামঞ্জস্য রেখে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা পরিচালনা করা প্রয়োজন।

৮. নমনীয়তা নীতি : পরিকল্পনার সথে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার সামঞ্জস্য বজায় রাখার জন্য নিয়ন্ত্রণ কাঠামো নমনীয় হওয়া প্রয়োজন। নমনীয়তার পরিবর্তে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কঠিন হলে তা বাস্তবায়ন সম্ভব নাও হতে পারে।

৯. ব্যতিক্রম : কোন কাজের প্রক্রিয়া যখন চলমান থাকে, তখন যেসব কাজ বা বিচ্যুতি ব্যতিক্রমধর্মী সেগুলোর প্রতি মনোনিবেশ করলে নিয়ন্ত্রণের ফলপ্রসুতা বেড়ে যায়। সে কারণে নিয়ন্ত্রণের সময় এ বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করতে হয়।

১০. প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ : নিয়ন্ত্রণকালে নির্বাহী ও অর্ধস্তন কর্মীর মধ্যে অবশ্যই প্রত্যক্ষ যোগাযোগ ঘটে। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা কর্মী দক্ষ হলে প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন হ্রাস পায়।

১১. ভবিষ্যৎ নির্দেশনা: নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে একটি বিচ্যুতি ধরা পড়লে এর জন্য সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। এটি বাস্তবায়নের জন্য আবার পরিকল্পনা করতে হয়। তাই নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এমন হওয়া উচিত যাতে ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কে সঠিক দিক নির্দেশনা পাওয়া যায়।

১২. চলমানতা : পরিকল্পনা যেমন প্রতিষ্ঠানের একটি চলমান বা অব্যাহত প্রক্রিয়া, তেমনি পরিকল্পনার মত নিয়ন্ত্রণও একটি চলমান প্রক্রিয়া হওয়া প্রয়োজন।

উপর্যুক্ত আলোচনায় দেখা যায় যে, নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পরিকল্পিত কাজের সাথে প্রকৃত কাজের ব্যবধান নিরূপণ করা হয়। নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ায় এ নীতিগুলো অনুসরণ করা হলে তা অবশ্যই ফলপ্রসূ হবে।


নিয়ন্ত্রনের কৌশল বা উপায় আলােচনা

প্রতিষ্ঠানের কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বর্তমানে যে সব নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বা কৌশল ব্যবহার করা হয়ে থাকে তা নিচে আলোচনা করা হল ঃ

১. বাজেট : বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় গুরুত্বপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ কৌশল হচ্ছে বাজেটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ। পরিকল্পনাকে যখন সংখ্যায় প্রকাশ করা হয়, তখন তাকে বাজেট বলা হয়। এ পদ্ধতিতে বাজেটের মাধ্যমে মান নির্ধারণ করা হয় এবং পরে তার সাথে অর্জিত ফলাফল তুলনা করা হয়। কোন বিচ্যুতি বা পার্থক্য থাকলে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। সংখ্যায় প্রকাশযোগ্য বিধায় এটি খুব জনপ্রিয়।

২. পরিসংখ্যানিক উপাত্ত : সংখ্যাভিত্তিক তথ্য পরিসংখ্যান পদ্ধতির সাহায্যে বিচার বিশ্লেষণ করে নিয়ন্ত্রণ কাজ করা যায়। যেমন, বিক্রয় কিংবা ব্যয় শতকরা কতভাগ বৃদ্ধি পেল বা হ্রাস পেল তা পরিসংখ্যান পদ্ধতিতে বের করা যায়। ‘কালীন সারণি’বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রকৃত তথ্যের তুলনা করে সহজে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

৩. বিশেষ প্রতিবেদন বিশ্লেষণ : কোন নির্দিষ্ট সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে বিশেষ প্রতিবেদন সহায়তা করে থাকে। কোন কাজের উপর নির্দিষ্ট সময় অন্তর পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন প্রণয়নের ব্যবস্থা থাকলে তার ফলাফলের ভিত্তিতে নির্বাহী সঠিক ও সুষ্ঠুভাবে প্রাতিষ্ঠানিক কার্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।

৪. কার্য নিরীক্ষা : নিয়ন্ত্রণের আর একটি কৌশল হচ্ছে কার্য নিরীক্ষার ব্যবস্থা করা যা প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে স্বাধীনভাবে ও নিয়মিতভাবে কাজের মূল্যায়ন করে থাকে। এ কাজটি কোন কর্মচারী বা অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষক (রহঃবৎহধষ ধঁফরঃড়ৎ) সম্পাদন করে থাকে। ব্যবসায়ের হিসাব, অর্থ সংস্থান ইত্যাদি ক্ষেত্রে এরূপ নিরীক্ষা অনুসরণ করা হয়। তবে অন্যান্য কাজেও এটি প্রয়োগ করা যায়।

৫. ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ : ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণের দ্বারাও প্রতিষ্ঠানের কার্য নিয়ন্ত্রণ করা যায়। প্রতিষ্ঠানের নির্বাহীরা ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে অধস্তনদের কাজের ভুল-ত্রুটি নির্ণয় করেন। এ পদ্ধতিতে পরে তিনি পরামর্শ ও নির্দেশনা দিয়ে সংশোধনমূলক কার্য সম্পাদন করেন।

৬. তথ্য প্রযুক্তি : নিয়ন্ত্রণের একটি আধুনিক কৌশল বা উপায় হল তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে সুষ্ঠু তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক কার্যের পরিকল্পনা ও নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়। এ কারণে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে।

৭. গ্যান্ট চার্ট : নামক একজন ব্যবস্থাপনা বিশারদ ‘সময় ও ঘটনা নেটওয়ার্ক’ ঃ: বিশ্লেষণের যে চার্ট তৈরি করেন, তা-ই গ্যান্ট চার্ট নামে পরিচিত। এটি পরিকল্পনা অনুযায়ী সঠিক সময়ে সঠিক কার্য সম্পাদনের নির্দেশিকা হিসেবে কাজ করে। এ কারণে কার্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে এটি এক গুরুত্বপূর্ণ কৌশল।

৮. পার্ট : এটি হল একটি কার্যপ্রণালি মূল্যায়ন কৌশল। এ কৌশলের দ্বারা কাজের বিভিন্ন অংশের সময় ও ব্যয়ের সনাক্তকরণ এবং মূল্যায়ন করা হয়। ফলে এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের কার্য সুষ্ঠুভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

৯. সমচ্ছেদ বিন্দু বা ব্রেক-ইভেন বিশ্লেষণ : এটি একটি রেখাচিত্র পদ্ধতি। এর মাধ্যমে আয় ও ব্যয়ের মধ্যকার সম্পর্ক বিশ্লেষণ করা হয়। সমচ্ছেদ বিন্দু হচ্ছে সেই বিন্দু যেখানে আয় ও ব্যয় সমান হয়। এটি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার একটি বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতি।

১০. প্রোগ্রাম বাজেটিং: বৃহৎ উৎপাদনমূলক প্রতিষ্ঠানে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা ও নিয়ন্ত্রণ কৌশল। এ ধরনের বাজেট দ্বারা প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনের নিমিত্ত সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়। এতে মুনাফার সাথে ব্যয়ের বিষয়টি সঠিক আছে কি-না তা নির্ণয় করা সম্ভব হয়।

উল্লিখিত কৌশলগুলো ছাড়াও তথ্য বিশ্লেষণ, কম্পিউটারের ব্যবহার, কর্মদক্ষতা মূল্যায়ন, প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে তিরস্কার ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা, উদাহরণ বা দৃষ্টান্ত স্থাপন, স্থায়ী নিয়ম প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ কার্য সম্পাদন করা হয়ে থাকে।

প্রতিষ্ঠানের শৃংখলা বজায় রাখতে নিয়ন্ত্রন কিভাবে ভুমিকা

নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া কতকগুলো ধারাবাহিক পদক্ষেপের সমষ্টি। নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া বা পদক্ষেপ সম্পর্কে বিভিন্ন ব্যবস্থাপনা বিশারদ ভিন্ন ভিন্ন মতামত দিয়েছেন। নিয়ন্ত্রণের ৩টি ধাপ, যথা মান নির্ধারণ, কার্যফল পরীক্ষা ও রিপোর্ট প্রণয়ন এবং সংশোধনমূলক ব্যবস্থার কথা বলেছেন। নিউপোর্ট ও ট্রি ওয়াথা ৫টি কাযর্, যথা মান নির্ধারণ, কার্য পরিমাপকরণ, মানের সাথে কার্যফলের তুলনাকরণ, এ দুয়ের পার্থক্য পরিমাপ এবং সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেছেন। এগুলো বিবেচনা করে আমরা নিয়ন্ত্রণের নিম্নোক্ত পাঁচটি পদক্ষেপ আলোচনা করবোঃ

১. মান নির্ধারণ : নিয়ন্ত্রণ কার্যের প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে আদর্শ মান প্রতিষ্ঠা। মান হচ্ছে পরিকল্পনার কতকগুলো নির্ধারিত বিন্দু যার দ্বারা ব্যবস্থাপক পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ হচ্ছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। প্রত্যেকটি মান সুনির্দিষ্ট হয়। প্রত্যেক মান অর্জনের জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য কি হবে তার উপর ভিত্তি করেই মান নির্ধারণ করা হয়।

২. সম্পাদিত কাজের পরিমাপকরণ : দ্বিতীয় পর্যায়ে নির্ধারিত মানের বিপরীতে প্রকৃত কার্যফল পরিমাপ করে দেখা হয়। অর্থাৎ এক্ষেত্রে পরিকল্পনা মোতাবেক কতটুকু কার্য সম্পাদিত হয়েছে তা নিরূপণ করা হয়। ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ, তথ্য সংগ্রহপূর্বক তা বিশ্লেষণ ইত্যাদি পদ্ধতি ব্যবহার করে কাজের অগ্রগতি বা ফলাফল পরিমাপ করা হয়ে থাকে।

৩. মানের সাথে সম্পাদিত কাজের তুলনা :নিয়ন্ত্রণের তৃতীয় পদক্ষেপে নির্ধারিত মানের সাথে প্রকৃত কার্যফলের তুলনা করা হয়। আদর্শ মান বা প্রত্যাশিত ফলাফলের সাথে সম্পাদিত কার্যফলের তুলনা করে কোন রকম বিচ্যুতি থাকলে তাও নিরূপণ করা হয়। তবে যে সকল মান সংখ্যায় প্রকাশ করা যায় না, তা তুলনা করা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। যেমন, একটি মান হলো ‘গ্রাহকদের সন্তুষ্টি বৃদ্ধি’। এরূপ মান সংখ্যাত্মক না হওয়ায় মূল্যায়ন করা যথেষ্ট দুরূহ।

৪. বিচ্যুতির কারণ নির্ধারণ : আদর্শ মানের সাথে সম্পাদিত কার্যফলের কোন বিচ্যুতি বা পার্থক্য দেখা গেলে এ পর্যায়ে সঠিকভাবে তা নিরূপণ করা হয় এবং তা যথাযথ বিশ্লেষণ করে বিচ্যুতির কারণ নির্ধারণ করা হয়। পরে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য কারণ নির্ধারণ অপরিহার্য বিষয়।

৫. সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ : নিয়ন্ত্রণের সর্বশেষ পদক্ষেপ হচ্ছে বিচ্যুতি বা ভুলত্রুটি শোধরানো। বিচ্যুতি নির্ধারণ ও তার সঠিক কারণ নিরূপণের পর এ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এক্ষেত্রে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা হিসেবে অতিরিক্ত কর্মী নিয়োগ, অধস্তনদের প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন, কর্মী বরখাস্তকরণ ইত্যাদি পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। কাঁচামালের সরবরাহে কোন দুর্বলতা আছে কিনা, উৎপাদনে গাফিলতি রয়েছে কি-না ইত্যাদি বিষয়গুলো চিহ্নিত করেও সংশোধনমূলক ব্যবস্থা নেয়া যেতে পেরে। সংশোধনমূলক পদক্ষেপের মধ্য দিয়েই কোন প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের পরিসমাপ্তি ঘটে।

Leave a Comment