এইচএসসি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ১১শ শ্রেণির ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা ১ম পত্র ১ম অ্যাসাইনমেন্টের সমাধান ২০২১|HSC Open University 11th Class Business Organization and Management 1st Paper 1st Assignment Solution 2021


বাংলাদেশের শিল্প, বাণিজ্য ও প্রত্যক্ষ সেবার সমস্যা ও সম্ভাবনা বিশ্লেষণ করুন।

Hsc উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ১১শ
শ্রেণির ব্যবসায় সংগঠন ও
ব্যবস্থাপনা ১ম পত্র ১ম
অ্যাসাইনমেন্টের সমাধান ২০২১

বাংলাদেশে ব্যবসায় তথা শিল্প, বাণিজ্য ও প্রত্যক্ষ সেবার অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সমস্যাও আছে অনেক। আবার দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যবসায়ের সম্ভাবনা ও সমস্যা সমান নয়। কেননা দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ সব এলাকায় একই ধরনের নেই। এছাড়া বন্দর যােগাযােগসহ সামগ্রীক পরিবেশ দেশের এক অঞ্চলের চাইতে
অন্য অঞ্চলে ভিন্ন। দেশের এ অঞ্চলে সব সুবিধাদি আছে অন্য অঞ্চলে দেখা যায় সে সকল সুবিধা নাই। তাই শিল্প, বাণিজ্য ও প্রত্যক্ষ সেবার সম্ভাবনা ও সমস্যা দেশের সর্বত্র সমান নয়।

বাংলাদেশে শিল্প: সমস্যা ও সম্ভাবনা: বাংলাদেশ শিল্পে অনুন্নত একটি দেশ। এদেশের বৃহৎ শিল্পগুলাে সরকারী উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত হলেও ব্যবস্থাপনাগত সীমাবদ্ধতার
কারণে এগুলাের অধিকাংশই আজ অঙুিত্বের সংকটে জর্জরিত। মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্প খাতে স্থাপিত তার অধিকাংশই ব্যক্তি মালিকানাধীন এবং দেশী বিদেশী যৌথ মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত। এসব মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্পের উৎপাদিত পণ্য
জনগণের চাহিদা মিটিয়ে দেশের অর্থনৈতিক চাকাকে গতিশীল রাখছে।

এদেশের পােশাক শিল্পের উৎপাদিত পণ্য ইউরােপ
আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয় এবং দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডারকে স্ফীত থেকে স্ফীততর করছে।

তবে এদেশের শিল্প খাত আরাে দ্রুত সম্প্রসারিত হতে পারত। বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে এসব শিল্পের সম্প্রসারণ প্রতিনিয়ত বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। মূলত মূলধনের অপ্রতুলতা, উচ্চ হারে ব্যাংক সুদ, অবকাঠামােগত সমস্যা, দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি, মালিকানা থেকে ব্যবস্থাপনার পৃথকীকরণ, সর্বোপরি মাঝে মাঝে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এদেশের শিল্পায়ন ও সম্প্রসারণে প্রধান অরায় হিসাবে কাজ করছে।

এছাড়া ব্যবসায়ীদের মতে সরকারী নীতিমালার ঘন ঘন পরিবর্তনও শিল্প উন্নয়নে বাধা হিসেবে কাজ করছে। তারপরও এ দেশে শিল্প খাতে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এদেশ প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ একটি দেশ। এদেশে রয়েছে
বিপুল জনগােষ্ঠী এবং সঞ্জু শ্রম। বিপুল জনগােষ্ঠী পণ্যের বাজারে যেমন আমাদের নিশ্চয়তা দেয়।

তেমনি আমাদের বিপুল দক্ষ অদক্ষ শ্রম শক্তি শিল্প উৎপাদনকে বেগবান করতে সহায়তা করবে এ ব্যাপারেও নিশ্চয়তা দেওয়া যায়। প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ হওয়ায় এদেশে বিভিন্ন শিল্পের
কাঁচামালে যেমন সহজলভ্যতা আছে তেমনি শিল্পের ঐতিহাসিক সুনামও এদেশের রয়েছে। আশার বিষয় হলাে ইদানিং যােগাযােগ ব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নয়নের ফলে ব্যবসায় বাণিজ্যের প্রসার ঘটছে দ্রতগতিতে, ফলে কর্মসংস্থান হচ্ছে।

সাথে সাথে মানুষের আয় ও ভােগ প্রবণতা বাড়ছে। এছাড়াও পােশাক শিল্পের বিভিন্ন শিল্প কারখানার সহায়ক শিল্পের উন্নয়নের ফলে শিল্পায়নের গতি ত্বরান্বিত হচ্ছে। তাই আশা
করা যায় শিল্প খাতে সমস্যাগুলাে দূর করে অদূর ভবিষ্যতেই আমরা একটি শিল্পে উন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে দেখতে পাব।

বাংলাদেশে বাণিজ্য ও সমস্যা ও সম্ভাবনা: বাংলাদেশে বাণিজ্য অগ্রসরমান হলেও আমরা কাংখিত অগ্রগতি লাভ করতে পারিনি। শিল্প খাতের দুর্বল অবস্থা বাণিজ্যের অগ্রযাত্রাকে প্রভাবিত করেছে। বিপুল জনসংখ্যার দেশ ও
মাথাপিছু আয় কম হওয়ায় নিত্য প্রয়ােজনীয় দ্রব্যাদি ছাড়া অন্যান্য পণ্যের বাজার তেমন বিড়ত নয়। তবে আশার বিষয় হলাে ইদানিং রাঘাটের উন্নতি হওয়ায় গ্রামে-গঞ্জে দোকানপাট গড়ে উঠেছে।

মানুষের আয় কিছুটা বৃদ্ধি পাওয়ায় ভােগ প্রবণতা বাড়ছে। ফলে অভ্যড়রীন বাজার সম্প্রসারিত হওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আমদানি নির্ভরতা এখনও লক্ষণীয়।

খাদ্যদ্রব্য ক্রয়ে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা বিগত সময়ে ব্যয় হলেও এ প্রবণতা ইদানিং কমেছে। মুলধনী যন্ত্রপাতি, জ্বালানি তৈল, সয়াবিন, গার্মেন্টস শিল্পের জন্য কাপড় ও অন্যান্য সামগ্রী আমাদের আমদানির প্রধান খাত।

গামেন্টর্স ও নীটওয়ার সামগ্রী, পাট ও পাটজাত দ্রব্য, চামড়া ইত্যাদি পণ্য এ দেশ থেকে বিদেশে রপ্তানি করা হয়।

বাংলাদেশে বাণিজ্যের উন্নয়নে যে সকল সমস্যা লক্ষ্যণীয় তা নিম্নরূপঃ
  1. মূলধনের সীমাবদ্ধতা
  2. ব্যবসায়ীদের সততা ও দক্ষতার অভাব।
  3. ব্যবসায়ীদের অতিমুনাফা লাভের প্রবণতা ;
  4. বৈশ্বিক প্রতিযােগিতায় দুর্বল অবস্থান ;
  5. অবকাঠামােগত সমস্যা ;
  6. দুর্নীতি ও সন্ত্রাস এবং চাঁদাবাজ ;
  7. দ্রব্যমূল্যের উপর সরকারী নিয়ন্ত্রনের অভাব
  8. রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ;
  9. ব্যবসায়বান্ধব পরিবেশের অনুপস্থিতি ইত্যাদি ।
বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিদ্যমান উপরােক্ত সমস্যাবলী দূর করা গেলে এক্ষেত্রে বিদ্যমান সুবিধাসমূহ কাজে লাগানাে সম্ভব। বিশেষ করে গার্মেন্টস, ঔষধ, জাহাজ নির্মাণ ইত্যাদি শিল্পে দ্রত অগ্রগতি অর্জন করা সম্ভব হলে দেশের রপ্তানি আয়ের
পরিমাণ অনেক বৃদ্ধি পেতে পারে।

বিদেশে জনশক্তি রপ্তানি আরও বৃদ্ধি করা গেলে তা গ্রামীণ মানুষের আয় ও ভােগ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে। এতে দেশের সার্বিক বাণিজ্য চিত্রেই পরিবর্তন আসবে বলে আশা করা যায়।

এছাড়া চীনের ব্যবসায়ীরা ইদানিং গার্মেন্টস শিল্প থেকে পুঁজি অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার প্রতি যেভাবে ঝুঁকছে তাতে এ খাতে রপ্তানি আয় আরও বাড়তে পারে। তবে সকল সম্ভাবনা কাজে লাগাতে সরকারকেই এক্ষেত্রে মূখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে।

বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ: সেবা ও সমস্যা ও সম্ভাবনা প্রত্যক্ষ সেবা বলতে সেসব কর্মকে বুঝায় যা ভােক্তা বা ক্রেতাকে অর্থের বিনিময়ে সরাসরি প্রদান করা হয়। মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে এরূপ কাজ বা সুবিধা অন্যের নিকট বিক্রয় করা হয়।
যেমন টেলিফোন, মােবাইল, বিদ্যুত বিভাগ, ওয়াসা, ডিস এন্টেনা, টিভি ফ্রিজ, কম্পিউটার, নিরাপত্তা বাহিনী, গ্যাস সরবরাহকারী সংস্থা, এদের প্রদত্ত সেবা দৃশ্যমান নয়, তবে ভােক্তা বা ক্রেতা তৃপ্ত সন্তুষ্ট হয়।


এগুলাে প্রত্যক্ষ সেবার প্রকৃত উদাহরণ। এটি নিঃসন্দেহে ব্যবসায়ের একটি গুরত্বপূর্ণ অঙ্গ, প্রত্যক্ষ সেবার মাধ্যমে ভােক্তা বা সেবা গ্রহিতা তৃপ্ত হয় বা উপকৃত হয়। আমাদের দেশে ইদানিং অনেক প্রত্যক্ষ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে
উঠেছে। সরকারের নীতিগত কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে এটির তেমন উন্নয়ন এখনাে চোখে পড়েনি।

যেমন আমাদের প্রতিবেশী প্রতিটি দেশে যখন দ্রতগতির ইন্টারনেট সেবার জন্য সাগরের তলদেশ দিয়ে ফাইবার অপটিকের সাথে সংযুক্ত হয়েছে তখন আমাদের আমলাতান্ত্রিক লাল ফিতার দৌরাত্বের জন্য সিদ্ধান্ডু গ্রহনে অনেক সময় লেগেছে।

এভাবে আমরা বিভিন্নভাবে সরকারি নৈতিক, আইনগত সমর্থন যথাসময়ে না পাওয়ার কারণে প্রত্যক্ষ সেবাখাতে বিদেশী বা প্রতিবেশী দেশগুলাের তুলনায় পিছিয়ে আছি। এছাড়া
ব্যবসায়ীদের দক্ষতার অভাবকেও হালকা করে দেখার কোনাে সুযােগ নাই। সর্বোপরি প্রত্যক্ষ সেবাখাতে বিনিয়ােগের জন্য মূলধনের স্বল্পতাও কম দায়ী নয়।

তথাপিও আমাদের এ পর্যড় এ খাতে যেসব অগ্রগতি হয়েছে তাকেও কম বলা যাবে না। উপরে বর্ণিত সমস্যাগুলাে দূর করতে পারলে শিগগীরই এ খাতে ব্যাপক উন্নয়ন সম্ভব বলে আমাদের
বিশ্বাস। কেননা দিন দিন আমাদের তরুন প্রজন্ম তথ্য প্রযুক্তির সাথে একাত্ম হচ্ছে এবং এখাতে জনগােষ্ঠীর একটি বৃহৎ অংশ দক্ষ হয়ে গড়ে উঠেছে।

এমন কি দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলাে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে নতুন নতুন বিভাগ খুলে ছাত্রদের এ বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান লাভের সুযােগ করে দিচ্ছে। এছাড়া এসব সেবা খাতে দেশী বিদেশী ব্যাপক বিনিয়ােগ দিন দিন যুক্ত হচ্ছে বিধায় মূলধনের সমস্যাও কিছুটা লাঘব হচ্ছে।

আর বর্তমানে ইন্টারনেটের সহযােগিতায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের কর্মকান্ড প্রত্যক্ষ করে দেশীয় উদ্যোক্তারা এখানে সর্বোত্তম সেবা দিতে এগিয়ে এসেছে। তার নমুনা হিসাবে বিভিন্ন ব্যাংক, বীমা, টেলিফোন, ওয়াসা ও বিদ্যুৎ বিভাগের ২৪ ঘন্টা গ্রাহক সার্ভিস প্রদান অন্যতম।

সর্বোপরি পর্যাপ্ত শিক্ষা, সচেতনতা, জবাবদিহিতার
উন্নয়নের মাধ্যমেই প্রত্যক্ষ সেবা খাতের উন্নয়ন দ্রততর সময়ে দৃশ্যমান হবে এটি বর্তমান প্রজন্মের প্রত্যাশা।

 ব্যবসায় উদ্যোগ ১ম সপ্তাহের ২য় এসাইনমেন্ট উত্তর পেতে নিচের বাটনে ক্লিক করুন

Click here

Leave a Comment