এসএসসি ২০২১ সালের ভূগোল ৮ম সপ্তাহের এসাইনমেন্ট উত্তর | SSC 2021 Geography 8th Week Assignment Answer

বসতি স্থাপনের নিয়ামক (Factors of settlement)

১। ভূপ্রকৃতি : জনবসতি গড়ে ওঠার পেছনে ভূপ্রকৃতি ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করে। সমতলভূমিতে কৃষিকাজ সহজে করা যায়, কিন্তু পাহাড় এলাকার ভূমি অসমতল হওয়ায় কৃষিকাজ করা তেমন সম্ভব হয় না। ফলে যাতায়াতের সুবিধার জন্য কৃষিজমির নিকটে জনবসতি তৈরি হয়। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে বসতির ঘনত্ব সমতলভূমির তুলনায় কম। ২। পানীয় জলের সহজলভ্যতা : জীবন ধারণের জন্য মানুষের প্রথম ও প্রধান চাহিদা হলাে বিশুদ্ধ পানীয় জল। এজন্যই নির্দিষ্ট জলপ্রাপ্যতার স্থানে মানুষ বসতি গড়ে তােলে। মরুময় এবং উপমরুময় অঞ্চলে ঝরনা অথবা প্রাকৃতিক কূপের চারদিকে মানুষ সংঘবদ্ধ হয়ে বসতি স্থাপন করে। পানীয় জলের প্রাপ্যতার উপর | নির্ভর করে গড়ে ওঠা এই সমস্ত বসতিকে আর্দ্র অঞ্চলের বসতি বলে।

৩। মাটি : মাটির উর্বরা শক্তির উপর নির্ভর করে বসতি স্থাপন করা হয়। উর্বর মাটিতে পুঞ্জীভূত জনবসতি গড়ে ওঠে, কিন্তু মাটি অনুর্বর হলে বিক্ষিপ্ত জনবসতি গড়ে ওঠে। মাটির প্রভাবে জার্মানি, পােল্যান্ড, নরওয়ে, সুইডেন প্রভৃতি দেশে বিক্ষিপ্ত জনবসতির সৃষ্টি হয়েছে। ৪। প্রতিরক্ষা : প্রাচীনকালে প্রতিরক্ষার সুবিধার জন্যই মানুষ পুঞ্জীভূত বসতি স্থাপন করে। বহিরাগত শত্রুর আক্রমণ বা বন্যজন্তুর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মানুষ একত্রে বসবাস করত। কারণ প্রাচীনকালে আত্মরক্ষার জন্য কোনাে আধুনিক অস্ত্রের প্রচলন ছিল না।

৫। পশুচারণ : পশুচারণ এলাকায় সাধারণত ছড়ানাে বসতি দেখা যায়। পশুচারণের জন্য বড় বড় এলাকার দরকার হয়। ফলে নিজেদের সুবিধার জন্য তারা বিক্ষিপ্তভাবে বসতি স্থাপন করে থাকে।


৬। যােগাযােগ : প্রাচীনকাল থেকে যাতায়াত ব্যবস্থার উপর ভিত্তি করে বসতি গড়ে উঠছে। যেমন- নদী তীরবর্তী স্থানে নৌচলাচলের এবং সমতলভূমিতে যাতায়াতের সুবিধা থাকায় এরূপ স্থানগুলােতে পুঞ্জীভূত বসতি গড়ে উঠেছে। মিসরের নীল নদের তীরবর্তী আলেকজান্দ্রিয়া ও তাজিকিস্তানের সমতলভূমিতে সমরকন্দ নগরের উৎপত্তি হয়েছে।


বসতির ধরন (Types of settlement) গ্রামীণ বসতি : 

যে বসতির সংখ্যাগরিষ্ঠ অধিবাসী জীবিকা অর্জনের জন্য প্রথম পর্যায়ের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বিশেষত কৃষির উপর নির্ভরশীল সেই বসতিকে সাধারণভাবে গ্রামীণ বসতি বলে। গ্রামীণ বসতি বিচ্ছিন্ন, বিক্ষিপ্ত ও গােষ্ঠীবদ্ধ এর যে কোনােটি হতে পারে। এর কারণ হলাে গ্রামে প্রচুর জমি থাকে। স্বভাবতই, গ্রামবাসীরা খােলামেলা জায়গায় বাড়ি তৈরি করতে পারেন। ঘরবাড়ির কাঠামােগত বৈশিষ্ট্য, নির্মাণ উপকরণ, বাড়ির নকশা ইত্যাদির বিচারে গ্রামীণ বসতি সহজেই চিনে নেওয়া যায় । শহরের ইট-সিমেন্টের নির্মাণ স্থাপনা থেকে গ্রামের মাটির, কাঠের, পাথরের বাড়িকে সহজেই আলাদা করা যায়। কৃষিপ্রধান গ্রামে গােলাবাড়ি, গােয়ালবাড়ি, ঘরের ভিতরে উঠান এসবই এক অতি পরিচিত দৃশ্য। গ্রামে উঠানের চারপাশ ঘিরে শশাবার ঘর, রান্নাঘর, গােয়ালঘর তৈরি করা হয়। উঠানে গৃহস্থরা ধান সেদ্ধ করা, শুকানাে এবং ধান ভাঙা ছাড়াও নানান কাজ করে থাকে। গ্রামে শােবার ঘর, রান্নাঘর, গােয়ালঘর যেমন আলাদাভাবে গড়ে ওঠে যা শহরে হয় না। বসতবাড়িতে অবস্থান আরামদায়ক হওয়ার জন্য এবং প্রাকৃতিক বায়ুপ্রবাহের সহজ প্রবেশই আলাদাভাবে বসতি গড়ে ওঠার প্রধান কারণ।


গােয়ালবাড়ি, ঘরের ভিতরে উঠান এসবই এক অতি পরিচিত দৃশ্য। গ্রামে উঠানের চারপাশ ঘিরে শশাবার ঘর, রান্নাঘর, গােয়ালঘর তৈরি করা হয়। উঠানে গৃহস্থরা ধান সেদ্ধ করা, শুকানাে এবং ধান ভাঙা ছাড়াও নানান কাজ করে থাকে। গ্রামে শােবার ঘর, রান্নাঘর, গােয়ালঘর যেমন আলাদাভাবে গড়ে ওঠে যা শহরে হয় না। বসতবাড়িতে অবস্থান আরামদায়ক হওয়ার জন্য এবং প্রাকৃতিক বায়ুপ্রবাহের সহজ প্রবেশই আলাদাভাবে বসতি গড়ে ওঠার প্রধান কারণ।

ইত্যাদি নামে চিহ্নিত করা যায়। বালাদেশের বিভিন্ন গ্রামীণ এলাকায় এ ধরনের অনেক গ্রাম রয়েছে।


নগর বসতি : যে বসতি অঞ্চলে অধিকাংশ অধিবাসী প্রত্যক্ষ ভূমি ব্যবহার ব্যতীত অন্যান্য অকৃষিকার্য যেমন- গ্রামীণ অধিবাসীদের উৎপাদিত দ্রব্যাদির শিল্পজাতকরণ, পরিবহন, ক্রয়-বিক্রয়, প্রশাসন, শিক্ষা-সংক্রান্ত কার্য প্রভৃতি পেশায় নিয়ােজিত থাকে, তাকে নগর বসতি বলে। বাহ্যিক দিক দিয়ে বিচার করলে দেখা যায়, শহরে অনেক রাস্তাঘাট ও কোনাে কোনাে ক্ষেত্রে বিশাল বিশাল আকাশচুম্বী অট্টালিকা (Skyscrapper) রয়েছে । এছাড়া বিভিন্ন ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, নার্সিংহােম, আমােদ-প্রমােদের জন্য বহুপ্রকার সংস্থা, পার্ক ইত্যাদি থাকে। বড় বড় শহরের বিভিন্ন অংশে নানা ধরনের কর্মকাণ্ড চলে।


গ্রামীণ বসতির ধরন ও বিন্যাস (Patterns of rural settlements)

অবস্থানের প্রেক্ষিতে ও বাসগৃহসমূহের পরস্পরের ব্যবধানের ভিত্তিতে গ্রামীণ বসতিকে তিন ভাগে ভাগ করা যায় :

১। গােষ্ঠীবদ্ধ বা সংঘবদ্ধ বসতি (Nucleated settlement) : এই ধরনের বসতিতে কোনাে একস্থানে বেশ কয়েকটি পরিবার একত্রিত হয়ে বসবাস করে। এই ধরনের বসতি আয়তনে ছােটগ্রাম হতে পারে, আবার পৌরও হতে পারে। এই ধরনের বসতির যে লক্ষণ চোখে পড়ে তা হলাে এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়ির দূরত্ব কম ও বাসগৃহের একত্রে সমাবেশ। সামাজিক বন্ধন ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্যই বাসগৃহগুলাের মধ্যে পরস্পরের যােগাযােগ ব্যবস্থা গড়ে তােলে। যদি স্থানটি অর্থনৈতিক দিক দিয়ে
উন্নত হয়, তবে সেখানে আরও বসতি ও রাস্তা গড়ে উঠবে। এভাবে একাধিক রাস্তার সংযােগস্থলে বর্ধিষ্ণু বসতিটি কালক্রমে শহর বা নগরে রূপান্তরিত হবে। সমাজবদ্ধ জীব মানুষ তার নিজস্ব প্রয়ােজনে এবং নিরাপত্তার জন্য একত্রে বসবাস করতে চায়। এছাড়া ভূপ্রকৃতি, উর্বর মাটি ও জলের উৎসের উপর নির্ভর করে এ ধরনের বসতি গড়ে ওঠে।

২। বিক্ষিপ্ত বসতি (Dispersed settlement) : এই ধরনের 
বসতিতে একটি পরিবার অন্যান্য পরিবার থেকে ছড়ানাে-ছিটানাে অবস্থায় বসবাস করে ।
কানাডা, যুক্তরাষ্ট্রের খামার বসতি ও অস্ট্রেলিয়ার মেষপালন কেন্দ্র এই ধরনের বসতির উদাহরণ। কখনাে কখনাে দুটি বা তিনটি পরিবার একত্রে বসবাস করে। তবে এক্ষেত্রেও এদের অতি ক্ষুদ্র বসতি অপর ক্ষুদ্র বসতি থেকে দূরে অবস্থান করে। হিমালয়ের বন্ধুর পার্বত্য অঞ্চলে এমন কিছু বসতি আছে যেখানকার এক অঞ্চলের উপত্যকার অধিবাসীদের সঙ্গে অন্যদিকের উপত্যকাবাসীদের সারা জীবনে দেখা সাক্ষাৎ হয় না। এই ধরনের বসতিগুলাে বিক্ষিপ্ত বসতির পর্যায়ে পড়ে। বিক্ষিপ্ত বসতির বৈশিষ্ট্যগুলাে হলাে :

(ক) দুটি বাসগৃহ বা বসতির মধ্যে যথেষ্ট ব্যবধান।
(খ) অতি ক্ষুদ্র পরিবারভুক্ত বসতি।


গ) অধিবাসীদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিচ্ছিন্নতা

বিক্ষিপ্ত বসতি গড়ে ওঠার পেছনে কতগুলো প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক কারণ কাজ করে । পৃথিবীর অধিকাংশ বিক্ষিপ্ত বসতি বন্ধুর ভূ-প্রাকৃতিক অঞ্চলের গড়ে উঠেছে । বন্ধুর ভূপ্রকৃতিতে যেমন কৃষিকাজের জন্য সমতলভূমি পাওয়া যায় না, তেমনি এখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা ও কষ্টসাধ্য। বিক্ষিপ্ত বসতি গড়ে ওঠার অন্যতম কারণ জলাভাব , জলাভূমি ও বিল অঞ্চল গঠিত ভূমি ভাগ, বনভূমি, অনুর্বর মাটি অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিক্ষিপ্ত বসতি জন্ম দেয় ।


৩। রৈখিক বসতিঃ এ ধরনের বসতিতে বাড়িগুলো একই সরলরেখায় গড়ে ওঠে। প্রধানত প্রাকৃতিক এবং কিছু ক্ষেত্রে সামাজিক কারণ এ ধরনের বসতি গড়ে উঠতে সাহায্য করে । নদীর প্রাকৃতিক বাদ নদীর কিনারা রাস্তার কিনারা প্রভৃতি স্থানে এ ধরনের বসতি গড়ে ওঠে। এই অবস্থায় গড়ে ওঠা পুঞ্জিভূত ধরনের গুলোর মধ্যে কিছুটা ফাঁকা থাকে । ফাঁকা স্থানটুকু ব্যবহৃত হয় খামার হিসাবে ।









Leave a Comment