বসতি স্থাপনের নিয়ামক (Factors of settlement)
১। ভূপ্রকৃতি : জনবসতি গড়ে ওঠার পেছনে ভূপ্রকৃতি ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করে। সমতলভূমিতে কৃষিকাজ সহজে করা যায়, কিন্তু পাহাড় এলাকার ভূমি অসমতল হওয়ায় কৃষিকাজ করা তেমন সম্ভব হয় না। ফলে যাতায়াতের সুবিধার জন্য কৃষিজমির নিকটে জনবসতি তৈরি হয়। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে বসতির ঘনত্ব সমতলভূমির তুলনায় কম। ২। পানীয় জলের সহজলভ্যতা : জীবন ধারণের জন্য মানুষের প্রথম ও প্রধান চাহিদা হলাে বিশুদ্ধ পানীয় জল। এজন্যই নির্দিষ্ট জলপ্রাপ্যতার স্থানে মানুষ বসতি গড়ে তােলে। মরুময় এবং উপমরুময় অঞ্চলে ঝরনা অথবা প্রাকৃতিক কূপের চারদিকে মানুষ সংঘবদ্ধ হয়ে বসতি স্থাপন করে। পানীয় জলের প্রাপ্যতার উপর | নির্ভর করে গড়ে ওঠা এই সমস্ত বসতিকে আর্দ্র অঞ্চলের বসতি বলে।
৩। মাটি : মাটির উর্বরা শক্তির উপর নির্ভর করে বসতি স্থাপন করা হয়। উর্বর মাটিতে পুঞ্জীভূত জনবসতি গড়ে ওঠে, কিন্তু মাটি অনুর্বর হলে বিক্ষিপ্ত জনবসতি গড়ে ওঠে। মাটির প্রভাবে জার্মানি, পােল্যান্ড, নরওয়ে, সুইডেন প্রভৃতি দেশে বিক্ষিপ্ত জনবসতির সৃষ্টি হয়েছে। ৪। প্রতিরক্ষা : প্রাচীনকালে প্রতিরক্ষার সুবিধার জন্যই মানুষ পুঞ্জীভূত বসতি স্থাপন করে। বহিরাগত শত্রুর আক্রমণ বা বন্যজন্তুর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মানুষ একত্রে বসবাস করত। কারণ প্রাচীনকালে আত্মরক্ষার জন্য কোনাে আধুনিক অস্ত্রের প্রচলন ছিল না।
৫। পশুচারণ : পশুচারণ এলাকায় সাধারণত ছড়ানাে বসতি দেখা যায়। পশুচারণের জন্য বড় বড় এলাকার দরকার হয়। ফলে নিজেদের সুবিধার জন্য তারা বিক্ষিপ্তভাবে বসতি স্থাপন করে থাকে।
গ) অধিবাসীদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিচ্ছিন্নতা
বিক্ষিপ্ত বসতি গড়ে ওঠার পেছনে কতগুলো প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক কারণ কাজ করে । পৃথিবীর অধিকাংশ বিক্ষিপ্ত বসতি বন্ধুর ভূ-প্রাকৃতিক অঞ্চলের গড়ে উঠেছে । বন্ধুর ভূপ্রকৃতিতে যেমন কৃষিকাজের জন্য সমতলভূমি পাওয়া যায় না, তেমনি এখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা ও কষ্টসাধ্য। বিক্ষিপ্ত বসতি গড়ে ওঠার অন্যতম কারণ জলাভাব , জলাভূমি ও বিল অঞ্চল গঠিত ভূমি ভাগ, বনভূমি, অনুর্বর মাটি অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিক্ষিপ্ত বসতি জন্ম দেয় ।
৩। রৈখিক বসতিঃ এ ধরনের বসতিতে বাড়িগুলো একই সরলরেখায় গড়ে ওঠে। প্রধানত প্রাকৃতিক এবং কিছু ক্ষেত্রে সামাজিক কারণ এ ধরনের বসতি গড়ে উঠতে সাহায্য করে । নদীর প্রাকৃতিক বাদ নদীর কিনারা রাস্তার কিনারা প্রভৃতি স্থানে এ ধরনের বসতি গড়ে ওঠে। এই অবস্থায় গড়ে ওঠা পুঞ্জিভূত ধরনের গুলোর মধ্যে কিছুটা ফাঁকা থাকে । ফাঁকা স্থানটুকু ব্যবহৃত হয় খামার হিসাবে ।
Leave a Comment