অ্যাসাইনমেন্ট শিরো নাম : বিজ্ঞাপন জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সহায়ক। বাংলাদেশে বিজ্ঞাপন পেশার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ অবস্থা সর্ম্পকে আলোচনা

শিখনফল/বিষয়বস্তু :

বিজ্ঞাপন ও প্রচার এর ধারণা
বিজ্ঞাপন মাধ্যম 
বিজ্ঞাপন অপচয় এর অভিযোগ
বিজ্ঞাপন পেশার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ অবস্থ

নির্দেশনা (সংকেত/ ধাপ/ পরিধি): 

বিজ্ঞাপন ও প্রচার এর ধারণা বর্ণনা করতে হবে।
বিজ্ঞাপন মাধ্যম এর ধারণা বর্ণনা করতে হবে।
বিজ্ঞাপন অপচয় এর অভিযোগ বর্ণনা করতে হবে।
বিজ্ঞাপন পেশার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ অবস্থা বর্ণনা করতে হবে।

এইচএসসি বিএম ১২শ শ্রেনীর মার্কেটিং নীতি ও প্রয়োগ ২য় পত্র ৯ম সপ্তাহের এসাইনমেন্ট উত্তর | HSC BM Marketing Policy and Application 2nd Paper 9th Week Assignment Answer


এইচএসসি বিএম ১২শ শ্রেনীর মার্কেটিং নীতি ও প্রয়োগ ২য় পত্র ৯ম সপ্তাহের এসাইনমেন্ট উত্তর | HSC BM Marketing Policy and Application 2nd Paper 9th Week Assignment Answer

বিজ্ঞাপন ও প্রচার এর ধারণা বর্ণনা


বিজ্ঞাপন কি?
যে কোন প্রোডাক্ট বা সার্ভিসগুলোকে বিক্রি বা প্রমোট করার উদ্দেশ্যে প্রচার করার প্রক্রিয়াকেই বিজ্ঞাপন বলা হয়। যেমন-আপনি যখন ইউটিউবে কোন ভিডিও দেখেন তখন নানা ধরণের প্রোডাক্ট বা সার্ভিস নিয়ে আমাদের অ্যাড দেখানো হয়। আমাদের মাঝে প্রচার করে সেগুলো জনগণকে কেনাতে উৎসাহিত করা।

প্রচার কি?

প্রচার হল প্রক্রিয়া, পদ্ধতি এবং কৌশলগুলির সেট যা দ্বারা কোনও বার্তা সমর্থক বা অনুগামীদের আকর্ষণ করার উদ্দেশ্যে বা মানুষের আচরণকে প্রভাবিত করার লক্ষ্যে প্রচার বা প্রচার করা হয়।

প্রচার একটি যোগাযোগের ফর্ম যা প্রাচীন কাল থেকেই কোনও কিছুর প্রতি সম্প্রদায়ের মনোভাবকে প্রভাবিত করার লক্ষ্য রয়েছে।

বিজ্ঞাপন মাধ্যম এর ধারণা বর্ণনা

বিজ্ঞাপন এর প্রকার বা বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যম প্রচুর রয়েছে।

এই প্রকার গুলির মধ্যে প্রায় প্রত্যেকটি অনেক অধিক পরিমানে ব্যবহার করা হচ্ছে।

Online advertising (Digital advertising) : ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচার। এই ক্ষেত্রে, Google ads, Facebook ads, LinkedIn, Twitter ads, Instagram ads, এগুলি বিজ্ঞাপন প্রচারের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্লাটফর্ম।

Cell phone (Mobile advertisement) : ডিজিটাল আডভার্টাইসিং এর ক্ষেত্রে, mobile, smartphones, iPad বা অন্যান্য portable electronic device গুলিতে ইন্টারনেট সংযুক্ত করে বিজ্ঞাপন প্রচার করা সম্ভব।
Print advertising : Magazine, newspaper, brochures, paper banner, leaflets এবং আরো অন্যান্য কিছু মাধ্যমে printing এর মাধ্যমে করা বিজ্ঞাপনের প্রচার গুইলিকেই print advertising বলা হয়।
Email advertising : এই ক্ষেত্রে, ইন্টারনেট এবং ইমেইল (email) এর মাধ্যমে বিজ্ঞাপন পাঠানো হয়।
Media advertising : বিভিন্ন media technology যেমন, টিভি (TV), radio, DVD ইত্যাদি প্রক্রিয়া গুলির মাধ্যমে করা advertising কে, media advertising এ ধরা যেতে পারে।
এছাড়া, আরো অন্যান্য অনেক মাধ্যম বা প্রকারভেদ রয়েছে বিজ্ঞাপনের।

তবে, ওপরে আমি বলা গুলি বর্তমানে সব থেকে অধিক পরিমানে ব্যবহার করা হয়।

বিজ্ঞাপন মাধ্যম বলতে এমন কোনো উপায় বা অবলম্বনকে বুঝায় যার মাধ্যমে বিজ্ঞাপনের বিষয়বস্তুকে জনসমুক্ষে তুলে ধরা হয়। প্রত্যাশিত ক্রেতাসাধারণের নিকট বিক্রয় সংক্রান্ত সংবাদ পৌঁছানোর প্রক্রিয়াকেই বিজ্ঞাপন মাধ্যম বলা হয়। নিম্নে বিজ্ঞাপনে বহুল ব্যবহৃত মাধ্যমসমূহ আলোচনা করা হলো

১. সংবাদপত্র : সকল ধরনের পণ্য ও সেবা প্রচারে সংবাদপত্র একটি স্বল্প ব্যয়সাপেক্ষ অথচ দ্রুত দূর-দূরান্তের জনগণের নিকট বার্তা পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে সক্ষম একটি সহজ মাধ্যম। এরূপ মাধ্যমের সুবিধা হলোকম খরচে, সহজেই এর বিষয়বস্তু পরিবর্তন করা যায় এবং প্রয়োজনানুযায়ী একবার বা একাধিকবার প্রচার করা যায়। তবে এর অসুবিধা হলো, শুধুমাত্র শিক্ষিত মানুষ এবং যাদের কাছে পত্রিকা পৌঁছে তারাই এই ধরনের বার্তা সম্পর্কে জানতে পারে। এ ছাড়া এই মাধ্যমের আবেদন অত্যন্ত ক্ষণস্থায়ী।

২. সাময়িকী: সাপ্তাহিক, মাসিক, পাক্ষিক, বাৎসরিক সাময়িকীতে উন্নতমানের কাগজে মুদ্রণ ও রংবেরঙের চিত্রের মাধ্যমে বিজ্ঞাপনকেআকর্ষণীয় করে তোলা যায়। এর স্থায়িত্ব সংবাদপত্র অপেক্ষা বেশি। এই ধরণের সাময়িকী বেশি সময় ধরে পাঠক পাঠ করে।বিশেষ ধরনের পণ্য বিশেষ শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর সামনে তুলে ধরার ক্ষেত্রে এটিও সংবাদপত্রের ন্যায় একটি স্বল্প ব্যয়সাপেক্ষ মাধ্যম।

৩. প্রচারপত্র : পণ্যসামগ্রীরবৈশিষ্ট্য, গুণাগুণ, উপযোগিতা, বিক্রয় প্রসার ইত্যাদি সম্বলিত প্রচারপত্র ছাপিয়ে জনবহুল স্থানে লোক মারফত বিলি করা বা ডাকযোগে মানুষের নিকট প্রেরণ এ ধরনের বিজ্ঞাপনের বৈশিষ্ট্য। এর সুবিধা হলো, এরূপ মুদ্রিত প্রচারপত্র পড়ে জনসাধারণ সহজেই পণ্য সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ করতে পারে। তবে এর অসুবিধা হলো অনেকেই এই প্রচারপত্র না পড়ে ফেলে দেয় এবং বিলি করাও অনেক কষ্টকর। আবার বিজ্ঞাপিত পণ্যের গুণাগুণ সম্পর্কে প্রায় লোকই সন্দেহ পোষণ করে।

৪. প্রাচীরপত্র : বড় বড় হরফে পোস্টার লিখে বা ছাপিয়ে লোক চলাচলের স্থানে, বাসস্ট্যান্ডে রাস্তার মোড়ে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। ফলে সহজেই বিজ্ঞাপন বার্তা জনগণের নজরে আসে।

৫. বিজ্ঞাপনী ফলক : রাস্তার মোড়ে, গুরুত্বপূর্ণ স্থানে কাঠ বা হার্ডবোর্ডের বিজ্ঞাপনী ফলক তৈরি করে তার ওপর পণ্য বা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দেয়াটা প্রাচীনকাল হতেই একটা জনপ্রিয় বিজ্ঞাপনী মাধ্যম। এটি অনেকটা স্থায়ী প্রকৃতির, যে কারণে অনেকদিন তা বিজ্ঞাপন সুবিধা প্রদান করে। বড় বড় বিল্ডিংয়ের গায়ে বা ছাদে ও স্টেডিয়ামগুলোতে এরূপ ফলক তৈরি করে বিজ্ঞাপন দেয়া হয়।
 
৬. রেডিও : বিজ্ঞাপনের জন্য বর্তমানে উন্নত ও অনুন্নত প্রায় সকল দেশেই রেডিও একটি জনপ্রিয় মাধ্যম যা ব্যবহার করে পণ্য সম্বন্ধে সংক্ষিপ্ত বার্তা অত্যন্ত চমৎকারভাবে তুলে ধরা হয়। এর মাধ্যমে শহর ও গ্রামের সকল অঞ্চলের শিক্ষিত-অশিক্ষিত বিপুল জনগোষ্ঠীর নিকট পণ্য বার্তা পৌঁছে দেয়া যায়।

৭. টেলিভিশন: সমগ্র বিশ্বজুড়ে দ্রুত পণ্য ও সেবা প্রচারে টেলিভিশন একটি অত্যন্ত সুপরিচিত ও কার্যকরী মাধ্যম। এর মাধ্যমে ব্যাপক জনগোষ্ঠীর সামনে পণ্য বা সেবার আবেদন সহজে ও চমৎকারভাবে তুলে ধরা যায়। এ মাধ্যমের বড় অসুবিধা হলো এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল।

৮. সরাসরি ডাক মারফত বিজ্ঞাপন : চিঠিপত্র, কার্ড, পঞ্জিকা, পুস্তিকা, মূল্য তালিকা, প্রচার পত্র ইত্যাদি এই ধরনের বিজ্ঞাপনের অন্তর্ভূক্ত। বিশেষ বিশেষ ব্যক্তি সাধারণত সপিং পণ্যের উৎপাদক ও ডিলারদেরনিকট পণ্যের বিক্রয় সংবাদ প্রেরণের জন্য এ পদ্ধতির ব্যবহার করা হয়। সাধারণভাবে

জনসাধারণের নিকট তথ্য প্রেরণের জন্য ও সম্ভাব্য গ্রাহকদের ঠিকানা জানা না থাকলে এ পদ্ধতি কার্যকর হয়না। তাছাড়া, এতে মুদ্রণ খরচ ও ডাক খরচ মিলিয়ে বিজ্ঞাপন ব্যয় অনেক বেড়ে যায়।

৯. উন্মুক্ত স্থানে বিজ্ঞাপন : শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে যেখানে সর্বদা বহু লোকের সমাবেশ হয় অথবা প্রাত্যাহিক কাজে যাতায়তের পথে খোলা জায়গায় বৈদ্যুতিক সাইন, পোস্টার বা রঞ্জিত সাইনবোর্ডে পণ্যসামগ্রীর বিজ্ঞাপন দেয়া হয়। লোকজন পথ চলার সময় সেগুলো দেখে, পড়ে এবং আকৃষ্ট হয়। ফলে এ ধরনের বিজ্ঞাপন তাদের মনে স্থায়ী দাগ কাটতে সক্ষম হয় এবং তারা বিজ্ঞাপিত পণ্য ক্রয় করতে আগ্রহী হয়।

১০. ডিজিটাল বিজ্ঞাপন : বিপণনকারী মোবাইল/সেলুলার নেটওয়ার্ক বা ইন্টারনেটেরমাধ্যমে পণ্য বা সেবা সম্পর্কে তথ্য প্রদান করে ও ক্রয়ে উৎসাহ প্রদান করে। বর্তমান সময়ে ক্রেতা ও ভোক্তা জগতে বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ও ইন্টারনেট ব্যবহার জনপ্রিয় হবার কারণে ডিজিটাল বিজ্ঞাপন বেশ জনপ্রিয়। কিন্তু যারা ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস বা ইন্টারনেট ব্যবহার করে না বা ব্যবহারের সুযেগা নেই, তারা বিপণনকারীর বিজ্ঞাপন সম্পর্কে অবগত থাকে না।

১১. পরিবহন বিজ্ঞাপন : বিভিন্ন প্রকার গাড়ি বিশেষ করে ট্রাক বা বাস, ট্যাক্সি, রিকশার গায়ে পণ্যের বিবরণ লিপিবদ্ধ করে পণ্য বিজ্ঞাপিত করা হয়।

১২. নমুনা : প্রদর্শনীতে শিল্পজাত, কৃষিজাত ও অন্যান্য দ্রব্যের স্টল খুলে কার্যকরীভাবে জনসাধারণের নিকট পণ্যের সংবাদ পৌঁছিয়ে দেয়া যায়। অসংখ্য লোক প্রদর্শনীতে এসে ঘুরে ফিরে বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করে এবং বিভিন্ন পণ্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়। সেবাপণ্য এবং ওষুধাদির ক্ষেত্রে নমুনা বিজ্ঞাপনের ব্যাপক প্রচলন দেখা যায়।

১৩. সিনেমা স্লাইডস (: সিনেমার পর্দায় রং-বেরঙের ছবির সাথে পণ্যের গুণাগুণ তুলে ধরে বিজ্ঞাপন দেয়া হয়। মাধ্যম হিসেবে এটি অনেকটা টেলিভিশনের মতো। তবে শুধুমাত্র সিনেমা হলের সীমিত দর্শকই এ সম্পর্কে জানতে পারে।

১৪. নিয়ন আলো : ব্যস্ততম রাস্তার পাশে বা মোড়গুলোতে নিয়ন আলোর সাহায্যে আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন প্রদান করা হয়। এতে নানান ধরনের আলোর ব্যবহার করে বিজ্ঞাপনকে সহজেই জনসাধারণের দৃষ্টিগ্রাহ্য করে তোলা যায়। এরূপ বিজ্ঞাপনের সুবিধা হলো তা দীর্ঘদিন ধরে বিজ্ঞাপনের সুবিধা প্রদান করে। তবে অসুবিধা হলো এর প্রাথমিক ব্যয় অনেক বেশি এবং দিনের বেলায় এর কার্যকারিতা কম।

১৫. অন্যান্য মাধ্যম : উপরিউক্ত মাধ্যমসূহ ছাড়াও আরও কয়েক প্রকার বিজ্ঞাপন মাধ্যমের প্রচলন রয়েছে। এগুলো তেমন গুরুত্বপূর্ণ না হলেও অনেকে ব্যবহার করে থাকেন। এগুলোর মধ্যে বৈদ্যুতিক আলোকজ্জা, ক্যালেন্ডার,ডায়রী, নববর্ষের শুভেচ্ছা কার্ড, ঈদকার্ড বা পূজা কার্ড, ডাইরেক্টরী, টাইম টেবল, বার্ষিক ক্রোড়পত্র প্রকাশ, নাম মুদ্রিত হাত-ব্যাগ, দামী কলমদানী ও এসট্রে ইত্যাদি উল্লেখ্যযোগ্য।

বিজ্ঞাপন অপচয় এর অভিযোগ বর্ণনা

বিজ্ঞাপন কি অপচয় এই প্রশ্নটির উত্তরে আমি আগেই বলব বিজ্ঞাপন অপচয় নয়। এর পেছনে যৌক্তিক কারন বর্ননা করা হলঃ বিজ্ঞাপনকে যে কারনে অপচয় বলা হয়

মূল্য বেড়ে যাওয়া , অর্থের অপচয় বাড়ানো , সামাজিক অপচয় , প্রতারনা ,ক্রেতার স্বাধীনতা হরণ, একচেটিয়া বাজার ,সৃষ্টি ক্ষতিকর

বিজ্ঞাপন ইত্যাদি স্টেপ বিজ্ঞাপনকে অপচয় বলার পেছনে জড়িত ।আবার বিজ্ঞাপনকে যে যে কারনে অপচয় বলা যায় না।তা হল মূল্য ছাড় করে , জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন , শিল্পোন্নয়ন ,প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করা , কর্মসংস্থানের সুযোগ বিক্রি , মুনাফা বাড়ানো এবং আন্তজার্তিক বাজারে প্রবেশ ,

অবগত করা ইত্যাদি স্টেপের প্রকাশ।বিজ্ঞাপন হল এমন একটি মাধ্যম যার দ্বারা আমরা কোন পণ্য সম্পর্কে অবগত হতে পারি যা একটা বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানের জন্যে অনেক গুরুত্বপূর্ন আর যদিও মাঝে মাঝে ভেজাল বা ভুল বা প্রতারনামূলক বিজ্ঞাপন দেয়া হয় তার পরেও বলা হয় বিজ্ঞাপন অবচয় নয়।

বিজ্ঞাপন পেশার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ অবস্থা বর্ণনা


সংবাদপত্রের আয়ের উৎস সার্কুলেশন ও বিজ্ঞাপন। করোনাকালে এ দু’টি উৎসই অতিশয় ক্ষীণ হয়ে পড়েছে। লকডাউনের সময় সংবাদপত্র দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় তো পরের কথা, জেলা শহরেও পাঠানো সম্ভব হয়নি। লকডাউন উঠে যাওয়ার পর সার্কুলেশন সামান্য বেড়েছে। তবে এখনো সাবেক অবস্থায় যেতে অনেক বাকী। আদৌ সাবেক অবস্থায় যাবে কিনা তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। বিজ্ঞাপন কমেছে বললে ভুল হবে, নেই বললেই চলে। এমতাবস্থায়, সংবাদপত্রগুলো চরম আর্থিক সংকটে পতিত হয়েছে। এর ভবিষ্যৎ সম্পূর্ণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

ধ্বংসোন্মুখ সংবাদপত্র রক্ষায় কর্তৃপক্ষীয় তরফে নানা রকম পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে। কোনো কর্তৃপক্ষ বেতন কমিয়ে দিয়েছে সাংবাদিক ও কর্মচারীদের, কোনো কর্তৃপক্ষ কর্মী ছাঁটাইয়ের পথ বেছে নিয়েছে, কোনো কর্তৃপক্ষ আবার অনেককে বাধ্যতামূলক ছুটি দিয়ে দিয়েছে বিনা বেতনে। সাধারণভাবে সব সংবাদপত্র কর্তৃপক্ষই পত্রিকার পৃষ্ঠা সংখ্যা, প্রচার সংখ্য ও রঙিন পৃষ্ঠা কমিয়ে দিয়েছে। এভাবে ব্যয় কমিয়ে, খরচ বাঁচিয়ে সংবাদপত্র রক্ষা করা যাবে কিনা, সে ব্যপারে সকলে একমত নয়। এখন পর্যন্ত হাতে গোনা কয়েকটি সংবাদপত্রে বেতন হচ্ছে। আর সব অনিয়মিত বেতনের বৃত্তে ঢুকে পড়েছে। আগেও অনেক সংবাদপত্রে অনিয়মিত বেতন হতো। এখন এক বেতন থেকে আরেক বেতনের মধ্যে গ্যাপ আরো বেড়েছে। করোনাকালীন এই দুঃসময়ে সাংবাদিক ও সংবাদপত্রের কর্মীরাই সবচেয়ে বেশি বিপন্ন ও অসহায় হয়ে পড়েছে। পেশা হিসাবে সাংবাদিকতা ভবিষ্যতে টিকে থাকবে কিনা সে ব্যাপারেও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

সংবাদপত্রের এই মারাত্মক অস্তিত্ব সংকটের সময়ে সরকারের সহযোগিতা অপরিহার্য ও অত্যাবশ্যক বলে বিবেচিত হলেও এখন পর্যন্ত সরকারের তরফে কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। করোনাকালে সরকার সকল খাতেই প্রণোদনা দিয়েছে, সহায়তা দিয়েছে এবং ক্ষেত্রবিশেষে ছাড় দিয়েছে। একমাত্র ব্যতিক্রম সংবাদপত্র, যাকে কোনো কিছুই দেয়া হয়নি। সংবাদপত্র মালিক সমিতি বিভিন্ন সময়ে সরকারের নানা পর্যায়ে দেনদরবার, আলাপ-আলোচনা করেছে। প্রস্তাব ও দাবিনামা পেশ করেছে। এসব কোনো কিছুই এখন পর্যন্ত ফলপ্রসূ হয়নি। সংবাদপত্র মালিক সমিতি করোনাজনিত পরিস্থিতি উত্তরণে তার প্রস্তাব ও দাবি নিয়ে অর্থমন্ত্রী আহম মোস্তফা কামাল, তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে যখন কথাবার্তা বলে, জানা গেছে, তারা ইতিবাচক সাড়া দেন এবং এ বিষয়ে উদ্যোগ নেবেন বলে আশ্বাস প্রদান করেন। সংবাদপত্র মালিক সমিতি তাদের সেই আশ্বাসের দিকে এখনো চেয়ে আছে।

সংবাদপত্র সুরক্ষার স্বার্থে সংবাদপত্র মালিক সমিতি করপোরেট ট্যাক্স ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ, নিউজপ্রিন্ট আমদানির ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর বাদ, বিজ্ঞাপন আয়ের ওপর উৎসে কর (টিডিএস) ৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ এবং উৎসস্থলে কাঁচামালের ওপর ৫ শতাংশের বদলে অগ্রিম কর (এআইটি) শূন্য শতাংশ করার দাবি জানিয়েছে। সংবাদপত্র সেবাশিল্প হিসাবে অভিহিত। সেবাশিল্প যেসব সুবিধা বা ছাড় পায়, সংবাদপত্র তা পায় না। এ ব্যাপারে সংবাদপত্র মালিক সমিতির বক্তব্য: সংবাদপত্র সেবাশিল্প হওয়া সত্ত্বেও বিশেষ কোনো সুবিধা পাচ্ছে না। যেমন তৈরি পোশাক শিল্প মুনাফা অর্জনকারী শিল্প হওয়া সত্ত্বেও এর করপোরেট ট্যাক্স ১০ থেকে ১২ শতাংশ। সংবাদপত্র সেবাশিল্প হওয়া সত্ত্বেও করপোরেট ট্যাক্স ৩৫ শতাংশ। এবারের বাজেটে সব শিল্পের জন্য ২ দশমিক ৫ শতাংশ করপোরেট ট্যাক্স কমানো হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে সংবাদপত্রের করপোরেট ট্যাক্স ১০ থেকে ১৫ শতাংশ করা জরুরি ছিল। আয়কর অধ্যাদেশ অনুসারে সংবাদপত্রের বিজ্ঞাপন-আয়ের ওপর টিডিএস ৪ শতাংশ এবং উৎসস্থলে কাঁচা মালের ওপর এআইটি ৫ শতাংশ-সহ মোট ৯ শতাংশ। অধিকাংশ সংবাদপত্রের মোট আয়ে ৯ শতাংশ লভ্যাংশই থাকে না। এই প্রেক্ষিতে টিডিএস ৪ থেকে ২ শতাংশ ও এআইটি শূন্য হওয়া উচিৎ। অপর পক্ষে মূল্যসংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইনে সংবাদপত্র ভ্যাট থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত শিল্পের তালিকাভুক্ত। এ শিল্পের প্রধান কাঁচামাল নিউজপ্রিন্ট, যা খরচের অর্ধেকের বেশি। অথচ সংবাপত্রকে ভ্যাট দিতে হচ্ছে ১৫ শতাংশ। সংবাদপত্র মালিক সমিতির মতে, নিউজপ্রিন্ট আমদানির ক্ষেত্রে সংবাদপত্রকে সম্পূর্ণ ভ্যাটমুক্ত করতে হবে, কিংবা সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ ভ্যাট নির্ধারণ করতে হবে।

সংবাদপত্র মালিক সমিতি বিভিন্ন সময় যেসব দাবি, প্রস্তাব এবং বক্তব্য দিয়েছে, তা কার্যকর করা হলে সংবাদপত্র কিছুটা হলেও সুরক্ষা পাবে। তবে সেটাকেই যথেষ্ট বলে মনে করার কারণ নেই। সংবাপত্রকে টেকসই সেবাশিল্পে পরিণত করতে হলে এর আয় বাড়ানোর বিকল্প নেই। আর আয় বাড়াতে হলে তাকে অবশ্যই আয় বাড়ানোর উপযোগী করে তুলতে হবে। করোনাকাল সংবাদপত্রকে যে গভীর সংকটে নিক্ষিপ্ত করেছে, তাতে মালিক কর্তৃপক্ষের সামনে আয় বাড়ানোর কোনো সুযোগ খোলা নেই। আগে অস্তিত্ব রক্ষা, পরে অন্য কিছু। এ জন্য প্রণোদনা ও সহযোগিতা দরকার। সেটা দিতে পারে সরকার। সংবাদপত্র মালিক সমিতি তার এক সাম্প্রতিক বিবৃতিতে প্রণোদনা, সহজ শর্তে ঋণ এবং সরকারের কাছে বিজ্ঞাপনের বিল বাবদ পাওনা টাকা প্রদানের আহবান জানিয়েছে।

Leave a Comment